আফগানদের আরেক রূপকথা লিখতে দিল না ‘ম্যাক্সওয়েল-ম্যাজিক’

আফগানদের আরেক রূপকথা লিখতে দিল না ‘ম্যাক্সওয়েল-ম্যাজিক’

অবিশ্বাস্য! এ ছাড়া আপনি কী বলবেন একে? লক্ষ্য ছিল ২৯২ রান। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার ৯১ রান তুলতেই নেই ৭ উইকেট। তখন আপনি ভেবেছিলেন অস্ট্রেলিয়াই ম্যাচটা জিতবে? কে ভেবেছিল! স্ক্রিনেই তো ভেসে ভেসে আসছিল একটু পরপর আফগানিস্তানের ম্যাচটা জেতার সম্ভাবনা ৯৯.৫৪, আর অজিদের ০.৪৬ শতাংশ। সেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা জিতল শেষমেশ, জেতালেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শেষতক টিকে রইলেন। নিজের ক্যারিয়ারের তো বটেই, অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসেরই প্রথম ওয়ানডে দ্বিশতক তুলে নিলেন, সেই ২০০তম রানটাই দলকে এনে দিল অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয় এক জয়। 

কতো কিছু করলেন ম্যাক্সওয়েল! বিশ্বকাপ তো বটেই, রান তাড়া করতে নেমে ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ রান, অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, কী করেননি ম্যাক্সওয়েল! তবে তার ইনিংসের মাহাত্ম্যটা বাড়িয়ে দিচ্ছে তার ইনিংসের পটভূমি। আগের কোনো রেকর্ডই যে টেল এন্ডার কাউকে ওপাশে রেখে হয়নি!

সেটাও যদি আপনার কাছে যথেষ্ট না হয়, তাহলে যোগ করুন তার ক্র্যাম্প করাটাকে। মাঝ ইনিংসে চোট পেয়েছিলেন। শেষ দিকে পরিস্থিতিটা এমন দাঁড়িয়েছিল যে তার দাঁড়িয়ে থাকাটাই দায় হয়ে যাচ্ছিল রীতিমতো। কাতরাতে কাতরাতে খেলছিলেন একেকটা শট, সেগুলো গিয়ে আছড়ে পড়ছিল সীমানার ওপারে। এমন এক ইনিংসে ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংস কেন বলবেন না আপনি?

তবে আফগানরা এই হারের জন্য নিজেদের না দুষে পারবে কি? ম্যাক্সওয়েল তখনো থিতু হননি। ইনিংসের ২১ আর ২২তম ওভারে ম্যাক্সওয়েল ক্যাচই তুলে দিয়েছিলেন। প্রথমবার ক্যাচ ফেললেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি, পরেরবার ফেললেন মুজিব উর রহমান। মাঝে একবার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত গিয়েছিল ম্যাক্সির পক্ষে। আফগানিস্তান রিভিউ নিয়েছিল, তবে সব ঠিকঠাক হয়েও আম্পায়ারের কলে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। দিনটা যে তার, তখনই কি টের পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি?

তখনও যদি টের না পেয়ে থাকেন, তাহলে টানতে হবে তার বেশ কিছু শটের কথা। ইনিংসের শুরুর দিকে বেশ নড়বড়ে ছিলেন। বেশ কিছু বল কোণায় লেগে চলে গিয়েছিল বাউন্ডারিতে। তখন দিনটা যে তার, তা নিশ্চিতভাবেই মনে হওয়ার কথা তার। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি ম্যাক্সওয়েল। থেমেছেন একেবারে দলকে জেতানোর পর। 

তার কীর্তিতেই ম্লান হয়ে গেছে প্রথমে ব্যাট করা ইবরাহিম জাদরানের দারুণ এক সেঞ্চুরি, যা আবার আফগানদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ শতক, রশিদ খানের ক্যামিও। এরপর নাভিন উল হক, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদদের দুর্দান্ত বোলিং, অজিদের নিশ্চিত হারের চোখরাঙানি... সব ম্লান হয়ে গেছে ম্যাক্সওয়েলের ওই এক ইনিংসের কাছে। হওয়ারই কথা। অতিমানবদের কাছে মানবদের কীর্তি ধোপে টিকেছে কবে?

সম্পর্কিত খবর