‘আনহেল ডি মারিয়া আপনাকে কুর্নিশ’

‘আনহেল ডি মারিয়া আপনাকে কুর্নিশ’

আর্জেন্টিনার সর্বজয়ের কুশীলব আনহেল ডি মারিয়া। সেই ডি মারিয়া চলে এসেছেন ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ দিকে। তিনি জানিয়েও দিয়েছেন, কোপা আমেরিকার ফাইনালই হচ্ছে আর্জেন্টিনার জার্সিতে তার সবশেষ ম্যাচ। 

তার বিদায়বেলায় আর্জেন্টিনার ভক্তসমর্থকদের সবাই ভাসছেন আবেগের ভেলাতে। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও আর্জেন্টিনা সমর্থক। তিনিও ব্যতিক্রম নন। আনহেল দি মারিয়ার বিদায়ের ঠিক আগে তিনি বিশাল এক পোস্ট লিখেছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে নিয়ে। আবেগের কালিতে করেছেন পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন। 

মাশরাফি পোস্টটা করেছেন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। স্পোর্টস বাংলার পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো– 

‘আনহেল ডি মারিয়া তার শেষ ম্যাচ খেলতে নামছেন। স্বাভাবিকভাবে আর্জেন্টিনা দল চাইবে ট্রফি জিতে তাকে দারুণ একটা বিদায় দিতে। আনহেল কি করেছে আর্জেন্টিনার জন্য, তা চিন্তা করলে মনে হয় শুধু মেসির কারণে সে সবসময় চোখের আড়ালে থেকে গেছে।

বেশি দূরে যেতে হবেনা, ২০১৪ বিশ্বকাপে তার ইনজুরির দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এমন কি মেসিও ফাইনালে কিছুই করতে পারেনি, কারণ ডি মারিয়া মাঠে না থাকলে ডিফেন্ডারদের মেসিকে মার্ক করা কিছুটা সহজ হয়ে যায়। সেদিন ফাইনালে লাভেজ্জি তাও বেশ ভালো খেলছিলো যে কারণে বেশ কিছু সুযোগ আর্জেন্টিনা তৈরিও করেছিলো, এমনকি লাভেজ্জির একটা ক্রস থেকে হিগুয়েন গোল করলেও তা অফসাইড হয়। হাফটাইমের পর কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়া লাভেজ্জিকে উঠিয়ে আগুয়েরোকে মাঠে নামালো স্রেফ বড় নামের কারণে। ব্যস আর্জেন্টিনার আক্রমণ শেষ হয়ে গেল। অথচ ডি মারিয়া থাকলে বিষয়টা পুরো ভিন্ন হতে পারতো। কোপার ফাইনালে ব্রাজিলকে গোল করা বা বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে গোল করা এগুলো বলাই যায়। 

তবে ডি মারিয়া ছাড়া মেসি বা আর্জেন্টিনা কতটা দূর্বল তা বোঝার জন্য শেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখলেই বোঝা যায়। ৭০ মিনিটের পর ডি মারিয়াকে উঠিয়ে নিলেন স্কালোনি, ব্যস ফ্রান্স একের পর এক আক্রমণ শুরু করল এবং দুই গোলই শোধ করে ফেলল। অথচ ডি মারিয়া মাঠে থাকতে ফ্রান্স মেসি এবং ডি মারিয়া দুজনকেই মার্কে রাখতে হচ্ছিলো, যার কারণে তারা অলআউট চাইলেও খেলতে পারছিল না। এমনকি আর্জেন্টিনা এই বিশ্বকাপে নক আউটে অলমোস্ট সব ম্যাচেই গোল খেয়েছে ডি মারিয়া মাঠ ছাড়ার পর। এমনকি ১০১৮ বিশ্বকাপে এই ফ্রান্সের কাছেই ৪-৩ গোলে হেরেছিল, কিন্তু প্রথম গোল পেনাল্টিতে গ্রিজম্যান যখন দেয় ঠিক তার কিছুক্ষণ পর ডি মারিয়া ডি বক্সের বাহিরে থেকে দারুণ এক রেইনবো কিকে সমতায় ফিরেয়েছিলেন আর্জেন্টিনাকে। এরকম অনেক অনেক দারুণ সব স্মৃতি তিনি মাঠে ছেড়ে যাচ্ছেন, শুধু তাই না মেসির পিক টাইমেই, ডি মারিয়া ছাড়া মেসিকে অনেক ম্যাচ নিস্প্রাণ মনে হয়েছে, আর মেসির শেষ সময়ে যখন মেসি তার সেই গতি হারিয়েছে তখন ডি মারিয়া ছাড়া কি করবে তা সময়ই বলে দিবে। তবে একটা বিষয় অবশ্যই বলা উচিত যে এই দলটা অনেকটাই মেসি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠেছে, প্রায় ম্যাচেই অন্যরা গোল করছে এবং ভালোও খেলছে, স্কালোনির সবচেয়ে বড় আবিস্কার সম্ভবত এটাই।

আনহেল ডি মারিয়া আপনাকে কুর্নিশ, একজন অন্ধ আর্জেন্টাইন ফুটবলের সমর্থক হিসেবে। আপনি অবশ্যই গুরু ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরি।আপনাকে ভোলা প্রায় অসম্ভব।’

সম্পর্কিত খবর