ক্রিকেটের সাকিব এবার রাজনীতির ম্যাচে-প্যাঁচে

ক্রিকেটের সাকিব এবার রাজনীতির ম্যাচে-প্যাঁচে

নতুন কোনো উদাহরণ নয়, সাকিব আল হাসান হাঁটলেন তার পূর্বসূরিদের দেখানো পথেই। নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে এখন অন্য এক ভঙ্গিতে এক ফ্রেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগ পেতে চলেছেন সাকিব। যে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকবে জাতীয় সংসদ ভবন। সামনে হাসিমুখে মুজিব কোট গায়ে ক্রিকেটের সাবেক এবং বর্তমান অধিনায়ক ত্রয়ী।

নাঈমুর ও মাশরাফি বেশ আগেই সংসদ সদস্য হয়েছেন। নাঈমুর এবার তৃতীয়বারের মতো মাশরাফি দ্বিতীয়বারের মতো আর সাকিব প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে।

সংসদ ভবনের মাননীয়’র চেয়ারে বসা সাকিবের। নামের শেষে যোগ হবে নতুন সন্মান, পদবী; সাকিব আল হাসান এমপি! এখনো অবশ্য নির্বাচনের বাকি বেশ। মনোনয়ন তুলেছেন তিনি। জমাও দিয়েছেন। তিন আসনের যে কোনো একটিতে মনোনয়ন তার গ্রহণ হবে-এমন প্রতিশ্রুতিও পেয়ে গেছেন।

ক্ষমতাসীন দলের নেতার সঙ্গে তার হাসিমাখা নির্বাচনী আমেজের ছবি তো সেই নিশ্চয়তাই দিচ্ছে। ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসান প্রায় সবকিছুই পেয়েছেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছেন। অধিনায়কত্ব করেছেন। বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে সাফল্যের সঙ্গে খেলেছেন। বিলিওনিয়ার হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার খুঁজতে কাউকে বেশি কষ্ট করতে হবে না। সাকিবের ক্যারিয়ার গ্রাফই তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছে।

এখন বাকি কেবল এমপির চেয়ারে বসা!

চারবছর আগেই সাকিব এমপি হওয়ার দৌড়ে নামতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন বলা হয়েছিল এখন ক্রিকেটে মনোনিবেশ করো। অপেক্ষায় থাকো। সাকিবের সেই চারবছর আগের অপেক্ষা এবার সম্ভবত শেষ হচ্ছে। তবে সাকিব এবার এমপি পদে নির্বাচনের ইচ্ছে প্রকাশ করা মাত্রই টের পেয়েছেন ক্রিকেট মাঠের নির্ভেজাল ও একনিষ্ঠ সমর্থন আর রাজনীতির মাঠের হাততালির শব্দে অনেক পার্থক্য।
রাজধানীতে তার প্রতিপক্ষ একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী তো বলেও দিয়েছেন-‘মেরে আঙ্গিনা মে তুমহারা ক্যায়া কাম হ্যায়!’ আর মাগুরায় তার জন্মস্থানেও শ্লোগান উঠেছে-‘সাকিব ক্রিকেট মাঠে ফিরে যাও, রাজনীতির মাঠ তোমার জায়গা নয়।’

খুবই আশ্চর্যের বিষয়, নাঈমুর ও মাশরাফি যখন তাদের নিজ এলাকা থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তখন স্থানীয়রা তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। সাকিবের ক্ষেত্রে কেন উল্টোটা হচ্ছে? সাকিবের মতো একজন বিশ্বসেরা তারকা ক্রিকেটার এমপি হতে চাইলে তো পক্ষ-প্রতিপক্ষ ভুলে সবারই উচিত তাকে স্বাগত জানানো।

আগামীর রাজনীতিবিদ সাকিবকে ঘিরে শুরুতে কেন এই বাদ-প্রতিবাদ?
সম্ভাব্য উত্তরটা সম্ভবত এমন-

সাকিব হঠাৎ নির্বাচন করার ইচ্ছে জানিয়েছেন। এলাকায় এই বিষয়ে তার কোনো প্রাক-প্রস্তুতি ছিলো না। জনমতও তেমন তিনি আগে তৈরি করেননি। স্থানীয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততাই ছিল না। ক্ষেত্র তৈরির জন্য তেমন কোনো হোমওয়ার্কই করেননি। রাজনীতিতে তৃণমূলের সংগঠকরা অনেক বড় ভূমিকা রাখেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তারা। সাকিব সেই তাদের সঙ্গেও কোনো ধরনের যোগাযোগ বা সম্পর্ক তৈরিতে পাত্তা দেননি। সাকিবের এই উদাসীনতা বা অন্য অর্থে উচ্চমার্গীয় আচরণ নিশ্চিতভাবে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িতরা ভালোভাবে নেননি। সাকিবকে তারা এখন উড়ে এসে জুড়ে বসা ভাবছেন!

সাকিব ক্রিকেট জুড়ে অনেক সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু সমস্যাও কম তৈরি করেননি। সেসব সমস্যা আবার এমন যা নীতি-নৈতিকতারও বিরুদ্ধাচরণ বটে! ক্রিকেট জুয়াড়ির সঙ্গে কানেকশন। তারই শাস্তি হিসেবে ক্রিকেটে নিষিদ্ধ। বেটিং সাইটকে প্রমোট করে এমন কোম্পানির সঙ্গে বিতর্কিত স্পন্সরশীপ চুক্তি সই। পরে বিসিবির ধমকে সেই চুক্তি বাতিল। সাবেক অধিনায়ক ও তার সতীর্থ তামিম ইকবালকে নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে যেভাবে সমালোচনা করলেন সেটাও অধিনায়কের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই নয়। সর্বোপরি বিশ^কাপে যে দলটা ব্যর্থ হলো তিনি ছিলেন সেই দলের অধিনায়ক, অন্যতম পরিকল্পক ও নিয়ন্ত্রক। অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আল হাসান প্রভাবী, একরোখা, জেদি কিন্তু জনপ্রিয়তার তুল্যমূল্যে নিজ দলেই কিছুটা পিছিয়ে।

রাজনীতির শুরুর সময়েও সাকিব সম্ভবত এখন সেই একই সঙ্কটে! ২২ গজের মাঠের চেয়ে রাজনীতির মঞ্চ কিন্তু অনেক বড়। এই মঞ্চে ব্যাটিং- বোলিং করতে হলে সাকিবের এখন ভালো একজন ‘রাজনৈতিক কোচ’ প্রয়োজন!

সম্পর্কিত খবর