দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে যা বললেন শান্ত
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুরু কাল সোমবার থেকে। তার আগে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কথা বললেন সাকিব আল হাসান, নতুন কোচ ফিল সিমন্স, সিরিজ, ব্যাটারদের নিয়ে। সংবাদ সম্মেলনের চুম্বকাংশ স্পোর্টস বাংলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো–
সাকিবকে নিয়ে পরিকল্পনা–
অবশ্যই পরিকল্পনা ছিলো আমাদের। বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় (সাকিব)। শুধু বাংলাদেশ বলব না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক যেকোনো কারণেই হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রত্যেকটা খেলোয়াড় মনে করে এটা পেন্ডিং থেকেই গেলো।'
এই টেস্টে সাকিবের না থাকা–
কীভাবে দেখছি আসলে...যেটা বললাম দুর্ভাগ্যজনক (সাকিবকে মিরপুরে বিদায় দিতে না পারা)। যেটা হওয়া উচিত ছিলো। আমরা সবাই জানি কেন হয়নি। এটা নিয়ে টেস্ট ম্যাচের আগের দিন কথা এগুতে চাই না।
সাকিবের না থাকা যেভাবে সামলাতে চায় দল–
এখনো সমস্যা হচ্ছে কম্বিনেশন মেলাতে। অস্বীকার করার কিছু নেই। এই জায়গা ঠিক করতে কিছুদিন সময় লাগবে। যে খেলোয়াড়গুলো আছে সবার এই সামর্থ্য আছে যার যে জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করবে। '
সাকিবের নামে মামলা দেওয়া হলে অনেকেই ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু সাকিবের না খেলার বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি কেন?
এরকম কোন কিছু না (ভয়ের কারণে ফেসবুকে পোস্ট দেননি কিনা) । আগামী কাল একটা টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে। আমরা সবাই জানি এখানে উনি শেষ টেস্ট খেলতে পারলে খুব ভালো হতো। ফোকাসটা ওই জায়গায় আনা হয়েছে যেন আমরা টেস্ট ম্যাচটা জিততে পারি। যত কথা বলব এখন কোন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আমরা সবাই জানি কেন উনি আসতে পারছে না। এখন বর্তমান সময়ে যেরকম অবস্থা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেই সব সমাধান হয়ে যায়। আমিও ভাবছি প্রতিদিন একটা করে স্ট্যাটাস দেব।
দক্ষিণ আফ্রিকার অনভিজ্ঞতা একটা সুযোগ কি না?
ওরা অভিজ্ঞ দল নয়, এরপরও সত্যি বলতে ওরা ভালো দল। আমরা শেষ চার টেস্টে দুটো হেরেছি, দুটো জিতেছি, পঞ্চাশ শতাংশ জয় আছে। পাকিস্তানে ভালো খেলেছি, ভারতে ভালো খেলিনি। তবে আমি মনে করি আমাদের দলটা বেশ ভালো অবস্থানে আছে এখন, বিশেষ করে আমাদের টেস্ট দলটা। ঘরের মাঠে আমরা সবসময় ভালো করি। আমার বিশ্বাস আমাদের যে বোলিং আক্রমণ আছে, যে ব্যাটাররা আছেন, যদি আমাদের পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক এক্সিকিউট করতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় ভালো টেস্ট ম্যাচই হবে। দুইটা দলের জন্যই অনেক চ্যালেঞ্জ হবে। যে দলটা প্রতি সেশন ধরে ধরে ভালো ক্রিকেট খেলবে, সে দলটাই জিতবে। তবে অবশ্যই বাংলাদেশ দলকে একটু এগিয়ে রাখব।
ঘরের মাঠে স্পিনারদের ভূমিকা–
স্পিনারদের তো বাড়তি একটা ভূমিকা থাকবেই। এখানে সবসময়ই থাকবে আমরা অতীতে যা দেখেছি। বাড়তি কিছু আশা করছি না। আমাদের স্পিনাররা অতীতে যেমন বল করে এসেছেন, তেমনই বল করবেন, আমি চাইব যে প্রক্রিয়াটা যেন ঠিক থাকে। প্রত্যেকটা বল যেন আমি দলের জন্য করি। ওটাই যেন থাকে, বাড়তি কিছুই আমি স্পিনারদের কাছ থেকে চাই না। ২০ উইকেট আমরা কীভাবে নিতে পারি, সেটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। সেটা করতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
এই উইকেটে সাইড শট কেমন গুরুত্বপূর্ণ?
যদি স্পিন হয় উইকেটে, তাহলে অবশ্যই সাইড শট, সুইপ, রিভার্স সুইপটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি দেখেছি যে অনেকে সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হলে অনেক ধরনের কথা আসে, কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে এ ধরনের উইকেটে শটটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ওই ধরনের উইকেটে যে ধরনের শট খেলা দরকার, সেটা খেলে যদি ব্যাটাররা আউট হয়, আমার কোনো অসুবিধা নেই। খেলোয়াড়রা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে আমি আশা করব ওভাবেই ম্যাচটা খেলবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম জয়ের সুযোগ প্রসঙ্গে–
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কখনও জিতিনি। তবে আমার মনে হয় আমাদের সামনে এখন একটা বড় সুযোগ। আমাদের যে দল আছে, আমাদের নিজেদের মাঠে খেলা। অবশ্যই আমাদের যে দল আছে, আমরা মনে করি ওদের বিরুদ্ধে খুব ভালো ফলাফল আনা সম্ভব।
আমি বিশ্বাস করি জেতা উচিত। যদি আমরা ভালোভাবে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে পারি তাহলে আশা করি এবার আমরা মনে করি ফলাফলটা অন্যরকম হবে।
সরফরাজ, ব্রুকদের মতো মিডল অর্ডার ব্যাটার আসছে বাংলাদেশের?
