গ্যালারিতে প্রতিবাদের ঝড়, শ্লোগান- ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’!

গ্যালারিতে প্রতিবাদের ঝড়, শ্লোগান- ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’!

জাতীয় সঙ্গীত বাজছে। মাঠে ইসরাইলি ফুটবল দল তাতে গলা মিলাচ্ছে। তবে সেই সুর ছাপিয়ে পুরো গ্যালারি থেকে যা বেশি শোনা গেল তাকে বলে, দুয়ো ধ্বনি! চারপাশের গ্যালারি থেকে তখন সব ছাপিয়ে সবার গলায় প্রতিবাদের ঝড়! একটাই শ্লোগান! একটাই আওয়াজ- প্যালেস্টাইনকে মুক্ত করো!

প্যারিস অলিম্পিকে ইসরাইলি ফুটবল দল এমন প্রতিবাদই দেখল প্রথমদিনে। এবারের অলিম্পিকে ২০০ দেশ থেকে সাড়ে ১০ হাজারের বেশি ক্রীড়াবিদ অংশ নিচ্ছেন। যে আসরে ইসরাইলের ক্রীড়াবিদের সংখ্যা ৮৮ জন। তবে এই ৮৮ জনের জন্য বলা যায় নজিরবিহীন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করেছে ফ্রান্স পুলিশের বিশেষ এলিট ইউনিটের একটি প্রশিক্ষিত দল ঘড়ির কাঁটা ধরে তাদের নিরাপত্তায় নিয়েজিত রয়েছে। ক্রীড়াবিদদের নিরাপত্তার জন্য ইসরাইলের নিজস্ব একটি নিরাপত্তা রক্ষী দলও রয়েছে।

গাজায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও ধংসলীলা চালিয়ে যুদ্ধবাজ ইসরাইল সরকার প্রায় ৩৯ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। দাবি উঠেছিল এবারের অলিম্পিক গেমসে ইসরাইলকে নিষিদ্ধ বা বয়কট করার। কিন্তু আর্ন্তজাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) সেই সাহস দেখায়নি। অথচ ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের অভিযোগ তুলে ঠিকই তারা রাশিয়া ও বেলারুশকে এবারের অলিম্পিক থেকে বাইরে রাখে।

ক্রীড়ার চেতনা বা স্পিরিট বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো দেশ বা প্রতিযোগী জড়িত থাকলে তাদের এই ক্রীড়াযজ্ঞে নিষিদ্ধ করার অনেক উদাহরণ আগে রেখেছে আইওসি। কিন্তু ইসরাইলের বিষয়ে তারা এবার নমনীয় আচরণ দেখায়! অথচ ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আর্ন্তজাতিক আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলার বিচারকাজও চলছে। পুরো প্যালেস্টাইন জুড়ে নির্বিচারে বোমাবাজি করে ইসরাইল হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এমনকি হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে তারা। পরিস্কার গনহত্যার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। তবুও রহস্যজনকভাবে আইওসি নিরবতা দেখিয়ে ইসরাইলকে অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে।

যুদ্ধ, মাদক, রাজনৈতিক অবস্থান এবং আইওসির নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এর আগে অনেক দেশকে অলিম্পিকের আসরে অংশগ্রহণে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সর্বপ্রথম এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ১৯২০ সালে বেলজিয়ামের অ্যানট্রিপে গ্রীস্মকালীন অলিম্পিকে। সেবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জড়িত থাকার দায়ে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া ও তুরস্ককে অলিম্পিকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। এই একই অভিযোগে চার বছরের পরে ১৯২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকেও জার্মানিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

১৯৪৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকে জার্মানি ও জাপানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িত থাকার কারণ দেখিয়ে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। বর্ণবাদ প্রথা ও জাতিগত বিভক্তির অভিযোগে অভিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কোনো অলিম্পিকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। ১৯৭২ সালে এই একই অভিযোগে জিম্বাবুয়েকে (তখন দেশটির নাম ছিল রোডেশিয়া) মিউনিখ অলিম্পিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

২০০০ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকে আফগানিস্তানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তালেবান শাসন এবং নারী অধিকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের কারণে আইওসি এই ব্যবস্থা নিয়েছিল। প্যারিস অলিম্পিকে এবার আফগানিস্তান অংশ নিচ্ছে। তবে এই অ্যাথলিট দলটি আফগানিস্তানের বর্তমান শাসক দলের তালেবান পতাকা বহন করছে না। বিভিন্ন দেশে প্রবাসী আফগানি নাগরিকদের একটি দল ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের লাল, সবুজ ও কালো পতাকা নিয়ে প্যারিস অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে। এছাড়া কুয়েত, উত্তর কোরিয়াও বিভিন্ন কারণে অলিম্পিকে নিষিদ্ধ হয়েছিল।

এবারের অলিম্পিকে সবমিলিয়ে ২০৪ দেশ অংশ নিচ্ছে। প্রতিযোগির সংখ্যা ১০,৫০০। ইভেন্ট ৩২৯। ভেন্যু ৩৫ এবং খেলার সংখ্যা ৩২।

সম্পর্কিত খবর