ভঙ্গুর ব্যাটিংয়ে নড়বড়ে বাংলাদেশ বড় দুশ্চিন্তায়
দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুর তিন উইকেট নিতে বাংলাদেশের পুরো একটা দিন সময় লেগে যায়। আর বাংলাদেশের শুরুর চার উইকেটের পতন হলো মাত্র সপ্তম ওভারে দলে রান তখন মাত্র ৩২। দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের প্রথম ৩ উইকেট হারিয়েছিল ৯৮.২ ওভারে এসে, তাও যখন রান ছিল ৩৮৬!
এই হিসেবই জানান দিচ্ছে আরেকটি অসম লড়াই হতে চলেছে চট্টগ্রাম টেস্টেও। যে লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা অপেক্ষায় বড় জয়ের। আর বাংলাদেশ একরাশ মলিন মুখে আরেকটি বড় হারের দুশ্চিন্তায়।
চট্টগ্রাম টেস্টের মাত্র দ্বিতীয়দিনের খেলা শেষ হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে মাত্র ৯ ওভার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। সামান্য সেই সময়ের মধ্যেই একটা বিষয় প্রায় পরিস্কার- যথারীতি এই টেস্টও একতরফা ভঙ্গিতে হারছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় দিন শেষে স্কোরবোর্ড জানাচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা!
তিন সেঞ্চুরির উৎসবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে পাহাড়সম ৫৭৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা দেয়। চা বিরতির খানিকবাদেই মুল্ডারের সেঞ্চুরি পুরো হতেই ইনিংস ঘোষণার ইঙ্গিত দেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক মার্করাম। যে উইকেটে পেছনের দেড়দিনেরও বেশি সময় ধরে রান ও সেঞ্চুরির আনন্দে ভেসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, সেই উইকেটে মাত্র ৯ ওভার ব্যাট করতেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়লো যেন! আলোর স্বল্পতার জন্য দ্বিতীয়দিনের খেলা নির্ধারিত সময়ের একটু আগেভাগে শেষ হওয়ায় যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে বাংলাদেশ, ক্ষতি আর বাড়লো না!
প্রথমদিনের মতো দ্বিতীয়দিনও দক্ষিণ আফ্রিকা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের পুরো সুবিধা কাজে লাগায়। আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান টনি ডি জর্জি যেভাবে খেলছিলেন তাতে ডাবল সেঞ্চুরিটা তার প্রাপ্য ছিল। কিন্তু তাইজুলের ঘুর্ণিতে ১৭৭ রানে থামতে হলো তাকে। বেডিংহ্যাম ফিরেন হাফসেঞ্চুরি শেষে। এই দুজনের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব নেন উইয়ান মুল্ডার ও সেনুরান মুথুসামী। মুল্ডার ঢাকায় সেঞ্চুরির সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। চট্টগ্রামে ভুললেন সেই দুঃখ। ক্যারিয়ারের ১৬তম টেস্টে এসে পেলেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। মুথুসামী ৭৫ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
ঢাকা টেস্টের মতো চট্টগ্রামেও বাংলাদেশের বোলিংয়ে ছিলেন ঐ একজনই-তাইজুল ইসলাম। দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুর পাঁচ উইকেটের সবগুলোই তার। ম্যারাথন স্পেলের বোলিং করেন তাইজুল এই ইনিংসে। ৫২.২ ওভারে ১৯৮ রান খরচায় পান ৫ উইকেট। ইনিংসে এটি তার ১৪বারের মতো পাঁচ বা তার চেয়ে বেশি উইকেট শিকারের ঘটনা।
শেষ বিকেলে ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ যে ব্যাটিং করলো তা দেখে মনে হচ্ছিল শতছিদ্র ছাতা দিয়ে ঝড়ো বৃষ্টি ঠেকানোর চেষ্টা! সাদমান লেগসাইডের গ্লান্স করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। জাকির হাসানের ব্যাটে পরিস্কার স্নিক। আম্পায়ার আঙ্গুল তুললেন। কিন্তু কি আশ্চর্য সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করলেন জাকির হাসান। রিপ্লেতে পরিস্কার দেখা গেল বল তার ব্যাটে লেগেছে। জাকির আউট হলেন সেই সঙ্গে একটা রিভিউও নষ্ট করলেন!
-কেন করলেন?
নিশ্চয়ই কোচ এবং অধিনায়ক তাকে এই প্রশ্নটা করবেন। মাহমুদুল হাসান জয়ের এখনো টেস্ট ব্যাটিংয়ের অনেক স্কিল শেখা বাকি। বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে যে ভঙ্গিতে তিনি আউট হলেন সেই শট টেস্টে না ওয়ানডেতে খেলে। চারজন ফিল্ডার স্লিপে দাড়িয়ে থাকলে শুরুর ব্যাটার কেন এমন শট খেলবেন?
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নিজে ব্যাটিংয়ে না এসে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে পাঠালেন হাসান মাহমুদকে। বেচারা হাসান স্পিনার মহারাজের স্পিনে আরো গোবেচারা ভঙ্গিতে বোল্ড হলেন। ‘দ্বিতীয় নাইটওয়াচম্যান’ পাঠানোর ভুল আর করলো না বাংলাদেশ। শান্ত ও মুমিনুলের ব্যাটে দিনের বাকি সময়টা কাটিয়ে এল দল।
দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ব্যাটিং করতে না পারলে তৃতীয়দিনই বাংলাদেশকে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে হতে পারে। আশঙ্কাটা ঝুলছে ঘাড়ে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয়দিন শেষে): দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিঃ ৫৭৫/৬ ডিক্লে (মার্করাম ৩৩, জর্জি ১৭৭, স্ট্যাবস ১০৬, মুল্ডার ১০৫*, বেডিংহ্যাম ৫৯, মুথুসামী ৬৮*, তাইজুল ৫/১৯৮)। বাংলাদেশ ১ম ইনিঃ ৩২/৪ (৯ ওভারে, সাদমান ০, জয় ১০, জাকির ২, হাসান মাহমুদ ৩, শান্ত ৪*, মুমিনুল ৬*, রাবাদা ২/৮)।