ভারতকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
আজ শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ছিলেন যিনি, সেই চারিথ আসালঙ্কার বয়স ছিল তখন মোটে ২ মাস। কিংবা ৫টা উইকেট নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করলেন যে দুনিথ ভেল্লালাগে, তার তো তখন জন্মই হয়নি! হয়েছে সে ঘটনারও আরও ৫ বছর পর।
সে 'ঘটনা'টা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়। আজ থেকে ২৭ বছর আগে, ১৯৯৭ এর জুনে সেই সিরিজটা জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। তারপর একে একে ২৭ বছর কেটে গেলেও লঙ্কানরা আর ভারতের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিততে পারেনি। পারল এবার।
শ্রীলঙ্কা একটা বিরল কীর্তি আগেই নিশ্চিত করে রেখেছিল। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ হার এড়ানো। ফল এসেছে অন্তত দুটো ম্যাচে এমন সিরিজে হার এড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা, এমন কীর্তিও যে হয়েছে ওই ১৯৯৭ সালেই!
প্রথম ম্যাচে টাই আর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের ফলে একটা বিষয় নিশ্চিত ছিল যে, লঙ্কানরা এই সিরিজ হারছে না, ২৭ বছর পর! আজ ভারত জিতলে বড়জোর সিরিজটা 'টাই' হতো।
তবে লঙ্কানরা তাও হতে দেয়নি। দারুণ প্রতাপে ভারতকে হারিয়েছে তারা। বিশ্বকাপ ফাইনালিস্টদের বিপক্ষে লঙ্কানদের জয়ের ব্যবধানটা ১১০ রানের। আর তাতেই ২৭ বছর পর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলেছে লঙ্কানরা।
সিরিজ বাঁচাতে হলে ভারতকে করতে হতো ২৪৯ রান। রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলিদের ভারতের জন্য লক্ষ্যটা মামুলি না হলেও দুঃসাধ্য কিছু অতি অবশ্যই ছিল না। তবে লঙ্কান বোলাররা সেটাকেই রীতিমতো এভারেস্টসম মনে করালেন। ভারত অলআউট হলো অর্ধেকের মতো ওভার বাকি থাকতেই!
এ কাজটা সম্ভব হয়েছে দুনিথ ভেল্লালাগের কল্যাণে। ২৭ রান খরচায় পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ভারতের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৫ রান রোহিত শর্মার, তার ঝোড়ো ইনিংসটাকে থামিয়েছেন এই ভেল্লালাগে। বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে এসেছে ২০, সেই তিনিও ওই ভেল্লালাগেরই শিকার। এরপর আরও তিন উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাতেই ভারত মুখ থুবড়ে পড়ল রীতিমতো।
ভারতের ব্যাটিং দুর্দশার চিত্রটা আরও একটু স্পষ্ট হয় স্কোরকার্ডের বাকি অংশে চোখ রাখলেই। ৩০ রান করতে পেরেছেন রোহিত শর্মা বাদে আরও একজন। আর সব মিলিয়ে দুই অঙ্কই ছুঁয়েছেন মোটে ৪ জন। ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। ভারত অলআউট হলো ১৩৮ রান তুলতেই।
তবে ভেল্লালাগে এরপরও ম্যাচসেরার পুরস্কারটা পাননি। পেয়েছেন আভিশকা ফার্নান্দো। লঙ্কানরা যে ২৪৮ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছে, তা তো ওই আভিশকার কল্যাণেই। লঙ্কান এই ওপেনার প্রেমাদাসার অমন উইকেটে ১০২ বলে করেছেন ৯৬ রান। সেঞ্চুরি না পেলেও দলের লড়াকু পুঁজির ভিতটা ঠিকই তৈরি করে দিতে পেরেছিলেন।
তিনি যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, একটা খচখচানি ছিল, লঙ্কানদের রানটা কম হয়ে যাচ্ছে কি না, কিংবা তিনি একটু বেশি ধীরে খেলে ফেলছেন কি না। তার ইনিংসের যথার্থতা প্রমাণ হয়ে গেল তার পরের ব্যাটারদের ইনিংসগুলোয়।
তার পরের ব্যাটারদের মধ্যে কুশল মেন্ডিস টিকেছিলেন প্রায় শেষ পর্যন্ত, তবে ওপাশে ব্যাটারদের আসা যাওয়া জানান দিচ্ছিল, উইকেটটা অত সহজও নয়। শেষ ২৭ রানে ৫ উইকেট খুইয়েছে স্বাগতিকরা। তবে ততক্ষণে ২৪৮ রান যোগ হয়ে গেছে স্কোরবোর্ডে, আর তার প্রধান কৃতিত্বটা ছিল আভিশকার। তাই ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তার হাতে।
বল হাতে নায়ক ভেল্লালাগে অবশ্য একেবারে খালি হাতে ফেরেননি। পেয়েছেন আরও বড় পুরস্কার, সিরিজ সেরার পুরস্কার। ২৭ বছর সিরিজ জয়ের প্রধান কুশীলব বনে গিয়ে ২১ বছর বয়সী এই স্পিনার নিশ্চয়ই মন খারাপ করেননি!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২৪৮/৭ (৫০ ওভার); আভিশকা ৯৬, কুসাল ৫৯; পরাগ ৩-৫৪, সুন্দর ১-২৯
ভারত: ১৩৮/১০ (২৬.১ ওভার); রোহিত ৩৫, সুন্দর ৩০; ভেল্লালাগে ৫-২৭, থিকসানা ২-৪৫
ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ১১০ রানে জয়ী
সিরিজ: শ্রীলঙ্কা ২-০ তে জয়ী
ম্যাচসেরা: আভিশকা ফার্নান্দো
সিরিজসেরা: দুনিথ ভেল্লালাগে