নতুন যুগেও সেই ‘পুরোনো’ ভারত
বিশ্বকাপের শেষেই বলাবলি হচ্ছিল, ভারতের ক্রিকেটে একটা যুগের শেষ হলো। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের মতো মহীরুহ যখন বিদায় নেবেন একটা ফরম্যাট থেকে, তখন তা না বলে কি আর উপায় আছে? তবে নতুন যুগেও টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত দেখা দিল তাদের পুরোনো রূপেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পেল ৪৩ রানের ব্যবধানে।
‘বাবুমশায়, জীবন বড় হওয়া চাই, লম্বা নয়’ – বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষে রোহিত শর্মা যা বলেছিলেন, তা ‘আনন্দ’ সিনেমার আনন্দের এই উক্তির সঙ্গে ভালোভাবেই মিলে যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, ভারতের টি-টোয়েন্টি টেমপ্লেটটাই এখন এমন, লম্বা ইনিংস নয়, ‘বড়’ ইনিংসই এখন দলের প্রাণ। তাতে ভর করে ভারত বিশ্বকাপ জিতেছে। বিশ্বকাপ শেষেও সে টেমপ্লেটে বদল আসেনি খুব একটা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সেদিন ভারতের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা ছিল ৫০ রানের, তবু ১৯৬ রান তুলে ইনিংস শেষ করেছিল ভবিতব্য বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও তেমন পারফর্ম্যান্সেরই দেখা মিলল। সর্বোচ্চ ইনিংসটা ‘মোটে’ ৫৮ রানের। সেটা করলেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। তার এই রান এসেছে মোটে ২৬ বলে, স্ট্রাইক রেটটা আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছিল আরেকটু হলে, ২২৩+! শুভমান গিল আর যশস্বী জয়সওয়ালও খুব বেশি পিছিয়ে নেই, দুজন করেছেন যথাক্রমে ৩৪ আর ৪০, তাদের স্ট্রাইকরেটও ২১২ আর ১৯০!
শেষ দিকে নামা ঋষভ পান্ত অবশ্য শুরুতে খানিকটা ধীরগতির ছিলেন। তবে শেষে তিনিও গতিটা ধরে ফেললেন। ৩৩ বলে করলেন ৪৮, টি-টোয়েন্টিতে এমন একটা ইনিংসও পেলে বর্তে যায় অনেক দলই। সেখানে ভারতের কাছে ইনিংসটা দৃষ্টিকটু ঠেকতে পারে খানিকটা। দলটার টেমপ্লেটটাই যে এমন! তাতে ভর করে ভারত ইনিংস শেষ করে ২১৩ রানের পাহাড় গড়ে।
পাল্লেকেলের রানপ্রসবা উইকেটে শ্রীলঙ্কাও শুরুটা মন্দ করেনি। দুই ওপেনার মিলে রান তুলেছেন দেড়শোরও বেশি স্ট্রাইক রেটে, ওপেনিং জুটি থেকে এসেছে ৮৪ রান। তবু দলটা একটু একটু করে রান তাড়ায় পিছিয়ে পড়ছিল। কারণ, ওই যে ভারতের ‘টেমপ্লেট’! ভারতের শীর্ষ তিন ব্যাটার যেখানে বলের দ্বিগুণ রান করেছেন, সেখানে জবাব দিতে নেমে দেড়শ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেট নিয়ে খেললেও তো তা ‘ধীরগতির’ই হয়ে যায়!
ফলে যা হওয়ার ছিল, তাই হয়েছে। ধীরে ধীরে আস্কিং রেটটা আকাশে উঠে গেছে। সে চাপ সামলাতে লঙ্কানদের ইনিংস ভেঙে পড়েছে হুড়মুড়িয়ে, এই টেমপ্লেটটাও আপনার বেশ চেনা হওয়ার কথা। কুশল মেন্ডিস ২৭ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে দিয়ে যাওয়ার পর পাথুম নিসাঙ্কার ব্যাটে তবু কিছুটা আশা ছিল শ্রীলঙ্কার। ওপাশে কুশল পেরেরা ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বেশ। তবে দ্রুত রান তোলার চাপ সামলাতে না পেরে যেই না নিসাঙ্কা ফিরলেন ৪৮ বলে ৭৯ রান করে, শ্রীলঙ্কার আশারও সলিল সমাধি ঘটল ওখানেই।
এরপরের গল্পটা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার। অক্ষর পাটেল, আরশদীপ সিং, রবি বিষ্ণোই, মোহাম্মদ সিরাজ, রিয়ান পরাগরা মিলে কাজটা ভালোভাবেই সামলেছেন। তাতে শ্রীলঙ্কা শেষমেশ গুটিয়ে গেছে ১৭০ রান তুলতেই। আর ভারত সিরিজের প্রথম ম্যাচটা শেষ করেছে ৪৩ রানের দাপুটে এক জয় নিয়ে। সিরিজে এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
তবে এ জয় ছাপিয়ে দলটা বড় করে দেখতে পারে প্রক্রিয়া ধরে রাখার বিষয়টাকে। যে প্রক্রিয়া, যে টেমপ্লেট তাদের বিশ্বকাপ এনে দিয়েছে, তাতে আবারও বিশ্বাস রাখছে দলটা। ভারতের পাইপলাইনে যারা অপেক্ষায় আছেন, তাদের বহরটা জানান দিচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় দলটার আরও দাপুটে রূপটা অপেক্ষা করছে সামনে।