প্রথম দিন শেষে কথার খই ফোটালেন তাইজুল

প্রথম দিন শেষে কথার খই ফোটালেন তাইজুল

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দিনে বাংলাদেশ রীতিমতো কোণঠাসা। তবে এই দিনেও বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে এসেছেন তাইজুল ইসলাম। এরপর তিনি এলেন সংবাদ সম্মেলনে। কথা বললেন ব্যাটিং ব্যর্থতা, উইকেট, সাকিব আল হাসানের না থাকা সহ আরও অনেক বিষয়ে।

তাইজুলের সেসব কথা স্পোর্টস বাংলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো–

সাকিবের না থাকা–
সাকিব ভাই ছাড়া আমি খেলিনি তা তো না। উনি থাকাকালেও অনেক ম্যাচ সাকিব ভাই ছাড়া খেলেছি। নিউজিল্যান্ডে যখন টেস্ট জিতেছি সাকিব ভাই ছিল না। আমাদের এখানে যখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছি তখনও সাকিব ভাই ছিল না। এরকম অনেক উদাহরণ আছে। আপনি তো একটা প্লেয়ারকে ৫০ বছর খেলাতে পারবেন না। একজন আসবে একজন যাবে। ১০ বছর, ১৫ বছর, বড়জোর ২০ বছর। এটা মেনে নিতেই হবে। সন্দেহ নেই, উনি অনেক ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। আমরাও দোয়া করব, আপনারাও দোয়া করবেন উনার মতো যেন আরেকজন আসে এবং এখন যারা আছে তারাও যেন ভালো পারফর্ম করে।

সাকিবের আড়ালে থাকা–
আমাদের দেশে সত্যি বলতে অনেক কিছুই মুখে মুখে। বিষয়টা হলো- অনেকেই আছে খারাপ করেও ট্রল হতে হতে স্টার হয়ে গেছে। আবার অনেকে ভালো করেও স্টার হতে পারেনি। এরকম অনেক হয়েছে। এগুলো মেনে নিয়েছি। মেনে নেওয়া ছাড়া গতি নেই।

সাকিব থাকার সময় কি বঞ্চিত ছিলেন?
বঞ্চিত বলতে… আপনার প্রশ্নটা একটু কেমন যেন হয়ে গেল। বঞ্চিতর কিছু নেই। বিশ্বে অনেকে আছে, বড় খেলোয়াড় ছিল, তারা খেলার সময় অন্যরা সুযোগ কম পেত। মুরালিধরনের সময় হেরাথ খেলতে পারেনি। হেরাথ অনেক উইকেট পেয়েছে, দীর্ঘদিন খেলেছে। আমিও ইনশাআল্লাহ… সামনে দেখি ভালো কিছু হয় নাকি।

সাকিব না থাকায় একটু স্বস্তিতে আছেন?
সাকিব ভাই থাকলেও আমি সাকিব ভাইয়ের কারণে উইকেট পাই, সাকিব ভাই না থাকলেও সাকিব ভাইয়ের কারণে উইকেট পাই। বিষয়টা এরকম আরকি। খেলি তো আমি। আমার আক্ষেপের কিছু নেই। বড় বড় খেলোয়াড়ের সাথে খেলতে পেরে আমার ভালো লেগেছে। এটাও একটা আনন্দের বিষয়… তাদের সাথে অনেক কিছু শেয়ার করা, যাদের অভিজ্ঞতা আছে, তামিম ভাই সাকিব ভাই মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাইও ছিল। যারাই ছিল, আমাদের দেশে কতটুকু মূল্যায়ন করে জানি না। তবে ডিসকাশন করলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে অনেক কিছু নেওয়ার আছে। আমি ঐ জিনিসগুলো করার চেষ্টা করি আরকি। হয়ত আমি না নিতে পারলেও একজন জুনিয়রকে শেখাতে পারব। এজন্যও শিখে রাখাটা ভালো।

ভারত-পাকিস্তান সফরে সুযোগ পাননি। আরও বেশি সুযোগ পাওয়া দরকার ছিল?
ক্যারিয়ার যে খুব খারাপ আছে তাও বলব না। আলহামদুলিল্লাহ ক্যারিয়ার ভালো আছে। সব কন্ডিশনে সবসময় ৩ স্পিনার খেলাতে পারবেন না। অনেক জায়গায় ১ স্পিনার থাকে। এরকম হয়নি যেখানে ৩ স্পিনারের জায়গায় ১-২ জন খেলিয়েছে। কখনও দলে থাকা কখনও বাদ পড়া… আমার যতদিনের ক্যারিয়ার তাতে ম্যাচ আরও বেশি হওয়া উচিৎ ছিল। সে জায়গা থেকে হয়নি আরকি।

