সিজদাটা ফাইনালের জন্যই তোলা থাকুক, শামি!

সিজদাটা ফাইনালের জন্যই তোলা থাকুক, শামি!

আন্ডাররেটেড! ইন্টারনেটে এতোশত বার ব্যবহার হয়েছে যে কথাটা আজকাল বড্ড ক্লিশে শোনায়। তবে মোহাম্মদ শামির সঙ্গে যেন তকমাটা মিলে যায় খাপে খাপে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দুশো ছুঁইছুঁই উইকেট তার, গড় ২৪, প্রতি ২৬ বলে নিচ্ছেন একটি করে উইকেট। এমন একজন বোলারকে যে কেউই লুফে নিতে চাইবে নিজেদের দলে। এবারের বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার ভারত কি-না বেঞ্চে বসিয়ে রাখছিল সেই তাকে!

বড় বড় পরিসংখ্যান নিয়ে এসে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে চুপসে যাওয়ার নজির খেলার জগতে কম নেই। তবে শামির সিমের ধার যেন বেড়ে যায় বিশ্বকাপের মতো মঞ্চ পেলেই, তিনি যেন অপেক্ষায় থাকেন কবে একটা বিশ্বকাপ আসবে! 

২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে তার পথচলা শুরু, এরপর খেলেছেন ২০১৯-এও। এই দুই বিশ্বকাপে তার উইকেটসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭ ম্যাচে ১৭ আর ৪ ম্যাচে ১৪। এই ১১ ম্যাচের মাত্র একটিতে তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য, সেটা ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। আর আগুনে ফর্মে থাকার পরও পরের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে একাদশে তার জায়গা হয়নি, কম্বিনেশনের বলি হয়ে। 

সেই শামি এবারের বিশ্বকাপেও ওই ‘আন্ডাররেটেডই’ রইলেন। এবার যেন একটু বেশিই, চতুর্থ পেসার হিসেবে শার্দূল ঠাকুরদেরও জায়গা হয়ে যাচ্ছিল একাদশে, কিন্তু তাকে বেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছিল অপেক্ষা নিয়ে। 

সে অপেক্ষাটা শেষ হলো হার্দিক পান্ডিয়ার চোটে। পান্ডিয়ার চোটটা ‘শাপে বর’ হয়ে এল তার জন্য। শুধু তার জন্য বললে ভুল হবে, ভারত দলের জন্যেই তো শাপে বর হলো। 

সুযোগ পেয়ে শামি তা দু’হাতে লুফে নিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলে ঢুকেই তুলে নিলেন পাঁচ উইকেট, হলেন ম্যাচসেরা। ভারতও যেন পেয়ে গেল তাদের জিগসও পাজলের শেষ টুকরোটা। 

প্রথম পরিবর্তনে আক্রমণে আসছেন, শুরুতে বুমরাহ-সিরাজদের বানানো চাপটা সরে যেতে দিচ্ছেন না, উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দিচ্ছেন। এই ফর্মুলাতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। 

কাসুন রাজিথাকে বিদায় করে পঞ্চম উইকেটটা যখন ভরলেন ঝুলিতে, তখন গড়া হয়ে গেল একটা রেকর্ড। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতীয়দের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট এখন তার। ৪৪টি করে উইকেট নিয়ে শীর্ষে যৌথভাবে রেকর্ডটা ভাগাভাগি করছিলেন জহির খান আর জাভাগাল শ্রীনাথ, তাদের ফেললেন পেছনে। 

শামি কতটা ক্ষুরধার তার একটা প্রমাণ মেলে জহির আর শ্রীনাথের ইনিংস সংখ্যায় চোখ দিলে। দুজনের যেখানে যথাক্রমে ২৩ আর ৩৩ ইনিংস লেগেছিল উইকেটগুলো তুলে নিতে, সেখানে শামি তাদের ছাড়িয়ে গেলেন মাত্র ১৪ ইনিংসেই!

শামি এদিন রেকর্ড ভেঙেছেন-গড়েছেন-ছুঁয়েছেন আরও। ভারতের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ফাইফার, বিশ্বকাপে কোনো বোলারের সবচেয়ে বেশি ফাইফার, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বার চারটির বেশি উইকেট… এমন কীর্তির পর শ্রীলঙ্কা ম্যাচে স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে সিজদাই হয়তো দিতে চেয়েছিলেন শামি। শেষমেশ দেননি আর। বড় কাজটা যে এখনো বাকি! 

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের হয়ে প্রথম বারের মতো জার্সিটা গায়ে চড়িয়েছিলেন শামি। তবে এরপর দুটো বিশ্বকাপ খেলে ফেললেও ভারতকে আর বিশ্বকাপ জেতানো হয়নি। সে আক্ষেপটা রয়ে গেছে মনের কোণে। শামি হয়তো সিজদাটা তুলে রেখেছেন সেই দিনের জন্যই।

সম্পর্কিত খবর