লামিন ইয়ামাল: আধুনিক ফুটবলের বিস্ময়!

  • স্পোর্টস বাংলা রিপোর্ট
  • ০২:৪৭ পিএম | ০৩ মে, ২০২৫

যখন ফুটবলবিশ্বের অনেকে মনে করতে শুরু করে, রোনালদো, মেসি, কিংবা ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তিদের পর আর কেউ হয়তো সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে না, তখনই আবির্ভাব ঘটল লামিন ইয়ামালের। মাত্র ১৬ বছর বয়সে এমন দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস, আর অসাধারণ নৈপুণ্যে তিনি আজ বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বার্সেলোনার এই বিস্ময়বালককে নিয়ে ইতোমধ্যেই বলা হচ্ছে-৫০ বছরে একবার দেখা মেলে এমন প্রতিভা।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে বার্সেলোনার ৩-৩ ড্র করার ম্যাচে যেভাবে ইয়ামাল খেলে উঠেছেন, তা দেখে শুধু ক্লাব সমর্থকরাই নয়, প্রতিপক্ষের কোচ সিমোনে ইনজাঘিও প্রশংসায় ভেসে গেছেন। থিয়েরি অঁরি পর্যন্ত স্বীকার করেছেন, ইয়ামাল যেন ফুটবল ঈশ্বরের নতুন উপহার। বয়স যেমন বিস্ময়ের একটি বড় কারণ, তার থেকেও বড় কারণ-তার শৈল্পিক ফুটবল।

লা মাসিয়া থেকেই উঠে আসা ইয়ামালকে অনেকেই বলছেন নতুন মেসি। তার খেলার ধরণ, বল নিয়ন্ত্রণ, জায়গা খোঁজা, আর চাপে নিজের সেরাটা বের করে আনার ক্ষমতা, এসবই মেসিকে মনে করিয়ে দেয়। তবে ইয়ামাল নিজে এসব তুলনায় যেতে নারাজ। তবু বাস্তবতা এই যে, বার্সার ইতিহাসে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ অভিষেককারী, আর তারই হাতে আজ বার্সার ভবিষ্যৎ।

বার্সেলোনার অর্থনৈতিক সংকটের সময়ই ইয়ামালের আবির্ভাব হয়, যখন ক্লাব ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে বড় তারকা কিনতে পারছিল না। তখন জাভির দূরদর্শিতাই ইয়ামালকে মূল দলে টেনে আনে। সেই ঝুঁকি আজ ক্লাবের বড় সম্পদে রূপ নিয়েছে। ইয়ামালের চুক্তির ‘রিলিজ ক্লজ’ ১০০ কোটি ইউরো, যা থেকেই বোঝা যায়, বার্সেলোনা তার ভবিষ্যৎ কতটা সুরক্ষিত করতে চায়।

তার পারিবারিক জীবনেও ছিল নাটকীয়তা। ইউরো জয়ের পর তার বাবা ছুরিকাহত হন এবং কয়েকদিন কাটে আইসিইউতে। ব্যক্তিগত সম্পর্কেও আসে পরিবর্তন, বিচ্ছেদ ঘটে বান্ধবী আলেক্স পাডিলার সঙ্গে। তবে এসবের কোনও প্রভাব ফুটবল মাঠে পড়তে দেননি ইয়ামাল। বরং নিজের খেলা দিয়ে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন।

চলতি মৌসুমে তিনি ৪৯টি ম্যাচে করেছেন ১৫টি গোল ও ২৪টি অ্যাসিস্ট। আশ্চর্যের বিষয় বড় ম্যাচে তার পারফরম্যান্স আরও ঝলমলে। কোচ হান্সি ফ্লিক বলেই দিয়েছেন, ইয়ামাল চাপেই সেরা খেলাটা খেলেন।

প্রশ্ন উঠছে ইয়ামাল কি সত্যিই বিশ্বের সেরা? তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন এমবাপে, রদ্রি, ভিনিসিয়াস, সালাহের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড়রা। এমবাপে ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছেন, রদ্রি ইউরো ও ইপিএল ট্রফির ধারক, মোহাম্মদ সালাহ একাই পাল্টে দিয়েছেন লিভারপুলের ভাগ্য। তবু বয়স বিবেচনায়, ইয়ামালের গত দুই বছরের উত্থানকে অনেকেই বলছেন ‘অসাধারণের চেয়েও বেশি’।

আজ যদি ইয়ামাল খেলা ছেড়ে দেন, তবু অনেক কিংবদন্তির তুলনায় তার অর্জন বেশি। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীরা চান- এমন প্রতিভা আরও ১০-১৫ বছর মাঠ কাঁপাক। সব মিলিয়ে ফুটবলকে নতুন করে প্রেমে পড়তে শেখাচ্ছেন  লামিন ইয়ামাল।

খেলার দুনিয়া | ফলো করুন :