আফগানদের উড়িয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ
২৫৩ রান তাড়া করতে নেমে আফগানিস্তান শুরু থেকেই চাপে ছিল। সে চাপটা তাদের কখনোই সরাতে দেয়নি বাংলাদেশ। শেষমেশ তাদের ১৮৪ রানে অলআউট করে ৬৮ রানের জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। তাতে সিরিজে ১-১ সমতা ফিরল এখন।
ওদিকে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে যা করেছে, তার পুরোপুরি উল্টোটা করার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল আজ। আগের ম্যাচে ১২০ রানে ২ উইকেট থেকে ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে ৯২ রানে ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। আজ আর যাই হোক, অমন কিছু হতে দেওয়া চলবে না, এমনই লক্ষ্য ছিল দলের।
১৭ বলে ২২ রান করা তানজিদ তামিমকে হারালেও বাংলাদেশ শুরুটা ভালো করে। এরপর সৌম্য সরকার আর নাজমুল হোসেন শান্ত পরিস্থিতিটা সামলান ৭১ রানের জুটিতে। শুরুর পঞ্চাশ রান ৫০ বলে এলেও এরপর থেকেই রানের গতি কমে আসতে শুরু করে।
ক্ষণিকের সিদ্ধান্তহীনতায় রিভিউ না নিয়ে এলবিডব্লিউর শিকার বনেন সৌম্য। এরপর রশিদ খানের গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে উইকেট খোয়ান মেহেদি হাসান মিরাজ। আফগান স্পিনাররা একটু একটু করে চেপে ধরতে থাকেন বাংলাদেশকে।
তার চাপে পড়ে ওপাশে তাওহীদ হৃদয়কে উইকেট খোয়াতে দেখেন শান্ত। তবে এপাশে তিনি রীতিমতো উইকেট আঁকড়ে পড়ে ছিলেন। আর তাতেই বড় কোনো ধস নামেনি বাংলাদেশ ইনিংসে।
সে শঙ্কাটা পেয়ে বসল শেষ পাওয়ারপ্লেতে পা রাখার পর। শান্ত ৪১তম ওভারে খারোতেকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দেন লং অফে। এর এক বল পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও একই পথ ধরলেন, ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিলেন। এক ওভারে ১ রানে ২ উইকেট নেই হয়ে গিয়েছিল দলের।
১৮৪/৬ থেকে বাংলাদেশ শেষমেশ ২৫২ তে পৌঁছেছে নাসুম আহমেদ আর জাকের আলির ব্যাটে চড়ে। শেষ দিকে দুজনে ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। সপ্তম উইকেটে যোগ করেছেন ৪৬ রান, তাও মাত্র ৪১ বলে। ওপেনিংয়ের পর থেকে এই জুটি পর্যন্ত বাংলাদেশ আজ ১০০ স্ট্রাইকরেটের জুটি দেখেনি একটাও।
২৪ বলে ২৫ রান করে নাসুম ফিরেছেন বটে, তবে জাকের ছিলেন শেষ পর্যন্ত। একবার জীবন পেয়েছেন, একবার কনকাশনের হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। তবে আজই প্রথম ওয়ানডে অভিষেক হওয়া জাকের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে উঠে এসেছেন ২৭ বলে ৩৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে। আর তাতেই এক পর্যায়ে ২২০ কেও দূর আকাশের তারা মনে হতে থাকা বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা পড়ে ২৫২ রানের পুঁজি।
এ পুঁজি যে যথেষ্ট, সেটা শুরু থেকেই বোলাররা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন একটু পরপর। আফগানদের চাপে রেখে উইকেট আদায় করছিলেন তাসকিন আহমেদরা। শুরুর উইকেটটা তার মাধ্যমেই পায় বাংলাদেশ। তিনি বিদায় করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। এরপরও ছোট একটা জুটি গড়ে ওঠে, নিজের স্পেলের প্রথম বলেই সেদিকউল্লাহ আতালকে ফিরিয়ে তা ভাঙেন নাসুম আহমেদ।
এরপর আবার রহমত শাহ আর হাশমতউল্লাহ শহিদির জুটি দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। সেটা ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার শর্ট বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ দেন আফগান অধিনায়ক শহিদি। ৪৮ রানের জুটিটা ভাঙে তাতে। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে নাসুম আহমেদ বোল্ড করেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে।
৩ বলে ২ উইকেট তুলে নিয়ে আফগানদের চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশ। সেই চাপ থেকেই কি-না পরের ভুলটা করল স্বাগতিকরা। শুরুতে একটা 'জীবন' পেয়ে রহমত ফিফটি করে ফেলেছিলেন। তাতে শঙ্কাও বাড়ছিল বৈকি! চাপে পড়ে ভুল করে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারকে হারায় আফগানরা।
নাসুমের বল পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে একটা রান বের করতে চেয়েছিলেন গুলবাদিন নাইব। তবে বদলি ফিল্ডার রিশাদ হোসেনের হাতে থাকায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান তিনি। ততক্ষণে নন স্ট্রাইকে থাকা রহমত শাহ পৌঁছে গেছেন স্ট্রাইক প্রান্তে।
দুই ব্যাটার এক প্রান্তে চলে যাওয়ার সুযোগ নিতে ভুল করেনি বাংলাদেশ। রিশাদ থেকে বলটা জাকেরের হাতে গেলেও এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি বলটা বাড়ান স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা নাসুমকে। ততক্ষণে রহমত ওপাশে হাল ছেড়েই দিয়েছেন। নাসুম স্টাম্প ভাঙলে ৭৬ বলে ৫২ রানের ইনিংস শেষ হয় রহমতের। ৫ বল আর ১ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট খুইয়ে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে আফগানিস্তান।
এরপরও আবারও মোহাম্মদ নবি আর গুলবাদিন নাইবের ব্যাটে চড়ে ম্যাচটা ছিনিয়ে নেওয়ার চোখরাঙানিও দিচ্ছিল আফগানরা। অনেকটা ধারার বিপরীতে শরিফুল ফেরান গুলবাদিনকে। ম্যাচটা তখনই বাংলাদেশের দিকে হেলে পড়ে। একটু পর মেহেদি হাসান মিরাজ বোল্ড করেন নবিকে।
তাদের বিদায়ের পর রশিদ খান চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তবে তাও যথেষ্ট হয়নি। ওপাশে মিরাজের বলে স্টাম্পড হতে দেখেন সঙ্গী নাঙ্গেলিয়া খারোতেকে। একটু পর মুস্তাফিজের কাটারে ব্যাট চালিয়ে তিনি নিজেও ক্যাচ দেন লং অফে। শেষে নাসুম আহমেদ বোল্ড করে বসেন মোহাম্মদ গজানফরকে। তাতেই ৬৮ রানের জয় দিয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরায় বাংলাদেশ।