অথচ আগের রাতেই সাকিব-তামিম একসঙ্গে শুটিং মঞ্চে ছিলেন!
সাকিব-তামিম
২৪ সেপ্টেম্বর, রোববার রাত।
স্থান: রাজধানীর একটি শুটিং স্টুডিও। তেজগাঁও বানিজ্যিক এলাকা।
বিষয়: শুটিং, রেকর্ডিং। লাইট, ক্যামেরা, ব্যাকগ্রাউন্ড সব প্রস্তুত।
শুটিং যাদেরকে নিয়ে: সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল।
জি, আপনি ভুল পড়ছেন না। এই দুজনেই একই প্রতিষ্ঠানের একটি বিজ্ঞাপনে অংশ নিতে সেদিন হাজির হয়েছিলেন। দুজনে একে অন্যের সঙ্গে তো কথাই বলেন না! শুটিং করবেন কিভাবে? তারা মাঠে যখন ব্যাটিংয়ে সঙ্গী থাকেন তখনই কেবল কথাবার্তা যা বলার বলেন। মাঠের বাইরে বা অন্য কোনো জায়গায় তারা কথা বলা তো দুরের কথা, একে অন্যেকে মুলত এড়িয়ে চলেন।
সেই তারা দুজন একসঙ্গে একমঞ্চে শুটিংয়ে!
অনেক দেন দরবার করে তাদের এই বিজ্ঞাপনের জন্য সম্মত করানো হয়েছিল। বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানটি ধরেই নিয়েছিল বাংলাদেশ দলের সঙ্গে তামিম ইকবাল নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপে যাচ্ছেন। সাকিব-তামিমের একসময়ের বন্ধুত্ব এবং তাদের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ, আমাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা; এমন সবকিছুকে উপজীব্য রেখেই বিজ্ঞাপনের প্লট সাজানো হয়েছিল। পাশাপাশি চেয়ারে বসে দুজনে একে অন্যের বিশেষ গুনাবলির বর্ণনা করবেন, এমনভাবে সাজানো হয়েছিল ক্রিপ্ট। পরিচালকের দেখিয়ে দেওয়া ভঙ্গিতে তারা সেই ক্রম অনুযায়ী ‘অভিনয়ও’ করেছিলেন!
বিজ্ঞাপনটি তৈরিও হয়েছিল। কিন্তু প্রচার আর হলো না যে!
হবে কিভাবে? তামিমের যে বিশ্বকাপেই যাওয়া হলো না। দল থেকেই বাদ। আর সেই বাদ পড়ার শেষ নাটকটা মঞ্চস্থ হয়েছিল ২৪ সেপ্টেম্বরের সেই রাতেই। সেই শুটিং স্পটেই!
সেই বর্ণনা শুনি।
অনেক কষ্টে সাকিব এবং তামিমকে এই বিজ্ঞাপনের জন্য সম্মত করানো হয়েছিল। তারা অবশ্য বেশকিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছিলেন। কিছু সময়ের জন্য শুটিং। মোদ্দা আয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। মন্দ কি! শুটিং স্পটে সেই রাতে তামিম ইকবাল আগেভাগেই চলে এলেন। সিরিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি খেলছেন না। তাই ক্রিকেটীয় তাড়া নেই। আর সাকিব আল হাসান তো পুরো সিরিজেই বিশ্রামে ছিলেন। তার হাতেও যথেষ্ট সময়। তাই বিজ্ঞাপনের সুযোগটা তিনিও কাজে লাগালেন। তবে শুটিং স্পটে এলেন একটু দেরিতে। দুজনকেই তাদের কাজ বুঝিয়ে দিলেন বিজ্ঞাপন পরিচালক। ক্যামেরা রোল হওয়ার আগে সাকিব একটু সময় নিলেন। ওয়াশরুমে গেলেন। ক্যামেরার সামনে তখন তামিম ইকবাল একা বসে। তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন প্রোডাকশন হাউসের সিনিয়ররা।
