এমন বিদায়ের স্বপ্নই তো দেখেছিলেন দি মারিয়া!
‘এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে/ সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে/গভীর ক্রন্দন--"যেতে নাহি দিব'। হায়,/তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।’— আর্জেন্টিনার রেকর্ড কোপা জয়ের আনন্দের মাঝেও বিষাদের বিউগল বাজিয়ে যাচ্ছে এ সুর। কোপা আমেরিকার ফাইনাল দিয়ে বিদায় যে বলে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার অনেক সাফল্যের কুশীলব আনহেল দি মারিয়া!
ফাইনাল মানেই দি মারিয়ার গোল। আজকের আগ পর্যন্ত এটা যেন বেদবাক্যই ছিল রীতিমতো। হবেই বা না কেন? ফাইনালে পুরো ফিট হয়ে খেলেছেন, আর গোল করেননি, এমন কিছু যে দি মারিয়ার অভিধানে ছিল না। ২০০৮ অলিম্পিক, ২০২১ কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমা, ২০২২ বিশ্বকাপ… সব ফাইনালেই গোল আছে তার।
তবে সে ধারার ব্যত্যয় ঘটল আজ। গোল পেলেন না। তাতে কী, শিরোপাটা তো পেয়ে গেছেন! আর তাতেই মন ভরে গেছে দি মারিয়ার। বিদায়বেলার নৈবেদ্যটা যে পেয়ে গেছেন তিনি!
অথচ এই চার বছর আগের দৃশ্যগুলোর কথা ভাবুন। দুই দিন আগে দশ বছর পূর্তি হলো প্রথম ঘটনাটার, মারাকানার ওই ফাইনাল শেষে হাপুস নয়নে কেঁদেছিলেন, দৃশ্যটা পরের দুই বছরও বদলায়নি খুব একটা। সেই সময় বসে যখন বিদায়ের কথা কল্পনা করতেন, তখন কী ভাবতেন?
আজ সুখের দিনে বিদায়ের সময় জানালেন আনহেল, যা দেখছেন, সেটাই ভেবেছি। তার কথা, ‘এটাই হয়তো ভাগ্যের লিখনে ছিল। এমন কিছুর স্বপ্নই দেখতাম সবসময়। আমি ছেলেদের এ কথা বলেছিও। আজ যখন বিদায় নিচ্ছি, শরীরে-মনে সুখানুভূতি নিয়েই বিদায় নিচ্ছি আমি।’
এ পথটা অবশ্য সহজ ছিল না। একটা সময় ছিল যখন আর্জেন্টিনাকে শিরোপার ছোঁয়া এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন নিয়মিত। সেটা সম্ভব হলো ক্যারিয়ার সায়াহ্নে এসে। যে প্রজন্মের সঙ্গে থেকে এ অর্জন সম্ভব হলো, তাদেরও ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না দি মারিয়া।
বললেন, ‘সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তো সহজ নয়। আমি গল্পটার অন্য পাশেই থাকতাম সবসময়, থাকতে হতো আমাকে। এই প্রজন্মটাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, তারা তাদের সবটুকু ঢেলে দিয়েছে, আমি যা চেয়েছি, তার ছোঁয়া পাইয়ে দিয়েছে। আমি আরও আগেই কিছু জিততে চেয়েছিলাম, আমি মনে করি তার যোগ্যও ছিলাম আমরা।’
দি মারিয়া চলে যাচ্ছেন। তবে মাথা উঁচু করে যাচ্ছেন। রাজার বেশে যাচ্ছেন। এমন দিনের স্বপ্ন তো সবাই দেখে!