থিতু হয়ে উইকেট ছুঁড়ে আসার আক্ষেপ নিয়ে দিন শেষ
শচীন টেন্ডুলকার যখন খেলতেন, ভারতের মাটিতে টেস্টে ভারত উইকেট খোয়ালেই নাকি বেশি উল্লাস করা হতো, শচীন যে আসছেন একটু পর! তেমন একটা দৃশ্যের দেখা মিলল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামেও মিলল আজ। মাহমুদুল হাসান জয় বিদায় নিলেন সেঞ্চুরিটা ছুঁড়ে দিয়ে, এরপরই দর্শকদের উল্লাস, মুশফিকুর রহিম যে নামছেন এবার! তার কাছে প্রত্যাশাটা যে এমনই আকাশছোঁয়া, বড় কিছুর প্রত্যাশা!
মুশফিক যখন এসেছেন ক্রিজে, দুই ওভারের ব্যবধানে দুই উইকেট খুইয়ে বাংলাদেশ তখন অস্বস্তিতে। দিনের শেষ সেশন বাকি তখনো। কোনোরকম বাধা বিঘ্ন ছাড়াই দিনটা কাটিয়ে দিয়ে আসা, তার কাছে দলের আপাতত চাওয়াটা ছিল এমনই। তবে তিনি সে প্রত্যাশাগুলো মেটাতে পারলেন কই?
এজাজ পাটেলের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এলেন তেড়েফুঁড়ে, ওয়াইড লং অফ দিয়ে বলটা সীমানাছাড়া করার অভিপ্রায় নিয়ে। তা আর হলো না। গড়বড় করলেন টাইমিংয়ে, বলটা গিয়ে জমা পড়ল অনেকটা পেছনে দৌড়ে সেখানে হাজির হওয়া কেন উইলিয়ামসনের হাতে। সঙ্গে সঙ্গে মুশফিকের ইনিংসের ইতি।
লোয়ার মিডল অর্ডার থেকে শুরু করে দলের লেজ পর্যন্ত ব্যাটিং লাইন আপটা নেহায়েত মন্দ নয়। পরে আছেন নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান মিরাজ… শেষ দিকে তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানরাও ব্যাট হাতে রান এনে দিতে পারবেন বেশ। তবে বাংলাদেশ ইনিংস লম্বা হতে হলে মুশফিককে প্রয়োজন ছিল খুব করে। এমন এক বিদায়ে সেটা আর হলো না। দলের ইনিংসটাও লম্বা হলো না আর।
শুরুর সেশনে দুই উইকেট খোয়ালেও রানটা নেহায়েত মন্দ হয়নি দলের, ১০৪। জাকির হাসানের স্থিতধী ইনিংস যখন শেষ হলো এজাজ পাটেলের শার্প টার্ন নিয়ে ভেতরে ঢোকা বলে, তখনই একটা আঁচ মিলছিল উইকেটে স্পিন ধরার। সে ভাবনা থেকেই হয়তো, নাজমুল হোসেন শান্ত শুরু করলেন প্রতি আক্রমণের মন্ত্রে। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে বলের পিচের কাছে এসে খেলছিলেন শট, যেন বল বেশি দুষ্টুমি করতে না পারে। ছক্কায় ইনিংস শুরুর পর হাঁকালেন আরও দু ছক্কা, চারও দুটো। মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগে শেষ তার ইনিংস, গ্লেন ফিলিপসের বলে বিদায় নিলেন ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই।
পরের সেশনটা মুমিনল আর মাহমুদুল হাসান জয় মিলে পার করে দিচ্ছিলেন বেশ নির্বিঘ্নেই। তবে চা খেতে যাওয়ার ঠিক দুই ওভার আগে উইকেট খোয়ালেন মুমিনুল, তার পরের ওভারে জয়ও। তখনই মুশফিকের কাঁধে এসে পড়ে ইনিংস লম্বা করার দায়িত্বটা। ওপাশে ছিলেন অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন দিপু, তাই অভিজ্ঞ মুশফিককেই দায়িত্বটা নিতে হতো।
তিনি শেষমেশ তা পারেননি, দলের ইনিংসটাও তাই লম্বা হয়নি খুব। হবে কী করে? খণ্ডকালীন স্পিনারকে যদি আপনি দিয়ে বসেন চার উইকেট, তখন আর কীভাবে ইনিংস বড় হয়? মুশফিকের আগের সবাইও দুই অঙ্কে পৌঁছেছিলেন। পরের সবাইও প্রায় ছুঁয়েই ফেলেছেন দুই অঙ্কের রান। শুধু তাইজুল দুটো রান কম নিয়ে অপরাজিত থেকে সাজঘরে না ফিরলে সবাই দুই অঙ্ক ছোঁয়ার ‘কীর্তি’ প্রথম দিনেই হয়ে যেতে পারত।
কিন্তু এত কিছুর পরেও দলের রানটা শেষমেশ ৪০০ও হয়তো পেরোবে না, দলের রান ৩১০, কিন্তু উইকেট যে বাকি মোটে একটা! প্রথম দিনে উইকেটগুলো ওভাবে ছুঁড়ে আসার আক্ষেপটা তাই পোড়াচ্ছে দিনশেষে।