হুমায়ুন আহমেদকে মোহাবিষ্ট করেছিলেন সাকিব
হুমায়ুন আহমেদ, কলমের আঁচড়ে অগুণতি পাঠককে মোহাবিষ্ট করেছেন, ভক্ত বানিয়েছেন নিজের জীবদ্দশায়। যিনি এত মানুষকে ভক্ত বানাতে পারেন, তিনিও কি কারো ভক্ত হতে পারেন? পারেনই তো!
ভক্ত হলে আমরা কী করি? হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দু-চারটা পোস্ট দিই, সেই তারকার সাফল্যে হৈহল্লা করি… এই তো! ভক্ত হিসেবে হুমায়ুন আহমেদের নৈবেদ্য আবার গড়পড়তা নয়। গোটা একটা বই উৎসর্গ করে দিয়েছেন রীতিমতো। তাও আবার সেই বই, যা তার আত্মজীবনী।
কে সেই তারকা, যিনি হুমায়ুন আহমেদকে মোহাবিষ্ট করেছেন? তিনি সাকিব আল হাসান। ফাউন্টেন পেন বইটা উতসর্গ করে হুমায়ুন লিখেছিলেন, ‘ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই তরুণকে চিনি না। কিন্তু মুগ্ধ হয়ে তার ক্রিকেট খেলা দেখি।’
সেবারের বই মেলায় হুমায়ুন আহমেদের বই প্রকাশ পেয়েছিল তিনটি। কিন্তু তার মধ্যে ফাউন্টেন পেনই কেন? কারণ তার চোখে সাকিব ফাউন্টেন পেন। বলেছিলেন, ‘সাধারণ বলপয়েন্ট কলমের কালি শেষ হয়ে গেলে আর লেখা যায় না। কিন্তু ফাউন্টেনপেন কালি শেষ হলে আবার কালি ভরে লেখা যায়। সাকিব হচ্ছে আমাদের ফাউন্টেনপেন। সবাই থেমে গেলেও সাকিব থেমে যায় না। ছেলেটা অদম্য, অফুরন্ত।’
সেটা চাইলেই সাকিবকে জানিয়ে দিতে পারতেন তিনি, কিন্তু জানাননি। তার ব্যাখ্যা, ‘কিছু মানুষকে দূর থেকে ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসা প্রকাশের জন্য সবসময় মানুষকে কাছে টানার প্রয়োজন নেই।’
লেখক না চাইলেও কথাটা সাকিব পর্যন্ত পৌঁছেছিল ঠিকই। পরে একবার সাকিব জানিয়েছিলেন তার আফসোসের কথা, যা তিনি বয়ে নিয়ে বেড়াবেন আমৃত্যু। লিখেছিলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা ছিল আমার। কিন্তু যতবারই পরিকল্পনা করেছি, কোনো না কোনো গোলমালে পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারিনি… একজন বড় মাপের মানুষকে দেখা হলো না আমার। দুঃখটা থেকেই যাবে।’
হুমায়ুন আহমেদের ক্রিকেট উন্মাদনা স্রেফ সাকিবকে ঘিরেই ছিল না। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দেশের শীর্ষস্থানীয় এক পত্রিকায় কলাম লিখেছেন। খেলা তো দেখতেনই! বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে কী কী পাগলামি যে করেছেন, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। একবার সুইজারল্যান্ডে গিয়ে খেলা দেখতে শুটিং বন্ধ করে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন জুরিখের পথে পথে। দেশে থাকলে ম্যাচ যখনই থাকত, তখনই তার শুটিং স্পট হয়ে যেত রীতিমতো উৎসবের মঞ্চ। জিতলে তো কথাই নেই, হারলেও বলতেন, ‘চেষ্টা তো করেছে ছেলেরা! উৎসব চলুক!’
গল্পের যাদুকরের জন্মদিন ১৩ নভেম্বর, বেঁচে থাকলে আজ পালন করতেন প্ল্যাটিনাম জুবিলি। তবে তা খুশি মনে পালন করতে পারতেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য থেকে যায়। বিশ্বকাপে যে ব্যর্থ হয়েছে তার প্রিয় বাংলাদেশ, তাও আবার তার প্রিয় খেলোয়াড় সাকিবের নেতৃত্বে! এমন কিছু পর জন্মদিনের কেকটা কাটতে গিয়ে হয়তো খানিকটা হিমুর মতো উদাস যেতেন কি না, কে জানে?