টেস্টে ভারতের মাটিতে কেমন খেলে বাংলাদেশ?
টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের রেকর্ড তেমন ভালো কিছু নয়। প্রায় দুই যুগ টেস্ট খেলেও সব মিলিয়ে ম্যাচ জিতেছে মোটে ২১ টা, বছরপ্রতি একটারও কম করে জয়।
তবে এমন রেকর্ড সম্প্রতি পেছনে ফেলার ইঙ্গিত দিচ্ছে বাংলাদেশ। সবশেষ আট টেস্টের পাঁচটিতে জিতেছে। পাকিস্তান সফর থেকে ফিরেছে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে।
যার ফলে আসছে ভারত সফরেও দারুণ কিছু করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও ভারতে বাংলাদেশের ইতিহাস, বিশেষ করে টেস্ট খেলার ইতিহাস সুখকর নয় মোটেও।
ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার সুযোগ বাংলাদেশ খুব কমই পেয়েছে। ২৪ বছরে খেলেছে মোটে ৩টি টেস্ট।
আসন্ন ভারত সিরিজের আগে পেছনের সেই তিন টেস্টে আরও একবার ফিরে তাকানো যাক–
হায়দরাবাদ, ২০১৭
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে যায় ভারতে। ম্যাচটার আগে থেকেই অবশ্য বাংলাদেশকে অশনিসংকেত দিচ্ছিল ব্যাটিং লাইন আপ। প্রস্তুতি ম্যাচে ভারত এ দলের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে আড়াইশো পেরোতে পারেনি দল। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসেও অল্পেতেই দুই উইকেট খুইয়ে বসেন মুশফিকুর রহিমরা।
এরপর মূল ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ হজম করে বসে ৬৮৭ রান। ডাবল সেঞ্চুরি করেন বিরাট কোহলি। তিন অঙ্কের দেখা পান মুরালি বিজয় আর ঋদ্ধিমান সাহা। জবাবে বাংলাদেশ সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে লড়েছিল কিছুটা। সাকিব ৮২ রানে আউট হলেও মুশফিক শেষ পর্যন্ত লড়েছেন। তবে তাতে ফলো অন এড়ানোর মতো রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। ৩৮৮ রান তুলে ইনিংস শেষ করে।
২৯৯ রানে এগিয়ে থেকেও ভারত ফলো অন করায়নি বাংলাদেশকে। ৪ উইকেটে ১৫৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ৪৫৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ বিপাকে পড়ে শুরুতেই, খুইয়ে বসে তামিম ইকবালকে। এরপর সৌম্য সরকারের ৪২ রানে ভর করে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় সফরকারীরা। এরপর সৌম্য ফিরলে আবারও বিপদে পরে দল, ১০৬ রান তুলতে ৪ উইকেট খুইয়ে বসে। এরপর মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে লড়াই করলেও শেষমেশ বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৫০ রান তুলে। ভারত ম্যাচটা জেতে ২০৮ রানের ব্যবধানে।
ইন্দোর, ২০১৯
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ এই ম্যাচে বাংলাদেশ শুরু থেকেই ছিল ব্যাকফুটে। প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হকের ৩৭ আর মুশফিকুর রহিমের ৪৩ রানের ইনিংস বাদে রান পাননি তেমন কেউই। বাংলাদেশ ১৫০ রান তুলতেই গুটিয়ে যায়।
জবাবে ভারত মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে ৪৯৩ রানের পাহাড় গড়ে তোলে। দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকুর রহিম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান। এরপরও বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশ ২১৩ রানে অলআউট হয়। ভারত এই ম্যাচ জেতে ইনিংস ও ১৩০ রানে।
কলকাতা, ২০১৯
কলকাতায় পিংক টেস্ট নিয়ে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সব আয়োজনে জল ঢেলে দেয় বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা। বাংলাদেশ দুই ইনিংসেই অলআউট হয় ২০০ রানের নিচে। ম্যাচটাও হারে ইনিংস ব্যবধানে।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ১০৬ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। সাদমান ইসলাম, লিটন দাস আর নাইম হাসান বাদে দুই অঙ্কই ছুঁতে পারেননি কেউ।
জবাবে ভারত বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি আর আজিঙ্কা রাহানে ও চেতেশ্বর পূজারার ফিফটিতে স্কোরবোর্ডে পেয়ে যায় ৩৪৭ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতার পুরোনো গল্পটা লেখে বাংলাদেশ। ১৩ রান তুলতেই ৪ উইকেট খুইয়ে বসে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে অলআউটের শঙ্কাতেও পরে যায়।
তবে মুশফিকুর রহিমের ফিফটিতে সেটা এড়ায় বাংলাদেশ। মুশফিক শেষ পর্যন্ত ৭৪ রান করে আউট হন। তার আগে ৩৯ রানে মাহমুদউল্লাহর ইনিংস শেষ হয় তিনি আহত হয়ে মাঠ ছাড়লে। এরপর থেকে শেষ পর্যন্ত কেউ আর ৩০ রান করতে পারেননি। যার ফলে বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৯৫ রানে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হারের দুঃস্মৃতি সঙ্গী হয় বাংলাদেশের।