ম্যারাডোনাহীন ৩ বছর

ম্যারাডোনাহীন ৩ বছর

‘Oblivion is inevitable, and we all are meant to be doomed’ – মার্কিন লেখক জন গ্রিন বলেছিলেন কথাটা। সেটা তো আছেই, এমন সব দিনে মনে পড়ে যায় আরও একটা ইংলিশ প্রবাদ, ‘out of sight, out of mind’ চোখের আড়াল হলে নাকি মনেরও আড়াল হয়ে যায়! আসলেও কি তাই?
চলুন ফিরে যাওয়া যাক সপ্তাহ দুয়েক আগে লিওনেল মেসি আর জিনেদিন জিদানের আলাপচারিতায়। সেখানে মেসি বলছিলেন, ‘আমরা আর্জেন্টাইনদের জন্য ১০ একটা বিশেষ নম্বর। আপনি ১০ নিয়ে আলাপ শুরু করবেন, ম্যারাডোনা আপনাআপনিই চলে আসবে আপনার আলোচনায়। আমরা সবাই তারই মতো হতে চেয়েছি। তার মতো কেউ কখনোই হতে পারবে না, কিন্তু ইচ্ছেটা সবারই থাকে। তার মাঝে শক্তিশালী একটা বিষয় ছিল, যেটা এখনো সবাইকে প্রভাবিত করে…’
ওই শক্তিশালী আবেশটা এমন, যা ঘোরতর শত্রুকেও মোহাবিষ্ট করে ফেলে, ভক্ত বানিয়ে দেয়। গ্যারি লিনেকারের একটা কথা থেকে তা একদম পরিষ্কার। ছিয়াশির ওই বিখ্যাত কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনা সবে তখন ঐতিহাসিক ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোলটা করেছেন, ইংলিশরা রীতিমতো ফুঁসছে তা নিয়ে। এর মিনিট চারেক পরই আবার দৃশ্যপটে ম্যারাডোনা। এবার অবশ্য নেতিবাচক কিছু করে নয়, পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পায়ের জাদুতে। ৬ জনকে কাটিয়ে করলেন গোল, মনে হচ্ছিল তার সামনে বুঝি কোনো ডিফেন্ডারই নেই! না, কথাটা আমার নয়, গ্যারি লিনেকারেরই। ওই গোলের পর তার কেমন লাগছিল? ইংলিশ স্ট্রাইকার জানান, ‘মাঠে দাঁড়িয়ে যখন দৃশ্যটা দেখলাম, তখন দাঁড়িয়ে তালি দিতে মনে চাইছিল। কিন্তু তা করলে আমার আর দেশে ফেরা হতো না।’
ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা ঘোরতর ‘শত্রুকেও’ বশে এনে ফেলছেন, তাও মাত্র পাঁচ মিনিট না যেতেই। তিনি ম্যারাডোনা বলেই হয়তো সম্ভব!
শুধু কি এই? খেলোয়াড়ী জীবন শেষে আর্জেন্টিনার ম্যাচে গ্যালারি তার উপস্থিতি ছিল রেওয়াজের মতো। আকাশী-সাদাদের একেকটা গোল, একেকটা জয়কে কীভাবে যে উদযাপন করতেন ডিয়েগো! তিন বছর আগে আজকের এই দিনে চলে গেলেন তিনি, তাতে লিওনেল মেসিরা তাদের সবচেয়ে বড় সমর্থককেও হারিয়ে বসেন সেদিন।
এরপর মেসি একে একে কত কী করে বসলেন! কোপা আমেরিকা জিতলেন, ফিনালিসিমা বগলদাবা করলেন, চুমু আঁকলেন পরম আরাধ্য বিশ্বকাপে। এমন সব অর্জনে শূন্যতা একটাই, গ্যালারিতে উদ্বাহু উদযাপনে ব্যস্ত ম্যারাডোনা যে নেই!
ম্যারাডোনাহীনতার তিন বছর আজ। করোনার বছর ২০২০ এর আজকের এ দিনে ধরাধামের মায়া ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর তিন বছর পরও তিনি যেভাবে এখনো প্রাসঙ্গিক, যেভাবে আলোচিত আর্জেন্টিনায়, কিংবা গোটা বিশ্বে; তাতে জন গ্রিনের ওই লাইন, কিংবা ইংলিশ ওই প্রবাদটাকে অপ্রাসঙ্গিক লাগে! অবশ্য সেসব বলা মানুষদের কথা ভেবে; ম্যারাডোনা সে কাতার ছেড়ে গিয়েছেন বহু আগেই!

সম্পর্কিত খবর