প্রোটিয়াদের 'বদলা’ হলো না, ৮ বছর পর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস যখন শেষ হলো ২১২ তে, তখনই বিষয়টা চলে এসেছিল সামনে। ২৪ বছর এদিক ওদিকের সেমিফাইনালের দুটো দল যখন ছিল একই, প্রথম ইনিংস শেষে রানটাও প্রায় মিলেই যাচ্ছিল। ফলটাও কি মিলবে? প্রশ্নটা চলে আসছিল ভাবনায়। ফল মিলুক না মিলুক, ম্যাচের ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানোর বিষয়টা মিলে গেল একেবারে। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা লড়াইটায় ফেভারিট বদলে যাচ্ছিল বারে বারে, ২৪ বছর আগের ওই মহাকাব্যিক সেমিফাইনালেও তো এমনটাই হয়েছিল।
মিল পাওয়া গেল আরও এক জায়গায়, সেবারও সে সেমিফাইনাল থেকে উতরে যাওয়া দলটার নাম ছিল অস্ট্রেলিয়া, এবারও তাই। দক্ষিণ আফ্রিকা বিদায় নিল আরও এক সেমিফাইনাল থেকে, তবে এবার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার অন্তত একটা ‘সান্ত্বনা’ আছে, এবার সরাসরিই হেরেছে, হ্যানসি ক্রনিয়ের দলের মতো গ্রুপ পর্বের শ্রেয়তর অবস্থানের খেসারত দিয়ে নয়। ৩ উইকেটের স্নায়ুক্ষয়ী জয় নিয়ে ফাইনালে চলে গেছে অজিরা। রোববারের ফাইনালে তারাই খেলবে ভারতের বিপক্ষে।
বড় টুর্নামেন্টে বাঁচা মরার লড়াই মানেই যেন দক্ষিণ আফ্রিকার ‘চোকার্স’ অপবাদটার সামনে চলে আসা। সেটা আজও এল। দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে শুরু করেছিল তাতে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই উইকেট খুইয়ে বসে দলটা। পাওয়ারপ্লেতে তোলে মাত্র ১৮ রান। পাওয়ারপ্লে শেষ হতেই আরও দুই উইকেট নেই। চোখের পলকে ২৪ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা।
চলতি বিশ্বকাপে দুই অঙ্কে অলআউটের কাটায় একবার পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের বিপক্ষে ৮৭ রানে অলআউট হওয়ার কীর্তিটাও আজ ছাপিয়ে যায় কি না প্রোটিয়ারা, সে আলোচনাও উঠে আসছিল বেশ।
সেটা হয়নি ডেভিড মিলারের কল্যাণে। তার সেঞ্চুরিতে ভর করেই মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার পুঁজিটা গিয়ে ঠেকেছে ২০০'র ওপরে। দলের দুইশোর সঙ্গে সঙ্গে নিজের সেঞ্চুরিও করে ফেলেন মিলার। এরপরই বিদায় নেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা শেষমেশ ২১২ রানে ইনিংস শেষ করে।
এরপর ডেভিড ওয়ার্নার আর ট্র্যাভিস হেড মিলে যেভাবে শুরু করেছিলেন অজিদের হয়ে, তাতে মনে হচ্ছিল অজিরা বুঝি ২০-৩০ ওভার হাতে রেখে তবেই জিতবে ম্যাচটা।
তবে সে সম্ভাবনায় পানি ঢেলে দেন এইডেন মার্করাম, ফেরান ওয়ার্নারকে। একটু পর মিচেল মার্শও সাজঘরমুখো হলেন। প্রোটিয়ারা চাপ বাড়াচ্ছিল একটু একটু করে।
সে চাপটা অবশ্য সামলে নিচ্ছিলেন হেড। ফিফটি তুলে নিলেন দ্রুতই। তবে ১৫তম ওভারে তিনি যখন বিদায় নিলেন, অজিরা বিপাকে পড়ল তখন। ১৩৩ রানে মারনাস লাবুশেন আর ১৩৫ রানে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও বিদায় নিলেন।
স্টিভেন স্মিথ আর জশ ইংলিসের ব্যাটে অবশ্য অজিরা এগিয়েই চলেছিল। স্মিথকে ফিরিয়ে তাতে আবারও বাধ সাধেন কোয়েটজি। এরপর ১৯৩ রানে যখন ইংলিসও বিদায় নিলেন, তখন তো মনেই হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা বুঝি ম্যাচটা হাতে নিয়েই এসেছে।
তবে সে সম্ভাবনা উড়িয়েই দেন প্যাট কামিন্স আর মিচেল স্টার্ক মিলে। দুজন মিলে আর কোনো ভুল করেননি। ২২ রানের জুটিতে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গিয়ে তবেই ফেরেন সাজঘরে।
এই জয়ের ফলে প্রথম দল হিসেবে ছয় বার বিশ্বকাপ জেতার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে অজিরা। রোববারের ফাইনালে হবে যার ফয়সালা।