এ যেন সততার পুরষ্কার
কথায় আছে, ‘সৎভাবে লেগে থাকো, স্বপ্ন জয় তোমারই হবে'। এই কথাটা মেনেই বোধহয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দায়িত্বে এলেন ফারুক আহমেদ। তার ফল আবারও পেল বাংলাদেশ ক্রিকেট।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয় ফারুকের। দেশের জার্সিতে তার ক্যারিয়ারটা দীর্ঘ হয়নি। খেলেছেন মোট সাতটি একদিনের ম্যাচ। যেখানে ব্যাট হাতে তার সংগ্রহ ১০৫ রান। ব্যাটিং গড় মাত্র ৩৮.৪৬। স্ট্রাইকরেট ৩৮.৪৬। অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন একবার।
ফারুকের এমন পারফরম্যান্সে খুশি হওয়ার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। অন্তত আধুনিক যুগে এসে এমন পরিসংখ্যান দেখে হয়তো অনেকে নাকও সিটকাতে পারেন।
তবে সংগঠক হিসেবে ফারুক অন্য মেরুর মানুষ। এই প্রসঙ্গ আসলে তাকে মাপতে হবে আলাদা পাল্লায়।
খেলোয়াড়ি জীবনে নিষ্প্রভ থাকলেও সংগঠক হিসেবে ফারুককে অনন্য, অসাধারণ না বললে আপনি ভুল করবেন। এর আগে দুই দফা নির্বাচক হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে কাজ করেছেন। প্রতিবারই তার সফলতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পান ফারুক। তার হাত ধরে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের মতো ক্রিকেটারদের দেখেছে বাংলাদেশ। যারা এদেশের ক্রিকেটকে দিয়েছেন দুহাত ভরে। নিজেদের নিয়ে গেছেন বড় তারকাদের কাতারে।
২০১৩ সালে দ্বিতীয়বারের মতো লাল সবুজের দলের ক্রিকেটার নির্বাচনের দায়িত্ব পড়ে ফারুকের কাঁধে। সে মেয়াদে জাতীয় দলে তুলে আনেন তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, লিটন কুমার দাসদের মতো ক্রিকেটারদের। এরা সবাই এখন দলের প্রথম পছন্দের ক্রিকেটার।
দল নির্বাচনে সব সময়ই প্রশংসিত হয়েছেন ফারুক। তার নির্বাচিত দল নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার এইটে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে ফারুকের নির্বাচিত টাইগার শিবির। এমন দারুণ সব সাফল্যের কারণে দেশের ইতিহাসের সেরা নির্বাচক হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে।
বরাবরই প্রতিভা এবং পারফরম্যান্স বিবেচনায় ক্রিকেটার নির্বাচন করতেন ফারুক। তার বিরুদ্ধে কখনই পক্ষপাতিত্ব কিংবা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল না। সব সময় স্বাধীনভাবে খেলোয়াড় নির্বাচন করতে চাইতেন। সে স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হওয়ায় ২০১৬ সালে গুরুত্বপূর্ণ পদটি ছেড়ে দেন। তার আগে দ্বি স্তর বিশিষ্ট নির্বাচক ফর্মূলার বিরোধিতা এবং বিসিবির হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেন ৫৮ বছর বয়সী এই দক্ষ ক্রিকেট সংগঠক।
দীর্ঘ আট বছর পর আবারও ফারুক অধ্যায় দেখল বিসিবি। কিছুদিন আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক পালা বদল শুরু হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও। গুঞ্জনকে সত্যি করে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবি প্রধানের পদ ছেড়েছেন নাজমুল হাসান পাপন।
ক্রিকেটপাড়ায় চর্চা ছিল, পাপনের জায়গা পেতে পারেন ফারুক। অবশেষে বিসিবির ১৫তম সভাপতি হিসেবে পাপনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সাবেক ব্যাটার। সেই সঙ্গে গড়েছেন একটি রেকর্ড। প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে বিসিবির মসনদে বসলেন ফারুক।
বিসিবি প্রধানের দায়িত্ব পেয়েই আশার কথা শুনিয়েছেন ফারুক। তার লক্ষ্য অনেক বড়। দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান সামনের দিকে। দুই দুইবার নির্বাচক হিসেবে দারুণ সফল ফারুকের মুখে এমন কথাই তো শোভা পায়। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাও নিশ্চয় ফারুকের মুখে এমন কথাই শুনতে চেয়েছিলেন। তবে ফারক যে কেবলমাত্র বড় কথা শুনিয়েই দায় সারেন না সেটা সবার ভালোই জানা আছে।
লেখা-
কারিমুল ইসলাম।। ক্রীড়া সাংবাদিক