মাঠ ছেড়ে রাস্তায় দেশের পেশাদার ফুটবলাররা

মাঠ ছেড়ে রাস্তায় দেশের পেশাদার ফুটবলাররা

টানা দুইদিন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেন ফুটবলাররা। এতে জাতীয় দলের ফুটবলাররা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড়রাও। আসন্ন ২০২৪-২৫ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের দলবদলে শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ আরো কয়েকটা ক্লাব নিজেদের সরিয়ে নেয়াতে মূলত এ ঝামেলার সূত্রপাত। আসন্ন লিগে ক্লাবগুলো যাতে অংশ নেয় এই দাবিতে মাঠ ছেড়ে এখন রাস্তায় নেমে এসেছেন দেশের পেশাদার ফুটবলাররা।

কারণ ক্লাবগুলো লিগে অংশ না নিলে নিদারুণ দুর্ভোগে পড়বেন তারা। প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ জন ফুটবলার, কোচিং স্টাফদের রুটি-রুজি এখন হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় তাদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে আজ রোববার (১৮ আগস্ট) দ্বিতীয় দিনের মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন জাতীয় দলের এক সময়কার মাঠ কাঁপানো ফুটবলার শফিকুল ইসলাম মানিক, আলফাজ আহমেদ, ওয়াসিম, নকীব, এমিলিসহ আরো অনেকে। সাবেক এ ফুটবলাররা লিগ থেকে নাম প্রত্যাহার করা ক্লাবগুলোকে দলবদলে অংশ নেয়ার জোর অনুরোধ জানান। পাশাপাশি নাম প্রত্যাহার করা ক্লাবগুলোতে যারা আগে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদেরসহ অন্য স্পন্সরদেরও ফুটবলারদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন মানিক, আলফাজরা।

ফুটবলাররা রাস্তায় নেমে শুধু নিজেদের দাবি জানিয়েই ক্ষান্ত দেননি, দেখা করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) প্রধানকর্তা ব্যক্তি সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গেও। পরশু রাতে ফুটবলারদের ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল সালাউদ্দিনের বাসায় বৈঠকে বসেন। খেলোয়াড়দের এ সংকটে তাদের পাশে থাকার কথা বলেছেন সালাউদ্দিন। পাশাপাশি যে সমস্ত ক্লাব লিগে অংশ নিবে না বলে জানিয়েছে তাদের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথাও বলেছেন বাফুফের সভাপতি। সালাউদ্দিনের ফোন পেয়ে শেখ জামাল, চট্টগ্রাম আবাহনীর কর্তারা আসন্ন লিগে অংশ নেয়ার কথা বললেও শেখ রাসেলকে কোনো মতেই রাজি করানো যায়নি। শেখ রাসেল ক্লাব গতকাল সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে বাফুফেকে জানিয়েছে তারা আসন্ন লিগে খেলবে না- এমন তথ্যই বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের সূত্রে আজ জানা গেছে। একই সঙ্গে তুষার এও জানান যে, আগামীকাল সোমবার বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির সভা রয়েছে। সেখানে এই বিষয়ে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারবে বলে আশাবাদ তুষারের।

আসন্ন লিগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়টি শুধু ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কিংবা ক্লাবগুলোর কর্তাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও। আজ ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক তুষার। সেখানেই ফুটবলারদের চলমান বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে তুষার বলেন, ‘আমরা খেলোয়াড়দের নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে একটা মিটিং করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু খেলোয়াড়দের সিদ্ধান্ত আমরা তখন পর্যন্ত পাইনি। আমি সচিব মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম। উনি আমাকে উপদেষ্টার সঙ্গে বসিয়ে দেন। সেখানে আমরা বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরি। আপনাদের কাছ থেকে (গণমাধ্যম) এবং বিভিন্ন খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শোনা যে দুই-তিনটা দল এবার লিগে আসবে না। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রই কেবল আমাদের গতকাল (শনিবার) ৫টার পর জানায় তারা এবারে লিগে অংশগ্রহণ করবে না।‘

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক তুষার আরো যোগ করেন, `খেলোয়াড়েরা আমাদের প্রেসিডেন্ট সাহেবের (বাফুফে সভাপতি) সঙ্গে বসেছে। তিনি শেখ জামাল, শেখ রাসেল এবং চট্টগ্রাম আবাহনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, খেলার জন্য তাদের অনুরোধও করেছেন। এই কথা আমি উপদেষ্টা মহোদয়কে জানালাম। উনি আমাকে বলেছেন যে ক্লাবগুলোর স্পন্সরশিপ যেহেতু ক্লাবগুলোকেই করতে হয়। তাই এটা তারাই করার চেষ্টা করুক।‘

বর্তমান পরিস্থিতিতে দুটি ক্লাবের নাম নিয়ে কিছুটা শঙ্কা-সংশয় রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে অবশ্য তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বলে জানান তুষার। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন,  ‘শেখ রাসেল, শেখ জামাল ক্লাবের নাম নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।‘

সম্পর্কিত খবর