মিরাজ-রিয়াদের ব্যাটে চড়ে লড়াইয়ের পুঁজি বাংলাদেশের
দারুণ শুরুর পর ১৯ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট খুইয়ে বাংলাদেশ প্রমাদ গুণছিল আরেকটা ধসের। তবে সেটা শেষমেশ হতে দেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনের ফিফটিতে ভর করে বাংলাদেশ ৮ উইকেট খুইয়ে তুলে নিয়েছে ২৪৪ রানের পুঁজি।
শারজায় আগের দুই ম্যাচে টস জেতা দল নিয়েছিল ব্যাট করার সিদ্ধান্ত, তারাই শেষমেশ বিজয়ীর হাসিটা হেসেছে। চোটের কারণে ছিটকে যাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তর জায়গায় বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করতে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ আজ টসে জিতলেন, তিনিও ব্যাট করার সিদ্ধান্তই নিলেন।
শুরুটা দারুণই হয়েছিল বাংলাদেশের। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম মিলে বিরলপ্রায় ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি এনে দেন দলকে। শেষ দশ ওয়ানডেতে এটা দলের মাত্র তৃতীয় অর্ধশতকের জুটি, বুঝুন তাহলে!
এ জুটি নিষ্কলুষ ছিল না মোটেও। তানজিদ তামিম দুবার ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে ফিরেছিলেন। সৌম্য অবশ্য নিখুঁতই খেলছিলেন, আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে বোল্ড হওয়ার আগ পর্যন্ত।
নবম ওভারের তৃতীয় বলে তিনি বোল্ড হলেন যেই না, সঙ্গে সঙ্গে যেন সব বাঁধ ভেঙে গেল। চোখের পলকে আরও তিনটি উইকেট খুইয়ে বসল বাংলাদেশ। জোড়া ‘জীবন’ পাওয়া তামিম তার উইকেটের মূল্য বোঝেননি, একটু পরই বিদায় নেন মোহাম্মদ নবীর বলে হাশমতউল্লাহ শহিদিকে ক্যাচ দিয়ে।
পরের উইকেটটা জাকির হাসানের। মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে তিনি রান আউট হন। কিছুক্ষণ পর রশিদ খানের শিকার বনেন তাওহীদ হৃদয়। বাংলাদেশ ৭২ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে পড়ে যায় ঘোর বিপাকে।
সে অবস্থায় আর একটা উইকেট বাংলাদেশকে ঠেলে দিতে পারত খাদের কিনারে। ডাক আউটে যে তখন স্রেফ অনভিজ্ঞ জাকের আলিই আছেন ‘স্বীকৃত’ ব্যাটার! সঙ্গে প্রথম ম্যাচের ওই ধসের দুঃস্মৃতিও তো সঙ্গী ছিল দলের!
তবে তেমন কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেননি মিরাজ আর রিয়াদ। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ধস তো সামাল দেনই, সঙ্গে বাংলাদেশকেও ভদ্রস্থ একটা স্কোর এনে দেন। শুরু থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। ওদিকে মিরাজ খোলসে ঢুকে ছিলেন, একপাশ আগলে রাখার দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
দুজনের এই চরিত্র এ জুটির শেষ পর্যন্ত বদলায়নি। মিরাজ একটু বেশিই রক্ষণাত্মক ছিলেন কি না, থিতু হয়ে যাওয়ার পর আরও আগে কি হাত খোলা যেত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তিনি ফিফটিটা ছুঁয়েছেন ১০৬ বল খেলে, ২০০৫ সালের পর এত ধীরগতির ফিফটি ওয়ানডেতে আর দেখেনি বাংলাদেশ। শেষমেশ যখন তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরছেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের শিকার হয়ে, তখন তার নামের পাশে রান ছিল ৬৬, বল খেলে ফেলেছিলেন ১১৯টি।
ওদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মাঝে একটু খোলসে ঢুকে গেলেও শেষ দিকে এসে রানের গতি বাড়িয়েছেন। শেষ দশ ওভারে যে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৭৮ রান যোগ হয়েছে, তা তার কল্যাণেই।
দুজনের এই জুটি ১৪৫ রান এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। আগের ম্যাচে নাসুম আহমেদ আর জাকের আলিরা দারুণ লড়েছিলেন শেষ দিকে। আজ তা পারলেন না। তাই আশা জাগিয়েও ২৫০ রানের মাইলফলক ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। থেমেছে তার চেয়ে ৬ রান আগেই।
তবে খানিকটা আফসোস হওয়ার কথা মাহমুদউল্লাহর। দারুণ এই ইনিংসটা শেষমেশ তিন অঙ্কে রূপ দেওয়া হয়নি তার। ইনিংস শেষ করেছেন ৯৮ রানে, ২ রানের আক্ষেপ নিয়ে। তবে দলকে ততক্ষণে ঠিকই পৌঁছে দেওয়া হয়ে গেছে ভদ্রস্থ একটা জায়গায়।