এক কিংবদন্তির বিদায়
‘টেস্ট ক্রিকেট এক জন ক্রিকেটারের দক্ষতার পরীক্ষা নেয় এবং তার প্রকৃত চরিত্রকে প্রকাশ করে।’- কথাটি বলেছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার জেমস অ্যান্ডারসন। ক্যারিয়ার জুড়ে মূলত টেস্ট ক্রিকেটটাই খেলেছেন এই কিংবদন্তি ইংলিশ পেসার। বল হাতে কত রেকর্ড যে অ্যান্ডারসন নিজের নামে করেছেন তার সঠিক হিসেব হয়ত তিনি নিজেও জানেন না। আজ লাল বলের ক্রিকেটে শেষবারের মতো ২২ গজে খেলতে নামা হয়ে গেল তার।
ক্যারিয়ারের শুরুটা তিনি করেছিলেন ঘরের মাঠ লর্ডসে। অভিষেক টেস্ট ইনিংসেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তুলে নিয়েছিলেন ফাইফার। তখনই নজর কেড়েছিলেন বিশ্ব ক্রিকেট মঞ্চে। এরপর ইংল্যান্ডের হয়ে দীর্ঘ ২১ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন মোট ১৮৮ টেস্ট ম্যাচ, ডেলিভার করলেন ৪০,০৩৭ বল এবং শিকার করলেন ৭০৪ উইকেট। যেকোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটে তৃতীয় এবং পেসার হিসেবে টেস্ট উইকেট শিকারের দিকে প্রথম অবস্থানে থেকেই শেষ করলেন নিজের বর্ণিল ক্যারিয়ার।
আজ (শুক্রবার) লর্ডসের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের বিদায়ী টেস্টে মোট ৪ উইকেট শিকার করেছেন ৪১ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটাতেও জয়ের দেখা পেলেন জিমি। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইনিংস ও ১১৪ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে বেন স্টোকসের দল।
বিদায়ী টেস্টে জয় তুলে নেওয়ার পর অ্যান্ডারসন বলেন, ‘আমি চোখের পানি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এত বছর একজন পেসার হিসেবে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। পুরো ক্যারিয়ারের ভালো ও খারাপ সময়ে আমার পরিবার, মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান এবং সতীর্থরা পাশে ছিলেন। আমি এই ২১ বছরের ক্যারিয়ারটির উপভোগ করে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি।’
ক্যারিয়ার জুড়ে টেস্ট ক্রিকেটে ২.৭৯ ইকোনোমিতে বল করেছেন এই ইংলিশ তারকা পেসার। পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন ৩২ বার। দশ উইকেট তুলে নেওয়ার কীর্তিও আছে ৩ বার। তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস হলো ৭-৪২, আর সেরা ম্যাচ হিসেব করলে সেটা ১১-৭২। ব্যাট হাতে অ্যান্ডারসনের মোট সংগ্রহ ১৩৫৩ রান, এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮১ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
বিদায় বেলায় তাকে অনন্য সম্মান দিল-লর্ডস ক্রিকেট মাঠের স্বত্বাধিকারী ও ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। ‘অনারারি’ আজীবন সদস্য করা হলো তাকে। বিদায়ী টেস্টের পর তার হাতে সদস্যপদ ও সম্মাননা তুলে দেন এমসিসির প্রেসিডেন্ট মার্ক নিকোলাস।
লাল বলের ক্রিকেটকে আপন করে নেওয়া জেমস অ্যান্ডারসন একজনই। স্বল্প ফরম্যাটের ক্রিকেটের এই প্রজন্মে আরেকজন জিমিকে ক্রিকেট বিশ্ব সম্ভবত আর পাবে না। তবে ক্রিকেট প্রেমীদের মনে এবং ফাস্ট বোলারদের আদর্শ হিসেবে অ্যান্ডারসন থাকবেন চিরকাল। লর্ডসের দেয়ালে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে জেমস মাইকেল অ্যান্ডারসনের নাম।