ভারতের স্বপ্ন ভেঙে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
সাফল্যের হাওয়ায় উড়ছিল ভারত! বিশ্বকাপের শুরু থেকে সেমি-ফাইনাল অব্দি একের পর এক জয়! টানা ১০ ম্যাচ রোহিত শর্মার বিচলিত করতে পারল না কেউ। ফেভারিট হয়েই রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে মুদ্রার অন্য পিঠ দেখল ভারত। তাদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে উড়ল অস্ট্রেলিয়ার পতাকা। রোহিতদের ফাইনালে ৬ উইকেটে হারাল অজিরা! ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি তাদের।
দিবারাত্রির ম্যাচে টস ভাগ্যটাও ছিল অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। শুরুতে তারা ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারতকেই। গোটা বিশ্বকাপে দারুণ ব্যাটিং করা দলটি এবার তুলে ৫০ ওভারে অলআউট হয়ে মাত্র ২৪০ রান। এরপর জবাব দিতে নেমে শুরুর ধাক্কা সামলে অজিরা ৪৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে তুলে নেয় জয়! আর বুঝিয়ে দেয়-বিশ্বকাপের ফাইনাল মানেই হলুদের জয়জয়কার। তাদের উৎসবের রাতে বেদনায় নীল হলেন রোহিত-কোহলি-শামিরা।
মিশন হেক্সা কমপ্লিট। অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ম্যাচের আগের দিন বলেছিলেন তাদের একটাই লক্ষ্য, প্রতিশোধ নেওয়া। মাঠে তারা শুধু এগারো জনের বিপক্ষেই খেলবেন সেটাও না। কারণ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের গর্জনের বিপক্ষেও খেলতে হবে আর তাদের সবাইকে স্তব্ধ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেটাই করেছে অজিরা। এই মুহূর্তে অজি ক্রিকেটই বোধ হয় দুনিয়ার সবচাইতে সুখী পরিবার।
৮৭, ৯৯, ০৩, ০৭, ১৫ এবং অবশেষে হেক্সা! অবশ্য এই মিশন কমপ্লিট করতে অজিদের খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। মাত্র একটা আসরেরই অপেক্ষা। সবমিলিয়ে সবশেষ সাত ওয়ানডে বিশ্বকাপের পাঁচ বারই শিরোপা গিয়েছে তাসমানিয়ার এই দেশটার ঘরে।
ট্রেভিস হেডকে একটা বিশেষ ধন্যবাদ দিতেই হয় অজিদের। এক বছরের মাঝে অজিদের জিতিয়েছেন দুইটা শিরোপা। দুইবারই ভারতের গলার কাটা এবং মাথা ব্যাথার কারণ হয়েছেন হেড। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওভালে ১৭৪ বলে ১৬৩-এর পর, আহমেদাবাদেও বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি। ম্যাচ সেরা তো হয়েছেন-ই সেই সঙ্গে নামের পাশে ১২০ বলে ১৩৭।
৪৭ রানে তিন উইকেট হারানোর পর অজিদের যখন ম্যাচ ফসকে যাওয়ার অবস্থা তখনই হেড হয়তো ভাবছিলেন হেড-শো এখনও বাকী। পাওয়ার প্লে টা যদি ইন্ডিয়ান পেসারদের হয় তাহলে এর পরবর্তী অংশ কিংবা পুরো ম্যাচটাই যেনো ছিল হেডের একার।
সবমিলিয়ে অজিদের অমরত্ব লাভের রাতে হেড নিজেও হয়ে গেলেন অমর। সেই সাথে স্তব্ধ করে দিলেন প্রায় দেড়শো কোটি মানুষকে।
শিরোপা মঞ্চে আগে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়াকে কোনো রকমে ২৪১ রানের টার্গেট দিতে পেরেছে ভারত। দায়িত্বটা তাই নিতে হচ্ছে বোলারদেরই। পুঁজিটা ছোট হওয়ায় এদিন বাধ্য হয়ে আগেভাগেই শামির দ্বারস্থ হয়েছেন রোহিত। বল হাতে তুলে নিয়েই ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ওয়ার্নারকে ফেরান শামি। ক্যাচ লুফে প্রায়শ্চিত্ত করেন কোহলি। পথ খুঁজে পায় ভারত।
এরপর বুমরাহর তাণ্ডব চালানো শুরু। আগ্রাসী হয়ে উঠা মিচেল মার্শকে ফেরান ১৫ রানে। এরপর পরের ওভারে এসে তুলে নেন স্টিভেন স্মিথের উইকেট। লেগ বিফোরের আবেদন করলে আম্পায়ারের সায় মিলে। দ্বিধান্বিত স্মিথ রিভিউ না নিয়ে উইকেট ছাড়লেন। যদিও পরে দেখা গেছে উইকেট মিস করেছি বল। দলীয় ৫০ রানের আগেই ৩ উইকেট হারায় অজিরা।
এরপর অবশ্য গল্পটা নিজের করে নিয়েছে হেড-লাবুশেন জুটি। দু’জনে মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে জমা করেন ১৯৭ রান। যেখানে হেডের সংগ্রহ ১২০ বলে ১৩৭। অন্যদিকে লাবুশেন ১১০ বলে ৫৮।
তার আগে টসে হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে রোহিতের ৪৭, কোহলির ৫৪ ও রাহুলের ৬৬ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়াকে কোনো রকমে ২৪১ রানের টার্গেট ছুড়ে ভারত। অজি বোলারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেছেন স্টার্ক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ উইকেট তুলেছেন কামিন্স ও হ্যাজেলউড।