‘এই ব্যবধান না ঘোচালে আমরা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বেচারা হয়েই থাকবো’

‘এই ব্যবধান না ঘোচালে আমরা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বেচারা হয়েই থাকবো’

সেলিম শাহেদ

জাতীয় দলের সিনিয়রদের জায়গায় আমাদের ব্যাকআপ প্লেয়াররা আসছে, যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তেমনভাবে নিজের জায়গাটা সিমেন্টেড করতে পারছেন না। তামিম, সাকিব বা মুশফিকের মানের ব্যাকআপ প্লেয়ার তো আমরা এখনো পাইনি। তাই এখনো আমাদের এই সিনিয়রদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। এই কারণেই এখনো জাতীয় দল গঠনে তারাই অটোমেটিক চয়েস। তাদের জায়গায় বিভিন্ন সময়ে যাদের চিন্তা করা হয়েছিল বা সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সেই তরুণরা দলে নিজেদের জায়গাটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।

কেন তারা পারেনি? সেই প্রশ্নের উত্তরে অনেক যদি এবং কিন্তু আছে। বিশ্বের আরো অনেক দেশ যদি এভাবেই ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের উন্নতি করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারছি না, এই সোলসার্চিংটা বিসিবিকে করতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পারছে। আমরা কেন পারছি না।

দেখুন আমার কাছে মনে হয় যে কোনো জিনিসের সাফল্য নির্ভর করছে তার ইনপুটের ওপর। ইনপুট যদি ঠিক হয় তাহলে প্রসেস ভালো হবে। আবার প্রসেস যদি ভালো হয় তাহলে আউটপুট উন্নততর হবে। এই বিষয়ে আমার ব্যাখ্যা হলো আমাদের ইনপুট ঠিক আছে। কিন্তু আমরা প্রসেসে গিয়ে ঝামেলা বাধিয়ে ফেলি।

বয়সভিক্তিক ক্রিকেটে আমাদের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছে। অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আমরা চ্যাম্পিয়নও হয়েছি। কিন্তু অনুর্ধ্ব-১৯ এর পরের ধাপে আমরা সামনে বাড়তে পারছি না কেন? অনুর্ধ্ব-১৯ থেকে অনুর্ধ্ব-২৩ এই পর্যায়ে গিয়ে আমরা আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে তেমনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি না।

- কেন পারি না?

এই প্রশ্নের উত্তরও খুব অজানা কিছু নয়। এই পর্যায়ে ঠিক যেমনভাবে কাজ করার প্রয়োজন সেটা আমরা করতে পারছি না। বা করা হয়ে উঠছে না। কেন হচ্ছে না? সেই প্রশ্নের সমাধান আপনি যতদিন না বের করতে পারছেন ততদিন এই ব্যর্থতার গলিতেই ঘুরেফিরে আমাদের চলাফেরা করতে হবে।

সহজ হিসেব হলো আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোকে যতদিন পর্যন্ত শক্তিশালী এবং যুতসই করা না হবে ততদিন আমরা এমন পিছিয়ে পড়া দল হয়েই থাকবো। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট শেখার জায়গা না। এটা পারফর্ম করা এবং পারফরম্যান্স দেখানোর জায়গা। আপনি ঘরোয়া ক্রিকেটে সেটা শিখে এসে এখানে পারফরমেন্স দেখাবেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আমরা এখনো সেই সত্যটা ঠাওর করতে পারিনি। আর তাই এখনো আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে আমরা শিক্ষণীয় পর্যায়ে রয়ে গেছি।

ভারতের রনজি ট্রফিসহ অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্ট দারুণ উপযোগী সব উইকেটে হয়। আর এই উইকেটে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর প্রতিযোগিতায় লড়াকু মানসিকতা তৈরি করেই ভারতীয় ক্রিকেটাররা আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে খেলতে আসে। আর তাই তখন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া কোনো তরুণের কাছে তখন জায়গাটা নতুন কিছু মনে হয় না।

আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্বল কাঠামো, বাজে উইকেট এবং যেনতেন ভাবে বছরে একটা টুর্নামেন্ট করলেই কাজ শেষ- এই চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে এসে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে আর্ন্তজাতিক মানের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা করতে হবে।

আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের মানের এই ব্যবধান যতদিন না ঘুঁচবে ততদিন আমরা এমন ‘বেচারা’ হয়েই থাকবো।

সেলিম শাহেদ: ম্যাচ রেফারি ও সাবেক ক্রিকেটার

সম্পর্কিত খবর