প্রতিকূলতা জয় করে মাহমুদউল্লাহর লড়াকু ৯৮
শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। ডিপ স্কয়ার লেগে বলটা যখন ফিল্ডারকে খুঁজে পেল, তখন তার সামনে সে প্রয়োজনীয় তিন রানের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, তিনি তবু দুটো রানের জন্য দৌড়ালেন। শেষ রক্ষা হলো না। দ্বিতীয় রান নেওয়ার আগেই নিখুঁত একটা থ্রো এল রহমানউল্লাহ গুরবাজের হাতে, স্টাম্প ভেঙে দিলেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের লড়াকু ইনিংসটা শেষ হলো তিন অঙ্ক থেকে ২ রানের দূরত্বে, ৯৮ রানে বিদায় নিলেন তিনি।
তবে এই ইনিংসটা মোটেও সহজে আসেনি। শেষ কিছু দিন ধরে ফর্মটাও তার পক্ষে কথা বলছিল না। সবশেষ ফিফটিটা এসেছিল গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। এরপর থেকে ৭ ইনিংসে ৪০ পেরোনো ইনিংস ছিল না একটাও। শেষ চার ওয়ানডে ইনিংসে তার ফর্মটা রীতিমতো মারিয়ানা ট্রেঞ্চে নেমে গিয়েছিল। এ সময় রান ছিল যথাক্রমে ০, ১, ২, ৩।
শারজার তীব্র গরমে লম্বা ইনিংস খেলার ঝক্কি কেমন, তা নাজমুল হোসেন শান্তর দিকে তাকালেই বুঝা যাচ্ছে; আগের ম্যাচে ১১৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংসের সময় পাওয়া ক্র্যাম্প, এরপরও ফিল্ডিংয়ের সময় কুঁচকির চোট তাকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ‘ফাইনাল’ থেকে ছিটকে দিয়েছে আগেই।
মাহমুদউল্লাহও প্রায় একই রকমের ক্র্যাম্পে পড়লেন আজ। সেটা আবার ইনিংসের গোড়ার দিকেই। শেষ দিকে এক একটা রান নিতেও রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছিল তাকে। মাহমুদউল্লাহর এই ইনিংস এসেছে এমন চোট সামলে।
এমন বিরুদ্ধ পরিস্থিতিকে বুড়ো আঙুল দেখানো তার ‘বাঁ হাতের খেল’। দল থেকে বাদ পড়ার পর গেল বছর যেভাবে নিজেকে নিয়ে কাজ করে দলে ফিরেছেন তিনি, তা গোটা বাংলাদেশ ক্রিকেটেই বিরল। তেমন প্রতিকূলতাকে জয়ের পর আর সব প্রতিকূলতাকে ছোট মনে হওয়ার কথা তার কাছে, রিয়াদও নিশ্চয়ই সেটা টের পান হরহামেশাই!
আজও হয়তো পেয়েছেন। ৭২ রানে ৪ উইকেট, পরিস্থিতিটাকে ঠিক বুঝানো যাচ্ছে না এই স্কোরলাইন দিয়ে। বাংলাদেশ ওই ৪ উইকেট খুইয়েছে ১৯ রানের এদিক ওদিকে। সেখান থেকে পুনঃনির্মাণের দায় ছিল দলের ইনিংসটাকে। এরপর সেটাকে ভদ্রস্থ রূপ দেওয়ার দায়িত্বও ছিল। মাহমুদউল্লাহ তার সবটুকু পালন করে তবেই মাঠ ছেড়েছেন।
ওপাশে মেহেদি হাসান মিরাজ রীতিমতো খোলসে ঢুকে পড়েছিলেন। রান করছিলেন পঞ্চাশেরও কম স্ট্রাইক রেটে। সঙ্গীর এভাবে খোলসে ঢুকে পড়া অনেক সময়ই ওপাশে থাকা সঙ্গীকে প্রভাবিত করে বাজেভাবে, উল্টোপাল্টা শট খেলে আউট হওয়ার প্রবণতা তৈরি করে দেয়। তবে মিরাজের ওভাবে খোলসে ঢুকে পড়া রিয়াদকে আজ নড়াতে পারেনি।
শুরু থেকে তিনি খেলছিলেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। ফিফটির কাছাকাছি এসে নিজেও একটু খোলসে ঢুকে পড়েছিলেন। ৪০ ওভার যখন পেরোচ্ছে, তখন তার রান ৫১, বল খেলেছেন ৬৪টি।
স্লগ ওভার আসতেই নতুন রূপ দেখালেন রিয়াদ। বাউন্ডারি তো বটেই, ক্র্যাম্প নিয়ে দৌড়েছেন সিঙ্গেলস ডাবলসের জন্য। শেষ দশ ওভারে ৪৭ রান যোগ করেছেন দলের স্কোরবোর্ডে, বল খেলেছেন মোটে ৩৪টি। এই সময় দল তুলেছে ৭৮ রান, তাতেই পরিষ্কার তার এই ইনিংসের মাহাত্ম্য!
শেষমেশ তিনি সেঞ্চুরিটা হয়তো পাননি, কিন্তু মাঠ ছেড়েছেন নিজের দায়িত্বটা পুরো করে আসার তৃপ্তি নিয়ে। তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটা ১২৮ রানের। এই ইনিংসটা শেষ হয়েছে তারও ৩০ রান আগে। তবে যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই ইনিংস খেলেছেন, তাতে এটা তার ক্যারিয়ার-সেরা হওয়ার দাবি তুলে তবেই শেষ হলো।