২২ বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিতল পাকিস্তান
বাবর আজম চার মেরে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলেন। এরপর মিনিট দশেক পেরিয়ে গেলেও পার্থের অপটাস স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের ল্যাপ অফ অনার শেষই হচ্ছিল না যেন!
এমন না হয়ে উপায় আছে? বছরটা কি বাজেভাবেই না কাটছিল দলটার, সে বছরের শেষ দিকে এসে ধরা দিল এমন এক জয়, যা অনেক রথী মহারথীদের নিয়ে গড়া পাকিস্তান দলও অর্জন করতে পারেনি; অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জয়, তাও আবার প্রথম ম্যাচে হেরে গিয়ে। মোহাম্মদ রিজওয়ানের পাকিস্তান আজ সেটাই করে দেখাল।
অস্ট্রেলিয়াকে ১৪০ রানে বেধে রেখে বোলাররা তাদের কাজ সেরে রেখেছিলেন আগেই। এরপর ব্যাটাররা দিলেন শেষ তুলির আঁচড়, তাতে পাকিস্তান ৮ উইকেটে সিরিজ জিতে নিল। ২০০২ সালের পর এই প্রথম ডাউন আন্ডারে সিরিজ জয়ের স্বাদ নিল দলটা।
অনেক দিক থেকে এমন এক জয় পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল। দলের পরিস্থিতিটা ভালো ছিল না। বারবার অধিনায়ক বদল, মাঠের বাইরের সব গুঞ্জন, মাঠে বাজে পারফর্ম্যান্স… একটা দলের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল এমন সব ঘটনা।
তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ হয় ছিল দলটার পেস আক্রমণের জন্য। শাহিন আফ্রিদির নেতৃত্বে দলের পেস আক্রমণ বহু দিন ধরেই নিজেদের ছায়া হয়ে ছিল। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে ২০২৩ এশিয়া কাপের পর থেকেই। দেয়াল থেকে পিঠ সরাতে তাদের পারফর্ম করা জরুরি ছিল।
আজ তারা সেটা করে দেখালেন। সবকটা উইকেট পেসাররাই ভাগাভাগি করে নিলেন। মাঝে কুপার কনোলি আহত অবসর না হলে হয়তো তিনি পেসারদের কারো শিকারই বনতেন।
অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে শুধু পেসারদের দিয়ে বোলিং করিয়েই প্রতিপক্ষকে শেষ করে দেবেন, মোহাম্মদ রিজওয়ান এমন কৌশল নিয়েই নেমেছিলেন। না হলে ওভার রেটে ২৩ মিনিট পিছিয়ে থেকে, ৩২ ওভার পেরিয়ে গেলেও কেন স্পিনার আক্রমণে আনেননি তিনি?
কৌশলটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে পেসাররা সে ঝুঁকিটা নেই করে দিলেন একেবারে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ওপর থেকে চাপটা সরে যেতে দেননি। স্বাগতিকরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খুইয়েছে। কোনো ব্যাটারকেই থিতু হওয়ার সুযোগ দেয়নি পাকিস্তান।
দলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা পেসার শন অ্যাবটের, ৩০ করেছেন তিনি। তাতেই বুঝা যাচ্ছে, ব্যাটাররা কেমন হাঁসফাঁস করেছেন আজ! শীর্ষ ৬ ব্যাটারের মধ্যে দুই অঙ্কে গেছেন মোটে দুজন– ম্যাথিউ শর্ট (২২) আর অ্যারন হার্ডি (১২)।
শাহিন আফ্রিদি আর নাসিম শাহ ৩টি, মোহাম্মদ হাসনাইন ১ আর হারিস রউফ নিয়েছেন ২টি উইকেট। তাতেই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনাশ হয়ে গেছে পার্থে। আর পাকিস্তান এসে দাঁড়ায় প্রায় ঐতিহাসিক সিরিজ জয় থেকে ১৪১ রানের দূরত্বে।
এমন পরিস্থিতি থেকে পাকিস্তানকে কোনো ভুলচুক করতে দেননি দুই ওপেনার সাইম আইয়ুব আর আব্দুল্লাহ শফিক। এদিন ভাগ্যও যেন পাকিস্তানেরই সঙ্গে ছিল। আব্দুল্লাহ শফিক নিশ্চিত রানআউটের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন একবার। তার তুলে দেওয়া ক্যাচও একবার ছেড়েছে অজিরা। সাইমও একই রকমভাবে আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন।
ইনিংসের ১৮তম ওভারে ৪ বলের এদিক ওদিকে আব্দুল্লাহ শফিক আর সাইম আইয়ুবকে ফেরান লান্স মরিস। তবে তাতে পাকিস্তানের জয় আটকানো যায়নি। তিন আর চারে নামা বাবর আর রিজওয়ান মিলে ৫৩ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলে তবেই ক্ষান্ত হন।