সাকিবের সঙ্গে আপনার তফাৎ?
এখানে অনেক ব্যাপার আছে। এটা প্লেয়িং কন্ডিশনের ব্যাপার। ২-৩ বছর বা ৪-৫ বছর পর আমি হয়ত দলকে সেভাবে সাপোর্ট নাও দিতে পারি। আমার ব্যাকআপ যে আছে, সে হয়ত বেশি রোল প্লে করবে। অনেক সময় ফ্ল্যাট উইকেট দিয়েছে, অনেক বল করা লাগবে, তখন হয়ত আমি বেশি বল করেছি সাকিব ভাই ঐ পরিমাণ এফোর্ট দিতে পারেনি। আবার দেখা গেছে কন্ডিশন আলাদা, অনেক স্পিন ধরছে, সাকিব ভাইয়ের যেহেতু অনেক ভ্যারিয়েশন ছিল সাকিব ভাই বেশি বল করেছে। এখানে রানের ব্যাপার থাকে, ডিফেন্সের ব্যাপার থাকে, কিছু ক্ষেত্রে অ্যাটাকের ব্যাপার থাকে। সব মিলে এ জিনিসগুলো ঘটে। পার্থক্য একটা জিনিস- আমি অনেক সময় ধরে বল করতে পারি। আমাকে যদি বলে টানা ১৫-২০ ওভার করতে, আমি করতে পারব। এরকম কিছু ব্যাপার থাকে।

সাকিবকে নিয়ে জুটি ছিল আপনার, রসায়ন ছিল… তার অবর্তমানে সঙ্গী কাকে চান?
সব তো আপনিই বলে দিয়েছেন, কখন কী ঘটে! একটা খেলোয়াড় সবসময় তো থাকবে না। বদলি আসবে, তার সাথেও পার্টনারশিপ হবে। ব্যাটারদের যেমন হয়, বোলারদেরও সেইম।

উইকেট প্রসঙ্গে–
যখন যেখানেই খেলতে যান, সবাই হোম এডভান্টেজ নিবে। তারপরও ভালো খেলা জরুরী। উইকেট যেমনই হোক আমরা সবসময় চাইব ভালো খেলতে। ভালো খেললে হয়ত ম্যাচটা আমাদের দিকেই থাকবে।

২০০ উইকেটের অনুভূতি–
অনুভূতি অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। বিশ্বে অনেক বোলারই আছে, ২০০-৩০০-৪০০ উইকেট। বাংলাদেশে আমরা এতদিন টেস্ট খেলি না। তাও যে ২-১ জন আছি তার মধ্যে আমিও একজন। গর্বের বিষয় না, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ দিয়েছে তাই হয়েছে।

বলেছিলেন ৩৫০-৪০০ উইকেট চান। ৫-৬ বছরে তা পারবেন?
আগে দেখতে হবে ৫ বছরে কয়টা টেস্ট আছে, তারপর একটা হিসাব করে উত্তর দিতে পারব। এখন উত্তর দেওয়া কঠিন। টেস্ট যদি থাকে ১০টা তাহলে তো কঠিন!

মিরপুরে ব্যাট-বলের ভারসাম্য–
একটা দল খারাপ খেললে ফেয়ার কোনোভাবেই হয় না, ভালো উইকেট দিন আর খারাপ উইকেট দিন। জিনিসটা ওরকম না। ভালো খেলা জরুরী। কন্ডিশন এদিক-ওদিক হতেই পারে। নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলে অবশ্যই আপনাকে লো উইকেট দিবে না। একদম ফ্ল্যাট উইকেট দিবে না। মুভমেন্ট থাকবেই। আমার কাছে মনে হয়, উইকেটের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। খেলায় হারজিত আছে। ভালো না খারাপ খেলছি আমার কাছে এটাই মুখ্য।

টেস্টের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে?
আমাদের সময় আসলে খালি সৌন্দর্য নষ্ট হয়। অন্যান্য সব দলই তো করছে। তখন তো সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে না। এটা সবাই নিবে। আমাকেও মেনে নিতে হবে, আপনাদেরও মেনে নিতে হবে।

কত রানে অলআউট করতে চান?
আজকে যেহেতু স্পিন করেছে, সামনে তো আরও স্পিন করবেই। এটাই স্বাভাবিক। চেষ্টা করব যত তাড়াতাড়ি ওদের আটকানো যায়। বড় পার্টনারশিপ হলে আমাদের জন্য খারাপ হবে। ইতোমধ্যে লিড পেয়েছে। যত তাড়াতাড়ি অলআউট করা যায়, তাতে ম্যাচ আমাদের হাতে থাকবে। তবে বড় পার্টনারশিপ হয়ে গেলে আমাদের জন্য কঠিন হবে।

ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে–
কমতি আছে কি না, ব্যাটারদের ঘাটতি আছে কি না এটা কোচ ভালো বলতে পারবে, বা যারা কাজ করে। এটা আমার পার্ট না। তবে রান কমই হয়েছে সত্যি বলতে। ২০০, ২২০ বা ২৫০ করলে ম্যাচ আমাদের হাতে থাকত। এখনও আছে, তবে আমাদের আরও ভালো করতে হবে। ঘাটতি বলতে, ইনশাআল্লাহ পরের ইনিংসে ব্যাটাররা ভালো করে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবে। ২০০-২৫০ রান হলে খুবই ভালো অবস্থানে থাকতাম।

টেল এন্ডার ব্যাটিং প্রসঙ্গে–
এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ৮, ৯, ১০, ১১ থেকে যদি ৫০-৬০ রানও আসে। আমরা চেষ্টা করছি। প্রত্যেক বোলার প্রতিদিন ব্যাটিং অনুশীলন করছে। সেই মাইন্ডসেটআপ থেকেই আমরা চেষ্টা করি যতটা সম্ভব সহায়তা করার। ঐ চেষ্টাই থাকবে এই ৪ জন যেন ৬০-৭০ যতই হোক অবদান রাখতে পারি।

সম্পর্কিত খবর