৫২ বছর ছিল, আবাহনী ৫২ বছর পরেও থাকবে

৫২ বছর ছিল, আবাহনী ৫২ বছর পরেও থাকবে

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের প্রভাবটা ক্রীড়াঙ্গনেও পড়েছে বেশ। তবে তার কুফলটা আবাহনীর চেয়ে বেশি কেউ ভোগ করেনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পরপরই বিকেলে আবাহনী ক্লাব আক্রান্ত হয়। ক্লাবে ভাঙচুর হয়, লুট হয়ে যায় সব ট্রফি।

তবে এত কিছুর পরও ক্লাবটা বিলীন হয়ে যাবে না সময়ের গর্ভে, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আবাহনীর সাবেক, বর্তমান খেলোয়াড় ও পরিচালকরা। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ৫২ বছর ধরে আবাহনী ছিল, আছে; ৫২ বছর পরেও ক্লাবের অস্তিত্ব বহাল তবিয়তে থাকবে।

শেষ এক সপ্তাহ ধরে সময়ে সময়ে ক্লাবে সাবেক বর্তমান খেলোয়াড়রা এসেছেন, পরিস্থিতি দেখেছেন। আজ মঙ্গলবার ক্লাবের পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান পরিচালকরা।
ক্লাবের পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ, সাবেক পরিচালক আবদুস সাদেকরা ছিলেন ক্লাব প্রাঙ্গনে। এসেছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম, সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজন, গাজী আশরাফ হোসেন লিপুরাও। সেখানেই এই প্রত্যয় জানিয়েছেন সবাই।

লুট হয়ে যাওয়া শিরোপা ফেরত পেতে অনুরোধ জানিয়েছেন সবাই। ৫ আগস্ট সব শিরোপাই লুট হয়ে গিয়েছিল ক্লাবটি থেকে। পরে খেলোয়াড় আর সাধারণ মানুষের উদ্যোগে বেশ কিছু শিরোপা ফেরত এসেছে ক্লাবে। পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ জানিয়েছেন, সব শিরোপা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থও হবেন তারা।

এদিকে ক্ষমতার পটপরিবর্তন আর ক্লাবের এমন পরিস্থিতির কারণে আসছে মৌসুমে আবাহনী আসছে ক্রীড়া মৌসুমে নাম লেখাবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। তবে সে ধোঁয়াশা উড়িয়ে দিয়েছেন সবাই।

কাজী ইনাম জানিয়েছেন, ‘আবাহনী ক্লাবটা আজকের ক্লাব নয়। ৫২ বছর আগে থেকে এই ক্লাব চলছে, আশা করছি ৫২ বছর পরেও এই ক্লাবের অস্তিত্ব থাকবে। আসছে মৌসুমে সব খেলাতেই আবাহনী থাকবে।’

একই সুরে কথা বললেন খালেদ মাহমুদও। তিনি বলেন, ‘এই ক্লাব এত দিন ধরে অনেকগুলো পটপরিবর্তন দেখেছে, তখনও দল গঠন হয়েছে, মাঠের খেলায় অংশ নিয়েছে; এখনও হবে।’

ক্রিকেটে আবাহনীর কোচ সম্ভাব্য আর্থিক টানাপোড়েনের শঙ্কা অবশ্য উড়িয়ে দেননি। আবাহনী সব ধরনের খেলাতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই দল গড়েছে। সেখানে খানিকটা পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা তার মনে। তিনি বলেন, ‘দল গঠন হবেই। ক্রিকেটের মৌসুম আগামী মার্চে, সে মৌসুম আসতে অনেক বাকি। দল গঠন হবেই। তবে দল গঠনে টাকা কেমন আসবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়।’

সম্ভাব্য আর্থিক টানাপোড়েনের কথা খেলোয়াড়দের মগজেও ভালোভাবেই আছে। কিছু খেলোয়াড় খালেদ মাহমুদের কাছে ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন প্রয়োজনে বড় অঙ্কের টাকা ত্যাগ করে হলেও আবাহনীতে খেলতে চান তারা। তবে তাদেরকে বাস্তবতা বুঝিয়েছেন তিনি।

খালেদ মাহমুদের ভাষ্য, ‘কিছু কিছু খেলোয়াড় তো আমাকে ফোন করে এটাও বলেছে সে স্যাক্রিফাইস করে হলেও আমি এখানে খেলতে চাই। আমি তখন তাদের বুঝালাম যে এই যে পাঁচ লাখ টাকার প্রস্তাব ফেলে দিচ্ছো, এটা ছোট অঙ্ক নয় মোটেও। কেন তোমরা করবে? তবে সেই পাঁচ লাখ কম দিয়েও খেলোয়াড় টানা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।’

এদিকে আবাহনী ফুটবলে সবার আগে দল গুছিয়ে এনেছিল প্রায়। ১৪ জন দেশীয় ফুটবলারের একটা তালিকা ইতোমধ্যেই বাফুফের কাছে পৌঁছে গেছে যাদেরকে অন্য ক্লাব থেকে দলে টেনেছিল ক্লাবটি। বাকি আছে দলটিতে থাকা খেলোয়াড়রা, সঙ্গে বিদেশী খেলোয়াড় কেনাও বাকি। পরিস্থিতি বিরূপ হওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি ক্লাব থেকে। এদিকে দলবদলের সময়ও আর বেশি দিন বাকি নেই। এই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে পরিস্থিতিটা কীভাবে সামলায় আবাহনী ফুটবল, সেটাই দেখার বিষয়।

সম্পর্কিত খবর