দেশের ক্রাইসিসে পাশে থাকতে পারিনি, আফসোস রয়েই যাবে: মাশরাফি

দেশের ক্রাইসিসে পাশে থাকতে পারিনি, আফসোস রয়েই যাবে: মাশরাফি

বাংলাদেশের দৃশ্যপটটাই বদলে গেছে শেষ এক মাসে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, তা থেকে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন, এবং অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। তবে এই সময়টায় বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ছিলেন নিশ্চুপ। যা নিয়ে তিনি সমালোচনার মুখেও পড়েছেন বেশ।

অবশেষে তিনি নিজের অবস্থান জানিয়েছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন নিজের তৎকালীন ভাবনা, এখনকার ভাবনা… তবে সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠছে তার হতাশাটাই। তিনি জানিয়েছেন, দেশের সংকটের মুহূর্তে পাশে থাকতে না পারার ব্যর্থতাটা তাকে আজীবন পোড়াবে।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি কেন চুপ ছিলেন, তা জানিয়েছেন। সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার চেয়েও বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘আমি কিছু করার চেষ্টা করিনি, তা নয়। আমি শুধু কিছু লেখার ভাবনায় থাকতে চাইনি। চেয়েছিলাম ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে, আলোচনার মাধ্যমে কিছু করা যায় কি না। সেই শুরুর দিকেই চেষ্টা করেছি। কারণ তাদের দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। কিন্তু সেটাও করতে পারিনি। সব মিলিয়ে অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি।’

কেন পারেননি, তার জবাবে তিনি ইঙ্গিত দিলেন তার দল আওয়ামী লীগের অবস্থানই ছিল পুরো পরিস্থিতিটার বিপক্ষে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে আমি আমার দলের অধিনায়ক নই। সহ-অধিনায়ক নই। এমনকি, বড় কেউ নই। মাত্র কয়েক বছর হলো শুরু করেছি রাজনীতি। আমি আমার জায়গা থেকেই চেষ্টা করেছি। যতটুকু সাধ্য ছিল, চেষ্টা করেছি যেন ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারি। কিন্তু সুযোগটা না পেলে তো কিছু করার থাকে না। হয়তো দলের উপদেষ্টামন্ডলিতে থাকলে বা সেরকম কেউ হলে দায়িত্ব পেতাম। তার পরও সাধ্যমতো করেছি, কিন্তু সুযোগটা আমি পাইনি।’

তবে এরপরও নিজের কিছু করতে না পারার দায়টা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘তার পরও কাউকে দোষ দেব না। দায় আমারই। বিশেষ করে, মানুষের যে আবেগ-ভালোবাসার জায়গা ছিল, ক্রিকেটার মাশরাফির প্রতি যে দাবি ছিল, সেটা পূরণ করতে পারিনি এবং সেই দায় মাথাপেতেই নিচ্ছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি এবং সেটা আমাকে সেই শুরু থেকেই পোড়াচ্ছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে, আমি কিছু করার চেষ্টা করেছি। পারিনি।’

তবে পুরো বিষয়টা নিয়ে নিজের ওপর হতাশা ব্যক্ত করেছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘এই কষ্ট থাকবেই। হয়তো আজীবন থাকবে। দেশের একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে পাশে থাকতে পারিনি, কিছু করতে পারিনি, এটা আমাকে সবসময়ই ভোগাবে, পোড়াবে। সবসময়ই থেকে যাবে। সবসময় সব কথা বলা যায় না। কিছু জিনিস হয়তো বলার ব্যাপারও নয়। এতদিন চুপ ছিলাম। আজকে কিছু বলছি। কিছু হয়তো সামনে বলব। জীবনে অনেক কিছু হবে। তবে এই কষ্টটা রয়ে যাবে। যত কিছুই হোক, এটা কখনও যাবে না। নিজের ওপর সেই হতাশা সবসময়ই থাকবে।’

সম্পর্কিত খবর