বাবা-স্ত্রী ছাড়াও বিদায় বেলায় যাদের মনে করলেন ইমরুল

বাবা-স্ত্রী ছাড়াও বিদায় বেলায় যাদের মনে করলেন ইমরুল

দুইদিন আগেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নিজের শেষ চারদিনের ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবেন ইমরুল কায়েস। জাতীয় লিগে খুলনা বিভাগের হয়ে নিজের সবশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচটি খেলবেন এই ব্যাটার।

সেই ২০১৯ সালে ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিপক্ষে দিবারাত্রির টেস্ট ক্রিকেট খেলেন ইমরুল। এরপর থেকেই জাতীয় দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েন তিনি। পাঁচ বছর অপেক্ষা শেষে এবার সরেই যাচ্ছেন সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে।

শনিবার নিজের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচটি খেলবেন তিনি। তার আগে আজ শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে দীর্ঘ কথা লিখে আবেগ প্রকাশ করেন ইমরুল কায়েস। যেখানে ওঠে এসেছে যারা তার ক্যারিয়ারে অবদান রেখেছেন তাদের কথা। অনেকটা আবেগীও হয়ে পড়েছেন ইমরুল বিদায় বেলায়।

ইমরুল কায়েসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লেখা সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো স্পোর্টস বাংলার পাঠকদের জন্য।

বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে একটা বিষয় জানাতে চাই – কালকে ১৬ তারিখ আমি আমার ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট এবং টেস্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি করতে যাচ্ছি। এটা আমার লাইফের গত ১৭ বছরের সবচেয়ে কঠিন এবং আবেগের মুহূর্ত।

টেস্ট ক্রিকেট সবসময় আমার জন্য স্পেশাল ছিলো। আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করার পর থেকেই, নিজের দেশের হয়ে টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখতাম।

আর এই স্বপ্নটা দেখার জন্য যে মানুষটা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা এবং সাহস যুগিয়েছিলেন, সেই মানুষটা আজ আমার পাশে নাই! আমার থেকে অনেক দূরে আজ!

সে মানুষটা না থাকলে হয়তো আমার ক্রিকেটার, কিংবা আজকের ইমরুল কায়েস হয়ে ওঠা হতো না। সেই মানুষটা আমার লাইফের সবচেয়ে স্পেশাল মানুষ, আমার বাবা! আমার বাবা সবসময় বলতো, “যেদিন তুমি লর্ডস এ খেলবা, আর ব্যাট উঠাবা দর্শকদের দিকে, সেইদিন আমি হবো সবচেয়ে Happy মানুষ!” মেহেরপুরে, আমার যখন মাত্র ৬-৭ বছর বয়স, তখন বাবা আমাকে একটা ক্রকেট ব্যাট বানিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর তিনি বল করতেন, আমি ব্যাট করতাম।

আমি সবসময় চেষ্টা করেছি, ক্রিকেটটাকে আমার বাবার আদর্শ আর Honesty ‘র জালে ঘিরে রাখার। আমার টেস্ট ক্রিকেটের এই বিদায়বেলায় বাবা থাকলে হয়তো কিছুটা হলেও আমার আবেগ তার সাথে শেয়ার করতে পারতাম। আজ বাবা নেই কিন্তু বাবার স্বপ্ন পূরণ করে “মেহেরপুরের ইমরুল” থেকে “বাংলাদেশের ইমরুল কায়েস” হয়ে উঠতে যারা আমাকে ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, সেই “বাংলাদেশের মানুষ”, সেই “আপনারা” আজ আমার সাথে আছেন! কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, আমার দেশের এবং দেশের বাইরের সেই মানুষদের প্রতি, যাদের সাপোর্ট এবং ভালোবাসা আমাকে ভালো খেলার সাহস ও শক্তি যুগিয়েছে বারবার।

আমি দেশের জন্য ক্রিকেট খেলাটাকে সবসময় সম্মান এবং ভালোবাসার মনে করেছি। আমি চেষ্টা করেছি, আমার সবটুকু দিয়ে। কখনো সফল হয়েছি, কখনো ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু সবসময় খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছি, যেন আমার পক্ষ থেকে চেষ্টার কোন কমতি না হয়।
আমার দেশের হয়ে আরও অনেক কিছু দেবার ইচ্ছা ছিলো।

কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষিতে, আমি চাই আমার ইচ্ছার বাকিটুকু নতুন প্রজন্মের ছেলেরা করুক, ইনশাআল্লাহ। তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ একদিন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে অনেক বেশি সম্মান বয়ে আনুক, বিশ্ব জয় করুক বাংলাদেশ! এই বিদায়বেলায়, আমি কিছু মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এবং কিছু মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই ~ প্রথমে আমার কোচ জামিলুর রহমান সাদ ভাইকে।

এবং আরও ধন্যবাদ দিতে চাই – শামসুল ভাই, এহসান স্যার, হুমায়ুন চাচা, খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই, কোচ বাবুল ভাই, কোচ সালাউদ্দিন স্যার, ফাহিম স্যার, BCB’র সকল গ্রাউন্ড এর মাঠকর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, আম্পায়ার্স, ম্যাচ রেফারি, সাপোর্টিং স্টাফ সহ আমার এই পথযাত্রায় অবদান রাখা প্রত্যেকটা মানুষকে!

আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই – খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা ও মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা কে। মেহেরপুর থেকে রাজশাহী, তারপর লাল-সবুজ জার্সি গায়ে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জার্নিতে আমাকে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট করেছে – BCB। অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা, BCB কে।

আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই – বাংলাদেশের সকল ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া কে, যাদের মাধ্যমে আমার খেলার তথ্য, আমার কথা পৌঁছে গেছে আপনাদের কাছে। আমার wife – আমার ভালো, খারাপ সময়গুলোকে অনেক সহজ করে দিয়েছিলো। সেজন্য হয়তো অনেক কঠিন সময়ে আমি আবার ঘুরে দাঁড়াবার সাহস ও শক্তি পেয়েছিলাম। আমার মা, যে মানুষটার দোয়া এবং ভালোবাসায় আমি “আজকের ইমরুল কায়েস” হতে পেরেছি।

তবে হ্যাঁ, আমি শুধু টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমি ODI এবং T20 ক্রিকেট আরও কয়েক বছর continue করতে চাই, Specially BPL এবং DPL খেলতে চাই।

আমি আশা করি, BCB আমার ইচ্ছাটাকে সম্মান দিবে এবং সম্মত হবে। যদি কখনো আবার সুযোগ হয়, আপনাদের এই ভালোবাসা নিয়েই আমি দেশের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য ভিন্ন পেশা নিয়ে কাজ করতে চাই।

১৬ তারিখ, মিরপুর স্টেডিয়ামে, খেলাশেষে কিছু মুহূর্ত কাটাতে চাই আপনাদের সাথে, যাদের ভালোবাসায় ভর করে এগিয়ে গেছে আমার পুরো জার্নিটা। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। ১৬ তারিখ, খেলাশেষে দেখা হবে। আর দেখা হবে, ক্রিকেটের বিজয়ে! বাংলাদেশের বিজয়ে!

সম্পর্কিত খবর