পাকিস্তানকে হতাশায় ডুবিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা
ক'বার বদলে গেল ম্যাচের দৃশ্যটা! ম্যাচটা শ্রীলঙ্কার হাতে নয়, ছিল একেবারে মুঠোয়। সেখান থেকে শাহিন শাহ আফ্রিদির করা একটা ওভার পাকিস্তানকে এনে দিল সাম্যাবস্থায়। শেষ ওভারে অভিষিক্ত জামান খান যখন শুরুটা করলেন দুর্দান্ত, তখন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান লড়াইকেই মনে হচ্ছিল নিয়তি। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা বের করে নিয়ে এল। জিতল ২ উইকেটে। অঘোষিত সেমিফাইনালে এই জয়ে পাকিস্তানকে বিদায় করে ফাইনালে নাম লেখাল স্বাগতিকরা।
দিনের শুরুটাই হয়েছিল বৃষ্টি দিয়ে। এমন বৃষ্টি, যা দেখে ধারাভাষ্যকার ডমিনিক কর্ক বলেই বসেছিলেন, 'এমন বৃষ্টি তো কলম্বোয় আর দেখিনি!' সে বৃষ্টি থামতেই শুরু খেলা।সে বৃষ্টিই অবশ্য শেষ ছিল না! ম্যাচে আরও বাগড়া দিয়েছিল বার কয়েক।
টসে জেতা পাকিস্তান ব্যাট করতে নেমেই পড়ে গিয়েছিল বিপদে। শুরুতে ফখর জামান ফিরলেন, এরপর থিতু হয়েও বাবর আজম ফিরলেন অল্পতেই। ফিফটি করা আব্দুল্লাহ শফিকও ফিরলেন বাবরের কিছু পরেই। কয়েক ওভারের এদিক ওদিকে যখন ফিরলেন মোহামর নওয়াজ আর মোহাম্মদ হারিসও, তখন পাকিস্তানের ২০০ পেরোনো নিয়েও জেগে গিয়েছিল শঙ্কা।
পাকিস্তান সে শঙ্কা তো দূর করলোই, এরপর পেয়ে গেল লড়াকু পুঁজিও। তার পুরো কৃতিত্বটা মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইফতিখার আহমেদের ৭৭ বলে ১০৮ রানের ঝোড়ো জুটির। ইফতিখার ৪০ বলে ৪৭ করে ফিরলেও রিজওয়ান অপরাজিত থাকেন শেষ পর্যন্ত ৭৩ বলে ৮৬ রানের ইনিংস খেলে। পাকিস্তান তাই স্কোরবোর্ডে পেয়ে যায় ২৫২ রান। তবে ডাকওয়ার্থ লুইস স্টার্ন পদ্ধতিতে এক রান কমে লঙ্কানদের লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ৪২ ওভারে ২৫২ রানেরই।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই কুশল পেরেরাকে হারায় শ্রীলঙ্কা। এরপর ৭৭ রানে ফেরেন পথুম নিসাঙ্কাও। এরপরও লঙ্কানদের কখনোই মনে হয়নি কক্ষপথ থেকে ছিটকে যাচ্ছে। কুশল মেন্ডিস একপাশ আগলে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে তার ১০০ রানের জুটি লঙ্কানদের নিয়ে যায় জয়ের আরও কাছে। ইফতিখারের বলে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন সাদিরা। এরপর আসালঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে কুশল গড়েন ছোট আরেক জুটি। তবে তিনি সেঞ্চুরি থেকে ৯ রান দূরে থামেন।
এর কিছু পর অধিনায়ক দাসুন শানাকাকেও হারায় শ্রীলঙ্কা। তবে এরপরও তাদেরকেই মনে হচ্ছিল ম্যাচের ফেভারিট, অন্তত ৪০ ওভার পর্যন্ত। ৪১তম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদি বল হাতে এলেন, এরপরই বদলে গেল দৃশ্যটা। পরপর দুই বলে ফেরালেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা আর দুনিথ ভেল্লালাগেকে। তাতেই পাকিস্তান চলে আসে চালকের আসনে।
শেষ ওভারে লঙ্কানদের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। অভিষিক্ত জামান খান যখন শুরুর চার বলে দিলেন দুই রান, তুলে নিলেন প্রমোদ মদুশানের উইকেট, তখন পাকিস্তানকে ছাড়া আর কাকেই ফেভারিট মনে হওয়ার কথা? পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের দৃশ্যটা আরও একবার বদলে গেল পঞ্চম বলে গিয়ে। চারিথ আসালঙ্কার ব্যাটের কোণা ছুঁয়ে বলটা যখন বেরিয়ে গেল উইকেটরক্ষক আর প্রথম স্লিপের মাঝে দিয়ে, ছুঁয়ে ফেলল বাউন্ডারি। লঙ্কানদের জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে তখনই। শেষ বলে দুই রান নিয়ে এরপর আনুষ্ঠানিকতাটা সেরেছেন আসালঙ্কা।
তাতেই পাকিস্তানকে বিদায় করে ফাইনালে চলে যায় শ্রীলঙ্কা।