কি চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট ঘিরে?
মাঠের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। কিন্তু প্রিন্ট, ইলেক্টনিক আর সোশ্যাল মিডিয়া দেখে মনে হবে বাংলাদেশ যেন বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা দল। কিছু ভিউ ব্যবসায়ী, স্বঘোষিত ক্রিকেট বিশারদ সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে নানা গল্প ফেঁদে ক্রিকেটের সর্বনাশ করছে। বিচক্ষণদের বুঝতে অসুবিধা হয় না. এই সব তথাকথিত বিশারদ কোনো না কোনো খেলোয়াড় বা বিসিবি কর্মকর্তার পোষ্য হিসেবে তাদের মুখপাত্র হিসাবে কাজ করছে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর আগে, চলাকালে এবং পরে নানা নাটকীয় প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে। তামিমের খেলা না খেলা প্রসঙ্গ, বিতর্কিত স্কোয়াড নির্বাচন , একাদশ নিয়ে হাতুরা-সাকিবের স্বেচ্ছাচার, বাংলাদেশ দলের অবধারিত ভরাডুবি নিয়ে মিডিয়াঝড় কাঙ্খিত ছিল। কিন্তু মূলধারার ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ট আলোচনা করে নিশ্চিত হয়েছি হাতুরা কর্তৃক ‘নাসুমকে শারীরিকভাবে হেনস্তা’ করার ঘটনায় অতিরঞ্জন আছে। যদি তাই হয় তাহলে বিসিবি কেন বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্পষ্ট করেনি। একজন বেতনভুক্ত বিদেশি কোচ জাতীয় দলের খেলোয়াড়কে হেনস্তা করবে সেটি মেনে নেয়া যায় না. এখন দেখছি হাতুরাসিংহে নিজে সরাসরি এবং বিসিবি পরোক্ষভাবে বিষয়টি অস্বীকার করার পর প্রসঙ্গ পাল্টে গেছে। ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ক্ষণিকের ভুলে হ্যান্ডলড দি বল (অবস্ট্রাটিং দ্য ফিল্ড) আউট হওয়ার ঘটনাকে রং ছড়িয়ে স্পট ফিক্সিংয়ের গায়েবি অভিযোগ তোলা হয়েছে। সবাই জানে মুশফিক শৃঙ্খলা, নিজের নিবেদন ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে উপমা সৃষ্টি করেছে। এমন একজন ‘টোটাল’ ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ভুঁইফোড় কিছু তথাকথিত ক্রিকেট প্রতিবেদক কোন উদ্দেশ্যে, কাদের প্ররোচনায় এই ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করে? বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। আশা করি বিসিবি ক্রিকেটের স্বার্থে এসব ভুঁইফোড় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আঁতুরঘর থেকে চিনি-জানি। খেলেছি, লিখেছি, লিখছি সেই ১৯৭২ থেকে। প্রথম প্রজন্মের অধিকাংশের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ আছে। নানাভাবে খোঁজ খবর রাখি। বিভিন্ন প্রজন্মের ক্রীড়ালেখকদের লেখালেখি দেখি। অনেকেই মৌলিক বিষয় নিয়ে লেখেন। ইদানিং কিছু স্বঘোষিত ‘বিশেষজ্ঞ’ ক্রিকেটের মৌলিক সমস্যা-সংকট এড়িয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে ভিউ ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ। এদের কারণে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। তরুণ ক্রিকেট প্রজন্ম ভুল সংকেত পায়। কীভাবে ক্রিকেট প্রশাসনকে গঠনমূলক সমালোচনা করে ক্রিকেটকে তৃণমূল পর্যায় থেকে সুসংগঠিত করা যায় সেদিকে নজর নেই। ক্রিকেটার-ক্রিকেটার ভুল বোঝাবুঝি, ড্রেসিং রুমের নানা ঘটনার কাল্পনিক গল্প তুলে বিতর্ক সৃষ্টি মাঠের খেলাকে প্রভাবিত করছে। আমার মনে হয় বিসিবির উচিত এই সব বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ। ক্ষণে ক্ষণে কেন মিডিয়ার সামনে আসতে হবে ক্রিকেট প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের? মিডিয়া বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির এগুলো সামাল দেয়া উচিত। সবাইকেই কোড অফ কন্ডাক্ট কঠোর ভাবে মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা উচিত। একজন পেশাদার ক্রিকেটারকেও তার পেশার বাইরে অন্য কিছু করতে হলে হয় অবসর গ্রহণ করা উচিত না হয় বিসিবির লিখিত অনুমোদন নেয়া উচিত। এগুলোর ব্যত্যয় ঘটলে খেলোয়াড় নির্বিশেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। একইভাবে মিডিয়া কর্তৃপক্ষের উচিত সংবাদ প্রকাশে দায়িত্বশীল হওয়া।
বিসিবি বিশ্বকাপের ব্যর্থতা নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জানি না কি থাকবে তাদের তদন্তে। সব কিছু আড়াল হয়ে গেলে দোষী মানুষগুলো পার পেয়ে যাবে।
এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার জন্য শুধুমাত্র খেলোয়াড়রা দায়ী ছিল না। দায়দায়িত্ব অবশ্যই নির্বাচকমন্ডলী থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্ট, হেড কোচ, অধিনায়ক এবং গোটা বিসিবির। কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন ‘স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞের’ও দায় কম না। আশা করি বর্তমান প্রজন্মের অনুজ ক্রীড়া সংবাদিকরা মহান পেশাটির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকবেন।
লেখক: সালেক সুফী, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ক্রিকেট বিশ্লেষক