সেই ই-মেইল রহস্য নিয়ে সাকিবের ছোট্ট উত্তর, ট্রু এন্ড অথেনটিক!
কৌশল ভালো জিনিষ। তাতে ক্যারিশমা বা দক্ষতার প্রমাণ মিলে। কুটচাল-কুটনামি মন্দ। ওতে হিংসে ও পরশ্রীকাতরতা ছড়ায়।
সাকিব বনাম তামিমের এই লড়াই এখন পরের অংশে পৌঁছে গেছে। কৌশল আর নেই। যা আছে তার পুরোটা জুড়েই কুটনামি! গেল বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার ঠিক আগেভাগে দেশের ক্রিকেটের এই তারকা যেভাবে প্রকাশ্যে বিবাদ ও বৈরিতায় জড়িয়ে পড়েন, সেটা দেখে ক্রিকেটের বহু পুরানো একটা কথাই মনে পড়ে যায়- দিস ইজ নট ক্রিকেট!
অথচ কি আশ্চর্য এই দুজনেই কিন্তু এক সময়ে একেবারে জানি দোস্ত ছিলেন! আর এখন চরম বৈরি। সেই লড়াইয়ে আরো জোরে বাতাস দেন দুই ক্রিকেটারের ভক্ত-সমর্থকরা। একপাশে তামিমিয়ান অন্যপাশে সাকিবিয়ান!
সর্বশেষ একটি ই-মেইলকে কেন্দ্র করে ফের আলোচনায় এসেছে এক সময়ের দুই বন্ধুর বতর্মান বৈরিতা। কি করে এবং কেন এই ই-মেইল সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হলো- শুনি সেই ‘গল্পের’ প্রেক্ষাপট এবং পরবর্তী অধ্যায়।
পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ শেষে সাকিব দেশে ফিরেননি। সরাসরি চলে গেছেন ইংল্যান্ডে। সারে কাউন্টি ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন। সেখান থেকেই ভারত সফরে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের এমপি ছিলেন সাকিব। এরই মধ্যে দেশে সাকিবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সাকিবকে নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থান কি তা জানতে সাংবাদিকরা বিসিবি সভাপতিকেও নিত্যদিন প্রশ্ন করেছিলেন। বিসিবি তাদের অবস্থান পরিস্কারভাবে ব্যাখা করে। জানিয়ে দেয়, সাকিব চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। তাই আইনগত কোনো প্রয়োজন হলে বিসিবি অভিভাবক হিসেবে সাকিবের পাশে দাঁড়াবে।
হত্যা মামলার অভিযোগ নিয়ে সাকিব ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট লিগে খেলতে যাচ্ছেন, তখন সেই কাউন্টি দলের প্রতিক্রিয়া কি সেটা জানতে চেয়ে সেখানে একটা ই-মেইল করেন ক্রীড়া সাংবাদিক মিনহাজ উদ্দিন খান। তিনি তার পত্রিকায় নিউজ করার জন্যই এই তথ্য জানতে চান। এই প্রসঙ্গে স্পোর্টস বাংলার পক্ষ থেকে মিনহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘সাংবাদিক হিসেবে এমন প্রশ্ন করে সেই তথ্য জানার অধিকার তো আমার থাকতেই পারে। আমি তো কোনো লুকোছাপা করিনি। কিন্তু এখন পুরো বিষয়টাকে যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে তা দুঃখজনক।’
সাকিবের সমর্থকরা ই-মেইলের এই ঘটনাকে একটা ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা এটাকে কুটচাল বলে অভিহিত করেছেন। তাদের দাবি এই কুটচালে নাটের গুরু তামিম ইকবাল!
প্রশ্ন হলো এখানে তামিম ইকবালের নাম কিভাবে আসছে? উত্তরটা হলো, সাংবাদিক মিনহাজ উদ্দিন খানের আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি ক্রিকেটার তামিম ইকবাল খানের এজেন্ট বা মিডিয়া ম্যানেজার। এই সূত্রকে জোড়া লাগিয়ে সাকিব আল হাসানের ভক্ত-সমর্থকদের জোর বিশ্বাস ই-মেইল এর কুটচাল তামিমের তৈরি। সাকিবের জন্য সমস্যা তৈরি করতেই তামিম এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তার ম্যানেজারের মাধ্যমে।
যার নামে প্রেরিত ই-মেইল থেকে এই সঙ্কটের শুরু, সেই মিনহাজ উদ্দিন খান স্পোর্টস বাংলাকে টেলিফোনে তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, আমরা ভুলটা কোথায়? সাংবাদিক হিসেবেও তো আমার একটা পরিচয় আছে। আমি সেই দায়িত্ব পালন করতেই এই ই-মেইল করেছিলাম। যদি কোনোকিছু লুকাতেই হতে তাহলে তো বেনামে আমি ই-মেইল করতে পারতাম। আর অবাক করার বিষয় হলো বলাবলি হচ্ছে আমি নাকি বাংলাদেশের সাবেক কোচ স্টিভ রোডসের কাছে এই ই- মেইল করেছি। অথচ স্টিভ রোডস তো সারে কাউন্টির কেউ না। আমি তো ই-মেইল করেছি সারে ক্রিকেট কাউন্টির নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।’
এই বিষয়টি এবং ই-মেইলের সত্যতা নিয়ে সাকিবের মন্তব্য কি? এমন একটা প্রশ্ন লিখে সাকিবের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিলেন সাবেক এক ক্রিকেটার।
উত্তর দিতে বেশি দেরি করেননি সাকিব। এক লাইনে ছোট্ট জবাব তার- ‘ট্রু এন্ড অথেনটিক!’