প্রতিপক্ষ পুরুষ ক্রোমোজোমের, ৪৬ সেকেন্ডে খেলা ছাড়লেন ইতালিয়ান নারী
গত রাতে অলিম্পিকের মঞ্চে বক্সিংয়ের ওয়েল্টেরওয়েট ইভেন্টের শেষ ষোলোয় মুখোমুখি হয়েছিলেন ইতালির অ্যাঞ্জেলা কারিনি আর আলজেরিয়ার ইমানে খেলিফ। তবে ম্যাচটা এক মিনিটও টিকল না, ৪৬ সেকেন্ডেই শেষ হয়ে গেল। খেলিফের কাছে ‘হার মেনে’ বক্সিং রিং থেকে সরে দাঁড়ান ক্যারিনি। এরপরই এই ম্যাচ নিয়ে শুরু হয়ে গেছে বিতর্ক।
নারীদের ৬৬ কেজি বিভাগের শেষ ষোলর এই ম্যাচে ইতালির কারিনি শুরু থেকেই ছিলেন ব্যাকফুটে। তার মুখে খেলিফের প্রথম ঘুষিটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল তাকে। এরপর আরও দুই তিনটি ঘুষি হজমের পর কারিনি পাশে কোচের কাছে গিয়ে হেডগার্ড ঠিক করে ফেরেন রিংয়ে। তবে এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি। ৪৬ সেকেন্ডের মাথায় নাকে তীব্র ব্যথা নিয়ে ম্যাচটা শেষ করতে বাধ্য হন কারিনি। চোখের জলে বাউট ছেড়ে যান তিনি।
ম্যাচ শেষে কারিনি বলেন, ‘আমার চোখে এটা কোনো হার নয়। আপনি বক্সিং রিংয়ে ঢুকলেই জিতে যান, এরপর যাই হোক না কেন। আমি এখানে ভালো-মন্দ বিচার করতে পারব না। এটা ঠিক কি না, তা বোলতে পারব না আমি। আমার কাজটা আমি করেছি। আমি মাথা উঁচু করে বিদায় নিয়েছি। আমি নারী, আমার হিতাহিত জ্ঞান আছে; কখন আমার খেলাটা ছেড়ে দিতে হবে, আর পেরে ওঠা যাচ্ছে না, সেটা বলতে পারাটা মর্যাদার বিষয়। আমি জিততে পারব, এই আত্মবিশ্বাসটা ছিল। তবে নাকে ওই ঘুষিগুলো বেশ লেগেছিল, এরপরই আমি বলেছি যথেষ্ট হয়েছে, আর না।’
এর আগে খেলা শেষে তিনি হাতও মেলাননি আলজেরিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে। এরপর তার কথায় বিষয়টা ন্যায্য নাকি অন্যায্য সেটা কিছুটা রহস্য তৈরি করে। এরপরই বেরিয়ে আসে আসল কারণ।
আলজেরিয়ার ইমানে খেলিফ গত বছর লিঙ্গ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার শরীরে এক্সওয়াই ক্রোমোজোমের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা মূলত পুরুষদের শরীরে মেলে। নারীদের ক্রোমোজোম এক্সএক্স। দুই ক্রোমোজোমের পার্থক্য নারী পুরুষের শারীরিক পার্থক্য ঠিক করে দেয়। সেই এক্সওয়াই ক্রোমোজোম ছিল ইমানে খেলিফের শরীরে, তাই তিনি একজন ‘বায়োলজিকাল মেল’ হওয়ায় তাকে গেল বছর। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের স্বর্ণপদকের ম্যাচের ঠিক আগে বাদ দেওয়া হয়।
সেই তিনি এবার প্যারিস অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা পেয়েছেন। কারণ আন্তর্জাতিক বক্সিং ফেডারেশনের সে নিয়ম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তার ফলটা এবার শেষ ষোলর ম্যাচে দেখা গেল। ইমানে খেলিফ এখনও প্রতিযোগিতায় আছেন। তাই এমন দৃশ্য এটাই শেষ বলে মনে হচ্ছে না আদৌ।