জাপানে অন্যরকম বিশ্বকাপ
দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তবে দাগই ভালো- বিজ্ঞাপনের এই কথাটিকেই যেন বাস্তবে প্রমাণ করেছে জাপান। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে যাতে ভবিষ্যততে আপনাকে নাক ছিটকাতে না হয়; সেটারই স্থায়ী ব্যবস্থা করছে দেশটি। উদ্ভাবন করেছে ময়লা পরিষ্কারের অভিনব এক খেলা। দুঃখিত-বিষয়টি আর নিছক খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ময়লা-আবর্জনা নিয়ে রীতিমতো বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে দেশটি। যেখানে অংশ নিয়েছে বিশ্বের বহু দেশ।
বিষয়টি গল্পের মতো শোনালেও এটাই সত্যি যে, গত ২২ নভেম্বর জাপানের টোকিও শহরের জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এমনি এক বিশ্বকাপ। যার স্থানীয় নাম ‘স্পোগোমি’। যার অর্থ স্পোর্টস পিকিং আপ ট্র্যাশ’ সহজ বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের খেলা। বিশেষ এই খেলাটির উদ্ভাবন ২০০৮ সালে হলেও এবারই প্রথম আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ। যেখানে অংশ নেয় মোট ২১টি দেশ।
প্রতিযোগিতার নিয়ম, প্রতিটি দলেই তিনজন করে খেলোয়াড় থাকবে। এরপর একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ৯০ মিনিটের মধ্যে যেই গ্রুপ সর্বাধিক ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারবে। তারাই উঁচিয়ে ধরবে বিশ্বকাপ ট্রফি। সেই ময়লা সংগ্রহের খেলাতেই এবার শিরোপা ঘরে তুলেছে ইংল্যান্ড।
টোকিওর প্রায় পাঁচ-বর্গ-কিলোমিটার এলাকায় ঘোরাফেরা করে মোট ৫৭ কেজি ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করেছে তারা। যার মধ্যে রয়েছে প্ল্যাস্টিকের বোতল, ধুলাবালি ও সিগারেটের ফিল্টার।
চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দলের সদস্য সারা প্যারি বলেন, ‘এই খেলা আয়োজনের জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি শুধু বলতে চাই আবর্জনা তোলা এখন থেকে একটি খেলা!’
বিশ্বকাপ আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান নিপ্পন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মিতসুউকি উন্নো প্রতিযোগিতাটি নিয়ে বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সামুদ্রিক বর্জ্য সমস্যা সম্পর্কে যারা এখনও সচেতন নয় তাদের সমুদ্রে আবর্জনার পরিস্থিতি উপলব্ধি করা। এই ইভেন্টের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল প্রকৃতপক্ষে সেই সমস্ত লোকদের জন্য সুযোগ প্রদান করা যারা সমস্যা সম্পর্কে সচেতন এবং বাকিদের সচেতন করতে চান।’
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অবশ্য এমনিতেই বিশ্বে প্রশংসনীয় জাপানিরা। সবশেষ দুটি ফুটবল বিশ্বকাপেই জাপানের ম্যাচ শেষে গ্যালারি পরিষ্কার করতে দেখা গেছে দেশটির সমর্থকদের। যা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল সমগ্র বিশ্বে। এবার তো পরিষ্কার পরিছন্নতা নিয়ে বিশ্বকাপই আয়োজন করে ফেলল দেশটি। যার পরবর্তী আসর বসবে আগামী ২০২৫ সালে।