ব্যাটার নেই, এমন না; ব্যাটার আছেন। তবে সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই, তারা অনেক অভিজ্ঞ। যে খেলোয়াড়রা আসবে, তাদের অনেক সময় দিতে হবে। এটা একটা প্রক্রিয়ার বিষয়। তবে আমি আশা করব যারা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলে, বিশেষ করে চার দিনের ক্রিকেটটা, এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যেভাবে চলে সে ইন্টেনসিটি নিয়ে যেন খেলে। খেলোয়াড়রা যেন নিজে থেকে ওই দায়িত্বটা নেয়। কারো কাছ থেকে যেন অপেক্ষা না করে যে কেউ আমাকে এসে বলে দিবে, বা এই ফ্যাসিলিটিজটা তৈরি করে দিবে। নিজে নিজেই করতে হবে।
টেস্টের ৫ দিন আগে কোচ পরিবর্তন প্রসঙ্গে
যেহেতু ৫ দিন আগে সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে, তবে আমি মনে করি যে এই কোচ যখন এসেছে, তিনি এই পর্যন্ত খুব বেশি পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত দেয়নি। নতুন মানুষ উনি, বোঝার চেষ্টা করছেন। তবে আমরা যারা খেলোয়াড়রা আছি, আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি জানি এই টেস্টে আমি কী করতে চাই। আমাদের দলটা কীভাবে খেলতে চাই। তো প্রত্যেকটা খেলোয়াড় তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানে। কোচকে আমি আমার পরিকল্পনাটা জানিয়েছি, তিনি একমত এই বিষয়ে। আমরা যেহেতু এই মাঠে অনেক ম্যাচ খেলেছি, খুব ভালো একটা অভিজ্ঞতা আছে। ওই অভিজ্ঞতাটাই কাজে লাগাব। আগের কোচ বা এখনকার কোচ এত কিছু মেলানোর প্রয়োজন আমি মনে করি না। এই মাঠে খেলার জন্য আমাদের খেলোয়াড়রা অনেক অভিজ্ঞ।
নতুন কোচ কেমন?
যেদিন তিনি এসেছেন, তিনি এসেই দলের সবার সঙ্গে দেখা করেছেন। আমার সঙ্গে বেশ কিছু আলাপ ইতোমধ্যেই হয়েছে। দলের পরিবেশ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন। এখন পর্যন্ত খুব ভালো। তবে এখনও খুবই নতুন। আমরা খুব ভালো জানি না তাকে। আশা করছি দুই এক টেস্টের মধ্যে অ্যাডজাস্টমেন্টটা হয়ে যাবে।
হাথুরু বিষয়ে–
বেশ কিছু ভালো সময়, খারাপ সময় ছিল। বেশ কিছু ম্যাচ জিতেছি, হেরেছি। তবে আমাদের সামনের দিকে দেখতে হবে। তো এখন আর পেছনে তাকিয়ে লাভ নেই। আমার মনে হয় আমরা সামনের টেস্ট কত ভালোভাবে খেলি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
সাকিবের ফেলে যাওয়া শূন্যস্থান কে পূরণ করতে পারে?
ম্যাচ করাটা ডিফিকাল্ট। এটা অধিনায়কের জন্যও কঠিন। উইকেট পরিবর্তন হয়তো হবে না। কারণ আমাদেরকে ওইভাবে প্ল্যান করতে হতো, বাড়তি ব্যাটার বা বোলার নিয়ে খেলতে পারতাম। এটা হবে না। তো ৭ নম্বরে যে ব্যাট করবে, তার ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই মুহূর্তে সাকিব ভাইয়ের মতো কোনো প্লেয়ার আমার মনে হয় না আছে। কিন্তু মিরাজ খুব ভালো বিকল্প হতে পারে। আমার মনে হয় টেস্ট ক্রিকেটে খুবই ভালো করছে ও, বোলিং ব্যাটিং দুইটাতেই। তবে আমার মনে হয় আরও উন্নতির জায়গা আছে। ও দায়িত্বটা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। শেষ কয়েকটা টেস্ট যদি দেখেন, মিরাজ খুব ভালো ব্যাট করছে, দলকে খুব ভালো অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস আগামী কয়েক বছরে মিরাজ ওই জায়গাটা ভালোভাবে নিতে পারবে।
মিরপুরের উইকেটে টস কেমন ফ্যাক্টর?
জয়ের জন্যই খেলব। মিরপুরের উইকেট যেমন হয়, তেমনই হতে পারে। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে পারব না। টসটা গুরুত্বপূর্ণ। এটাও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।