৫ মিনিট গেল। ১০ মিনিট হলো। ২০ মিনিট পেরিয়ে গেল। আধাঘন্টা সময় এমনই কাটল। সাকিব রেস্টরুম থেকে বের হচ্ছেন না।
এই দেখো তো একটু। প্রোডাকশন কর্মীকে তাড়া দিলেন পরিচালক।
এমনি করে প্রায় এক ঘন্টা পেরিয়ে গেল। সাকিব ফিরছেন না। অন্যদিকে শুটিং মঞ্চে তামিম বসেই আছেন। বিরক্ত হচ্ছেন। এক সময় বলেও বসলেন, আমি তাহলে চলে যাই। শুটিংয়ের লোকজন তাকে ম্যানেজ করতে ব্যস্ত। এমন জটিলতার মধ্যে ঘন্টাখানেক পরে সাকিব এলেন, ফোনে কথা বলতে বলতে। বোঝাই গেল ফোনে লম্বা সময় ধরে তিনি কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন।
যাক এবার তাহলে শুটিং শুরু করা যায়। ঠিক তখনই আবার ছন্দপতন। এবার তামিম ইকবালের ফোন বেজে উঠলো। অপরপ্রান্তে এমন কেউ যাকে তামিম তাৎক্ষণিকভাবে এড়াতে পারলেন না! তবে তামিমের সেই ফোনালাপ মোটেও সুখকর কিছু ছিল না। সেটা তার মুখভঙ্গি এবং এ প্রান্তের কথাবার্তায় স্পষ্ঠ।
কানে ফোন চেপে তামিম এবার এক কোনায় সরে গেলেন। তারও বেশ লম্বা সময় আলাপ চললো। সেই আলাপের সারমর্ম আর যাই হোক তাতে তামিম যে মোটেও খুশি নন, তা পরিস্কার তার অবয়বে। সেই ফোনেই তামিমকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে না খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাকে বলা হলো খেললেও যেন মিডলঅর্ডারে খেলে। এমনসব প্রস্তাব বা পরিবর্তনের জন্য তামিম মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তাই প্রতিক্রিয়া দেখালেন তামিম নিজেও। গলার রগ ফুলিয়ে কথাবার্তা বললেন।
সাকিবের বিলম্ব এবং তামিমের টেলিফোনে এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে পুরো শুটিংয়ের মুড নষ্ট। দুজনেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু সেই প্রোডাকশন হাউসের কর্তারা কোনোমতেই এই দুজনের বিজ্ঞাপনটা বাদ দিতে রাজি ছিলেন না। এমন করে তাদের দুজনকে আবার কবে, কখন পাওয়া যাবে কিনা, কে জানে? আর তাই তারা দুজনকে অনেক অনুরোধ করলেন। আরেকদফা চা কফির অর্ডার এলো। পূর্বপরিচয় এবং সুসম্পর্কের প্রেক্ষিতে সাকিব-তামিম দুজনেই অনুরোধটা ফেলতে পারলেন না। ঘড়ির কাঁটায় তখন পরদিনের তারিখ ঘোষণা হচ্ছে। আবার সেট সাজানো হলো। নতুন করে প্রস্তুতি চললো। ক্যামেরা রান করলো। শুটিং সম্পন্ন হলো। দুজনেই যখন বিজ্ঞাপন পরিচালক এবং কর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেওয়ার জন্য গাড়িতে উঠছেন তখন ঘড়িতে ভোর চারটা প্রায়!
বিজ্ঞাপনচিত্রটি প্রকাশের কথা চিত্রধারণের দিনকয়েক পরেই। কিন্তু বিশ্বকাপ দল ইস্যুতে সাকিব-তামিমের মধ্যে তৈরি হওয়া বৈরিতার ফলে তা পিছিয়ে যায়। তবে বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন সন্ধ্যায় সে বিজ্ঞাপন মুক্তি পায়। বিজ্ঞাপনে সাকিব-তামিমের রসায়ন মুগ্ধতা ছড়িয়েছে সাধারণ দর্শকদের মাঝে।
আহা, বিশ্বকাপের মাঠেও যদি তাদের রসায়ন জমত আরেকবার!