দুর্নীতি ও রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন চান আমিনুল হক
সরকার পতনেরই পর থেকেই ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন সাবেক ও বর্তমান তারকাদের চাওয়াটা যেন একই সূত্রে গাঁথা। রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন। এবার এমন কিছু চাইলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হকও। আজ বুধবার ফুটবলের আমূল সংস্কার এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) দুর্নীতিবাজ সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ তার কমিটিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পল্টন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামনে আজ মানববন্ধন করেছেন ক্রীড়া ফেডারেশনের গত প্রায় দেড় যুগ ধরে বঞ্চিত হওয়া ব্যক্তিরা।
একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কার্যালয়ের বাইরেও। সেখানে ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বোর্ডকে নতুন করে সাজানোর কথা বলেছিলেন। ক্রীড়া ফেডারেশন দলীয় ও রাজনীতিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। জোর দাবী জানানো হয় ক্রিকেট পরিচালকদের পদত্যাগেরও। ক্রিকেটের পর আজ একই দৃশ্য দেখা গেল ফুটবলের ক্ষেত্রেও।
ফুটবলকে ঘিরে নানান দুর্নীতির নজির সামনে এনে গণমাধ্যমে আমিনুল হক বলেন, `বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা দায়িত্বরত এবং আমাদের যে ক্রীড়া উপদেষ্টা রয়েছেন তার কাছে আমি দাবি জানাচ্ছি ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে বাফুফের বিরুদ্ধে যে ১০ কোটি টাকার দুর্নীতির কাজ চলছিল তা নতুনভাবে উত্থাপন করা। এছাড়া দুদকের যিনি দায়িত্বরত রয়েছেন বাস্তবতা হলো সব জায়গায় তো আওয়ামীকরণ করে রেখেছে। যার কারণে কাজী সালাউদ্দিন আমাদের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তার নামে যে দুর্নীতির মামলা হয়েছে দুদকে; আমি মনে করি দুদকের যে কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের কাছে জোর দাবি করছি সেই মামলা উত্থাপিত করে তাকে আইনের আওতায় এনে তদন্ত করে তার বিচার কার্য সম্পন্ন করার।
আইসিসির মতো সভাপতি বদলে নিয়মের মারপ্যাঁচ আছে ফিফাতেও। এতেই এখনো অফিশিয়ালি বাফুফের সভাপতি পদে আছেন কাজী সালাউদ্দিন। এবং নিদিষ্ট নিয়মের বাইরে গিয়ে যাকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমিনুল হকের দাবী ফিফা সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়মের মধ্যে থেকেই কাজী সালাউদ্দিনকে পদ থেকে সরানো। সেই প্রসঙ্গে আমিনুল হোক বলেন, `আমাদের যে ফিফার একটি বেরিয়ার রয়েছে, তাছাড়া গণঅভ্যত্থানের মাধ্যমে একটা সরকার যে উৎখাত হয়েছে এই তথ্য ফিফার কাছেও আছে, আইসিসির কাছেও আছে। আমাদের বলার উদ্দেশ্যটা হচ্ছে যে, আমরা চাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে যেভাবে ফেডারেশনের নির্বাচন হয়, সেভাবেই হবে। কিন্তু এখানে যেহেতু আওয়ামীপন্থীরা বসে আছে, স্বৈরচারী কায়দায় যারা চেয়ারকে দখল করে রেখেছে, তাদেরকে রেখে বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়ন হবে না। আমরা চাই যে ক্রীড়া উপদেষ্টা বসে কথা বলে ফিফার যে নিয়ম আছে, সেই নিয়মকে রক্ষা করে আমরা একটি পথ বের করতে চাই। ফুটবল ফেডারেশনের যারা দায়িত্বরত আছেন, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগ করে ভবিষ্যতে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে তাদের মাধ্যমে গঠনমূলক নির্বাচন দিয়ে যাতে ফুটবল ফেডারেশন সাজাতে পারি এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।‘
বাংলাদেশের পুরো ক্রীড়াঙ্গনকে দুর্নীতি ও রাজনীতিমুক্ত দেখতে চান আমিনুল। `আমরা চাই বাংলাদেশে এখন থেকে ক্রীড়াঙ্গনের কোনো ফেডারেশনে দলীয়করণ, কোনো সংগঠনে রাজনীতি করা যাবে না। টোটাল রাজনীতিমুক্ত থাকবে। কোনো রকম দলীয়করণের কোনো সুযোগ নেই এবং আমরা চাই যারা ত্যাগী, বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, মাঠে কাজ করেছেন তাদের দিয়ে আমরা প্রত্যেকটি ফেডারেশন সাজাব। এখানে কোনো বিএনপিও থাকবে না, আওয়ামীও থাকবে না। যারা যোগ্য তারাই থাকবে।‘
বিগত সরকার দেশের সব খাতে দলীয়করণ, দুর্নীতি করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আমিনুল হক। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, `আমরা চাই বাংলাদেশে এখন থেকে ক্রীড়াঙ্গনের কোনো ফেডারেশনে দলীয়করণ, কোনো সংগঠনে রাজনীতি করা যাবে না। টোটাল রাজনীতিমুক্ত থাকবে। কোনো রকম দলীয়করণের কোনো সুযোগ নেই এবং আমরা চাই যারা ত্যাগী, বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, মাঠে কাজ করেছেন তাদের দিয়ে আমরা প্রত্যেকটি ফেডারেশন সাজাব। এখানে কোনো বিএনপিও থাকবে না, আওয়ামীও থাকবে না। যারা যোগ্য তারাই থাকবে।‘
মানবন্ধনে বিএনপি–ভাবাপন্ন সংগঠকই বেশি ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ও নরসিংদী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খাইরুল কবির খোকন, বিভিন্ন ফেডারেশনের বঞ্চিত কর্তা, খেলোয়াড়সহ অন্যরাও।