যে তিন কারণে নারী বিশ্বকাপের আয়োজন হারাচ্ছে বাংলাদেশ
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন এখনো আশা হারাননি। অপেক্ষায় আছেন সুখবর শুনবেন। তবে সেটা নেহাতই যে ক্ষীণ সেই বাস্তবতাও তার জানা আছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর এখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে সার্বিক অবস্থা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট আয়োজনের পর্যায়ে আছে কিনা- সেই বিষয়ে প্রতিনিয়তই খোঁজখবর রাখছে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। সেই রিপোর্টের খাতায় এখন পর্যন্ত কোনো সবুজ চিহ্ন নেই। বিশ্বকাপের মতো একটা টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য যে পারম্ভিক পূর্বশর্তগুলো পূরুণ করার প্রয়োজন তার সবকিছুতেই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নামের পাশে লালকালিতে একটাই চিহ্ন-ক্রসমার্ক!
বাস্তবতা হলে আইসিসি বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে এরই মধ্যে নারী বিশ্বকাপ আয়োজনের বিকল্প আয়োজন, ভেন্যু খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। তাদের উত্তরও পেয়েছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে বিকল্প ভেন্যু হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ জানিয়েছিল আইসিসি। দুটো দেশই আইসিসির প্রস্তাবকে না করে দিয়েছে। আইসিসির কাছে এখন আরেকটি সম্ভাব্য বিকল্প ভেন্যু আছে-আরব আমিরাত। খুব সম্ভবত সেখানেই হতে যাচ্ছে অক্টোবরের এই বিশ্বকাপ।
বাংলাদেশ এখনো এই নারী বিশ্বকাপ আয়োজনের ক্ষীণ স্বপ্ন দেখছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা জানাচ্ছে মুলত তিন কারণে বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ ফস্কে গেছে।
প্রথমত:
বিশ্বকাপ আয়োজনের পূর্বশর্তগুলোর ন্যূনতম চাহিদাগুলোর কোনটাই বিসিবি পালন করতে পারেনি। এই আয়োজনের ব্যয়, পরিকল্পনা, সূচি, আম্পায়ার, টেলিভিশন রাইটস ইত্যকার বিষয়গুলো চুড়ান্ত করে আইসিসি। কিন্তু একটা টুর্নামেন্ট পরিচালনার জন্য স্থানীয় সাংগঠনিক কমিটি (এলওসি) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারী বিশ্বকাপের জন্য সেই এলওসি বিসিবি চুড়ান্ত করে ফেলেছিল। সেই এলওসির বেশিরভাগ কর্মকর্তাই ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাবেক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর কর্মকর্তারা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কোনো খোঁজ-খবর নেই। আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বিসিবির বেশিরভাগ পরিচালকও নিরাপত্তা ইস্যুতে গা ঢাকা দিয়েছেন। বিসিবিতে আসছেন না। এলওসি’র দায়িত্বে থাকাদেরও কোনো খোঁজ নেই। যে বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজেরাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা এখানে খেলতে আসা বিদেশি দলকে নিরাপত্তা কিভাবে দেবেন? নতুন করে এলওসি গঠন করে আইসিসির আস্থা অর্জন করা এখন বিসিবির পক্ষে কঠিন কাজ। সময় বেশি হাতে নেই। ৩ অক্টোবর থেকে নারী বিশ্বকাপ শুরুর সূচি।
দ্বিতীয়ত:
বিশ্বকাপে খেলতে আসবে এমন অন্তত চারটি দেশ এখন পর্যন্ত তাদের দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বা সতর্কতা জারি করে রেখেছে। এই তালিকায় রয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারত। বাংলাদেশের রাজপথে চলতি গোলযোগ, বাধা, হামলা-এগুলো সম্পূর্ণরূপে দুর না হওয়া পর্যন্ত এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে, এটা নিশ্চিত। আর রাজপথের এই গোলযোগ সহজেই মিটে যাবে, এমন পরিবেশ পরিস্থিতির আক্ষরিক কোনো নিশ্চয়তা নেই। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের রাজনৈতিক কর্মীরা ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সম্ভাব্য আন্দোলনে ফিরে আসতে পারে এমন আশঙ্কায় ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা এখন রাজপথে নিজেদের অবস্থান শক্তপোক্ত করছে। এই অবস্থান আয়ত্ব করার শক্তিপ্রদর্শন ও সমর্থনের লড়াই আরো কিছুদিন হয়তো চলবে। ততদিনে যে বিশ^কাপ আয়োজনের ডেটলাইন ফুরিয়ে যাবে।
তৃতীয়ত:
আইসিসি একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট সংস্থা হলেও এখানে ভারতের প্রভাব খুবই দৃশ্যমান এবং স্পষ্ঠত। বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সরকার টু সরকার সম্পর্কের মাত্রাটা খুব ভালো কোনো পর্যায়ে যে নেই-সেটাও সুস্পষ্ঠ। বাংলাদেশে বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়ে ভারত বা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) যদি সবুজ সংকেত না দেয়, তাহলে নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন হাতে ফাইল নিয়ে যতোই সচিবালয় টু বিসিবি দৌড়াদৌড়ি করেন না কেন, ধরে নিতেই পারেন এই ‘ম্যাচ’ বাংলাদেশ হারছে!