আয়ারল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগে যা বললেন নিগার

আয়ারল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগে যা বললেন নিগার

২০২৩ সালটা নিগার সুলতানা জ্যোতির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলের বেশ ভালো কেটেছিল। তবে তারপর চলতি বছরটা ছিল তার পুরো উল্টো। সেই বছরের শেষ অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে আগামীকাল আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

এই সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি জানালেন দল, দলের বাইরের নানা বিষয়, বোর্ড নিয়ে নিজের ভাবনা। সে সংবাদ সম্মেলনের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো— 

বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবনা–

বিশ্বকাপের চিন্তা তো অনেক পরে! এখন আমাদের ম্যাচ বাই ম্যাচ মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের হাতে এটাসহ দুইটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আছে। পয়েন্ট নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজ ধরে যদি চিন্তা করি, সেটা ভালো হবে। তাই এই পয়েন্টগুলো নেওয়ার দিকে মনোযোগ থাকবে বেশি।

ওয়ানডে ব্যাটিং–
আমাদের এমন কিছু ক্রিকেটার আছে ওয়ানডে নিয়মিত খেলে, ধারাবাহিক যারা। নাম উল্লেখ করতে হবে ফারজানা হক পিংকির ওয়ানডে রেকর্ড খুবই ভালো। মুর্শিদা খাতুনও অনেক ভালো ওয়ানডে খেলছে। সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন শারমিন আক্তার সুপ্তা, তাকে নেওয়া হয়েছে। এই সংস্করণে আমাদের যে ব্যাটিং আছে, একটু সময় নিয়ে ব্যাটিংটা করলে... যেহেতু ব্যাটিংটাই বেশি সমস্যা দেখা যায়, তাই এখানে তো সময় নিলে খুব বেশি সমস্যা নেই।
ব্যাটিংটার প্রস্তুতির জন্য আমি বলব যে, আমরা কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। যেখানে কম-বেশি দল বাছাইয়ের দিকে মনোযোগ ছিল। যে কারণে প্রতিটা ক্রিকেটার নিজের জায়গা থেকে সেরাটা খেলার চেষ্টা করেছে। ওইভাবেই দল ঠিক করা হয়েছে। লম্বা সময় পর ওয়ানডে খেলা। ঘরের মাঠের কন্ডিশনে আমাদের যেসব ক্রিকেটাররা ধারাবাহিক রান করে, তারা সেসব (প্রস্তুতি) ম্যাচগুলোতে ভালো খেলেছে। তাই আমি দল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।
ব্যাটিং দৃশ্যমান সমস্যা। অনেক সময় যেটা হয়, আমরা টপ-অর্ডাররা রান করছি না। ফলে মিডল-অর্ডার থেকে আর সামাল দেওয়া হচ্ছে না। আধুনিক ক্রিকেটে আসলে কখনও কাভার করার সুযোগ থাকে না। যেটা চলে যায় সেটা কাভার করা যায় না।

জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর–

ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। আমরা যদি এখান থেকে ভালো একটা সিরিজ শেষ করতে পারি, দল হিসেবে অবশ্যই পরের সিরিজে আমাদের মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শুরু করাটা। যদি ভালো একটা শুরু পাই, সেটা ধরে রাখতে পারলে এই দলটি ভালো করতে পারবে।

প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড কেমন–

আয়ারল্যান্ড যেসব ম্যাচ জিতেছে, সবগুলো ঘরের মাঠের কন্ডিশনে জিতেছে। এই কন্ডিশনে ওদের তেমন ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। জেতার হার অনেক বেশি কম। ওদের সঙ্গে যতবার খেলেছি, আমাদের জয়ের হার অনেক বেশি। যেহেতু ঘরের মাঠে খেলা, যে কেউ নিজের ঘরের মাঠের কন্ডিশনে বেশিই শক্তিশালী হয়। সাম্প্রতিক সময়ের সিরিজগুলো যদি দেখেন, অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আমরা ভালোই খেলেছি। তাদের রেকর্ডটা কিন্তু তাদের মাঠেই। তবে এটা নিয়ে... আমি বলব প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু আমাদের ৬ পয়েন্ট নিতে হবে, খুব গুরুত্বপূর্ণ সিরিজটা। প্রতিটা ম্যাচ মূল্যবান। আমরা চেষ্টা করব দাপট দেখিয়ে খেলতে। আয়ারল্যান্ড আমাদের চেয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে নিচে। যদি আমরা তাদের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে খেলতে না পারি, তাহলে বড় দলগুলোর বিপক্ষে কীভাবে চোখে চোখ রেখে লড়াই করব।

সিনিয়রদের ব্যাটিং–

ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি বলেন, চার থেকে পাঁচজন ব্যাটারের কিন্তু ম্যাচটা শেষ করতে হয়। যখনই আপনি চিন্তা করবেন, আমার অনেক ব্যাটার আছে, সবাই মিলে করে ফেলব, তাহলে কিন্তু হবে না। আমরা যারা সিনিয়র আছি, ধারাবাহিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি, তাদের দায়িত্বটা অনেক বেশি। পিংকি আপুর ওপর অনেক আস্থা থাকে। কারণ সম্প্রতি তার রেকর্ডটা চোখে ধরার মতো এবং তার ব্যাটিংটা কিন্তু অন্যরকম। একটু সময় নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন এবং লম্বা খেলেন। তাই তার দিকে অন্যরকম একটা দৃষ্টি তো সবারই থাকবে। সম্প্রতি মুর্শিদা খাতুনও অনেক ভালো করছে। সুপ্তা আপুর ব্যাটিংটা দেখে আমার কাছে অন্যরকম লেগেছে, তাকে অন্যভাবে প্রস্তুত মনে হয়েছে। তাই তার প্রতিও আস্থাটা অনেক বেশি।"

আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্প্রতি ওয়ানডেতে অত ভালো খেলতে পারিনি। তবে কিছু ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলেছি। আমি চাচ্ছি সেগুলো যেন লম্বা করতে পারি। কারণ আমি জানি, আমি যদি নিজের পারফরম্যান্সটা করতে পারি, দল অনেক বেশি উপকৃত হবে।

সেঞ্চুরি দেখেন... যদি প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করতে পারি। প্রত্যেকটা দিন সব ব্যাটারের হয় না। কারণ ব্যাটিং কঠিন একটা কাজ, সুযোগ একটাই থাকে। যদি মনে হয়, আজকের দিন আমার বা অন্য নির্দিষ্ট কোনো ক্রিকেটারের, তাহলে তার আসলে ধারাবাহিকভাবে খেলাই উচিত।

দলের ফিল্ডিং–

ফিল্ডিংটা... গত বিশ্বকাপে আমরা যেই পরিমাণ ক্যাচ ছেড়েছি এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। এটা আমাদের ভুগিয়েছে অবশ্যই। একদম দৃশ্যমানভাবে গুছিয়েছে সবাইকে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচগুলো আমরা ছেড়েছি। প্রাক প্রস্তুতি ক্যাম্পে আমাদের মূল লক্ষ্যই ছিল, ফিল্ডিং ও ফিটনেস নিয়ে কাজ করব। স্কিল নিয়ে তুলনামূলকভাবে অত বেশি সময় দেওয়া হয়নি। ফিল্ডিংয়ের দিকে মনোযোগ ছিল বেশি।
ফিল্ডিং এমন একটা বিভাগ, ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটা ক্রিকেটারের উন্নতির বিষয়। দলগতভাবে যদি এটা ইমপ্যাক্টফুলি কাজ করা যায়... ভারত সিরিজে আমি প্রথম যখন দেখেছি, প্রতিটা ক্রিকেটারের ভিন্ন একটা ক্যারেক্টার দেখেছি। তেমন যদি এখানে আমরা দেখাতে পারি... কারণ এটা একটা মোমেন্টামের বিষয়। যখন একটা মোমেন্টাম চলে আসে, সেটা যদি পুরো ম্যাচে ধরে রাখা যায় তাহলে ব্যাটিং ও বোলিংটা সহজ হয়ে যায়।

 

খারাপ সময় পেছনে ফেলা প্রসঙ্গে–

সবকিছু (মানুষের আগ্রহ, প্রত্যাশা, স্পন্সর আসা) কিন্তু আমরাই তৈরি করেছি। আজকে যদি আপনারা এখানে এসে থাকেন, প্রশ্ন করছেন আগে ভালো ছিল বা এমন-অমন ছিল, এটা আমরাই তৈরি করেছি। তো এটা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। আমি বলব, বিশ্বাস রাখেন। কারণ দল কষ্ট করছে। অনেক সময় পারফরম্যান্সগুলো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ফল না হলে তখন নেতিবাচক বিষয়গুলো বেশি আসে। এই সিরিজটা বলব, আমাদের দলের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা। যেই জিনিসটা আমরা তৈরি করেছি, ইনশাআল্লাহ্‌ এই সিরিজেই হতে পারে... আমাদের কাছে অনেক সুযোগ আছে। ভারত-পাকিস্তান সিরিজে যেটা আমরা করেছি, যেন আরও অনেক বেশি মানুষ আগ্রহ দেখায় এবং মিডিয়াও যেন আরও বেশি ফোকাস করে।

পরিচিত কন্ডিশনে খেলা–

নিজের কন্ডিশনে বলব যে, নিজেদের অত বেশি চ্যালেঞ্জ না দিয়ে যার যার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা ভালো। দলের সবার প্রতি সবার আস্থা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টিতে হয়তো অত ভালো পারফরম্যান্স ছিল না। তবে ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্স ছিল। সোবহানার পারফরম্যান্স নিয়ে (আগে) অনেক কথা হয়েছে, ও কিন্তু অনেক ভালো খেলেছে। ওয়ানডেতে ও যদি একই কাজ করে, ধারাবাহিক রান করে তাহলে আমাদের দলের জন্য ভালো।

প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের অধীনে নতুন বোর্ড প্রসঙ্গে–

প্রেসিডেন্ট স্যারের সঙ্গে আমাদের সেভাবে দেখা হয়নি। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে ফটোসেশনে এসেছিলেন। নতুনভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন, অনেক অনেক বেশি ব্যস্ত। তবে খোঁজখবর রাখেন, জিজ্ঞেস করেন। উনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর একটা কথাই বলেছেন, কোনো কিছুই চাইতে হবে না, আমরা জানি। যেহেতু তিনি ক্রিকেটের লোক। আমাদের নির্বাচকরা অনেক দিন আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাই আমাদের ক্রিকেটারদের জানেন।
আর ফাহিম স্যার নিয়মিত আসেন, কথা হয়। ক্রিকেটারদের অনেক কথা বলেন, অনুপ্রাণিত করেন। নিয়মিত খোঁজ রাখেন। এই জিনিসগুলো আসলেই ভালো লাগে। আমি আশা করব, এই জিনিসগুলো তারা নিয়মিত করবেন।

সম্পর্কিত খবর