শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় অঘোর মন্ডলকে স্মরণ
প্রথিতযশা ক্রীড়া সাংবাদিক ও বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের (বিএসজেএ)’র সিনিয়র সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অঘোর মন্ডলের স্মরণ সভা বুধবার বিকেলে বিএসজেএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ‘শ্রদ্ধায় স্মরণ’ শীর্ষক সভায় সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠক, সাংবাদিকবৃন্দ প্রিয় অঘোর মন্ডলের স্মৃতিচারণ করেন। এই স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন অঘোর মন্ডলের দুই মেয়ে অরুনিমা মন্ডল ও অর্পিতা মন্ডল । বিএসজেএর সিনিয়র সদস্য রায়হান আল মুঘনির সঞ্চালনায় স্মরণ সভার সভাপতিত্ব করেন বিএসজেএর সভাপতি এটিএম সাইদুজ্জামান।
শুরুতেই এটিএম সাইদুজ্জামান বলেছেন, অঘোর দাদা আমার সাংবাদিকতা জীবনের শিক্ষক। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে, এসব বলতে গেলে কয়েক সন্ধ্যা কেটে যাবে। আমি কেবল কামনা করি দাদা ভালো থাকুক, তার পরিবার ভালো থাকুক।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেছেন, অঘোরের রিপোর্টিংর ব্যাপারেতো কোন প্রশ্নই নেই। প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খুব সুন্দর করে তুলে আনতেন। একটা ভালো ইন্টারভিউর জন্য দেশে এবং বিদেশে কিভাবে ছুটতো, সেই গল্পগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করতো। কিছু মানুষ কষ্ট করেই যায়, তার কিছু অতৃপ্তি হয়তো আছে। আমরা ক্রীড়াবিদরা নানা মাধ্যমে প্রশংসিত হই। কিন্তু সাংবাদিকদের কি হয়? আমাদের এমন কোন প্লাটফর্ম নেই যার মাধ্যমে আমরা সাংবাদিকদের সম্মান দিতে পারি।’
জাগো নিউজের বিশেষ প্রতিনিধি আরিফুর রহমান বাবু বলেছেন, ভাবতেই অবাক লাগছে, আমাদের অঘোর দাদার স্মৃতি চারণ করতে হচ্ছে। এমন কিছু আমার করতে হবে, ভাবনাতেও ছিলো না। খুব কষ্ট লাগছে।’
দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি মাসুদ পারভেজ বলেছেন, ‘আমি অঘোর দাদার অধীনে কাজ করে রিপোর্টার হিসেবে যে পর্যায়ে এসেছি, পুরো কৃতিত্বই তার। আমি তার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ক্রীড়াঙ্গনে তার মতো খুব বেশি রিপোর্টার আমরা পাইনি।’
সাবেক ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলেছেন, ‘অঘোর দাদা এতো জলদি চলে যাবে, এটা মেনে নেওয়া আমার জন্য কঠিন। আশা করি দাদা শান্তিতে আছেন, ভালো আছেন।’
বিএসজেএ’র সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেছেন, বিএসজেএ সব সময় সদস্যদের পাশে ছিলো। অঘোর দাদার পাশে আমরা ছিলাম। সামনেও থাকবো। অঘোরদার দুই মেয়ে আমাদের মেয়েই তো। যে কোন প্রয়োজনে বিএসজেএ সব সময় পাশে থাকবে।‘
সাবেক মহিলা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও সংগঠক কামরুন নাহার ডানা বলেছেন, আমরা সবাই জানি আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। তবে কিছু কিছু চলে যাওয়া অনেক আঘাত করে। আমরা অনেক তাড়াতাড়ি তাকে হারিয়ে ফেললাম। আমি অঘোরের আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
দেশ রূপান্তরের সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেছেন, অঘোর মন্ডল আমাদের কাছে বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেট রিপোর্টার। নাম্বার ওয়ান হওয়ার জন্য তার যে চেষ্টা, সেটা বাকিদের জন্য অনুপ্রেরণার। এটা যদি কেউ অনুসরণ করে, তাহলে উন্নতি হবেই।
ক্রীড়া সংগঠক আশিকুর রহমান মিকু বলেছেন, আমাদের দেশের অনেক বড় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব অঘোর মন্ডল। তার স্মৃতি ধরে রাখা উচিত বলে মনে করি।‘
জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় আব্দুল গাফফার বলেছেন, দাদা এমন এক ব্যক্তি ছিলেন যার তুলনা হয় না। দাদাকে স্মরণ রাখতে হলে এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে যেন আজীবন তাকে স্মরণ রাখতে পারি।
সাংবাদিক শহীদুল আজম বলেছেন, আমরা বেদনাবিধুর সময় পার করেছি। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলেছি। অঘোর মন্ডল আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের সেই তারকা সাংবাদিক, যাকে আমরা হারিয়েছি। অঘোর শুধু ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবেই নয়, তার পরিধি আরও বিস্তৃত।’
সাংবাদিক শফিকুল করিম সাবু বলেছেন, আমি অঘোরের লেখা নিয়মিত পড়তাম। তার লেখার মুগ্ধ ছিলাম। আমার কষ্ট তার শেষ বেলায় তাকে আমি দেখতে পারিনি। আশা করবো অঘোর যেখানে আছেন, শান্তিতে আছেন।’
সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেছেন, তার মানবিক অনেক গুণ ছিলো। সে নিজে অসুস্থ থাকলেও সবার স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতেন। দেখা হলেই খোঁজ নিতেন। মানুষ হিসেবে অসম্ভব ভালো। হয়তো পেশাদার জায়গায় তিনি কড়া ছিলেন।
সাংবাদিক তাওসিয়া ইসলাম বলেছেন, পেশাদার জায়গা থেকে অঘোর দাদা অসাধারণ ছিলেন। আমি যদি ক্যারিয়ারের শুরুতে এমন একজন মানুষ পেতাম, আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হতো।
সাবেক হকি খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল বলেছেন, মানুষকে মূল্যায়ন করার যে ক্ষমতা সেটি অঘোর দাদার চেয়ে ভালো করে কেউ পারতেন না। খেলোয়াড়ী জীবনে ভাবতাম, যদি অঘোর দা একটা সাক্ষাৎকার নিতেন। আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
সাংবাদিক তারেক মাহমুদ বলেছেন, অঘোর দার সময়জ্ঞান খুব ভালো ছিলো। যেখানে যেতেন, সময়ের আগে পৌঁছে যেতেন। এটা অনুকরণীয়। সাংবাদিক আরাফাত জুবায়ের বলেছেন, তার ভাবনার জগত ছিল ভিন্ন। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। তার বিশেষ রিপোর্ট সংকলন হলে নতুন প্রজন্মের জন্য পাথেয় হবে। একজন রিপোর্টার কিভাবে রিপোর্টার হতে পারেন অঘোর দাদার জীবন অনুসরণ করলেই তা বোঝা যায়।’
অঘোর মন্ডলের বড় মেয়ে অরুনিমা বলেছেন, আপনাদের সবার ভালোবাসায় নিশ্চয়ই আমার বাবা যেখানে আছেন শান্তিতে আছেন। বাবা হিসেবে অত্যন্ত সৎ ছিলেন। পরিবারকে ভালোবাসতেন। সব সময় চাইতেন আমরা যেন তার দেখানো পথে হাঁটতে পারি। আপনারা দোয়া করবেন আমি ও আমার ছোট বোন যেন বাবার সম্মান ধরে রাখতে পারি।