বিস্ময়কর বোলিং বীরত্বে বাংলাদেশের বাজিমাত!
সুযোগ এবং সুবিধা দুটো পেলে সেটাকে কাজে লাগাতে হয়। এই ম্যাচে সেটাই করে দেখালো বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই নিউজিল্যান্ডকে সমস্যায় ফেলে। শেষ অব্দি সেটা ধরে রাখে। কোনো সময় ভুলচুক হয়নি।
তাই সিরিজে প্রথমবারের মতো হাসতে পারছে দল। সিরিজ হারলেও একটা জয়ের দেখা তো মিলল। যে জয়ের অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ সেই ১৭ বছর ধরে। ২০০৭ সালে প্রথমবার নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে সিরিজে খেলে বাংলাদেশ। তারপর থেকে এই সেদিন পর্যন্ত সাদা বলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো জয় নেই। টানা ১৮টি ওয়ানডেতে কেবল হারই দেখেছে এই সময়ে। সেই দুঃখ ঘুচল ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর।
নিউজিল্যান্ড অলআউট ৯৮। বাংলাদেশের জয় ৯ উইকেটে। ২-১ হারা সিরিজ থেকে এই বড়কিছু নিয়েই ফিরতে পারছে দল। আর এই পুরো কৃতিত্ব দলের বোলারদের। আরেকটু সুনির্দিস্ট করে বললে দলের পেস বোলাররা সাফল্যের নায়ক। নিউজিল্যান্ডের ১০ উইকেটের সবগুলোই পেসারদের কব্জায়। তানজিব হাসান সাকিব ৩, শরিফুল ৩, সৌম্য ৩ এবং মুস্তাফিজুর ১। ৩১.৪ ওভারের মধ্যেই শেষ নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ৯৮ রানে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে এটাই নিউজিল্যান্ডের সর্বনিন্ম স্কোর।
নেপিয়ারের উইকেট সাধারণত সহজ ব্যাটিং বান্ধব হয়। এখানে এর আগে ৯টি ম্যাচে তিনশোর্ধ রান হয়েছে। যার ৬টিই করেছে নিউজিল্যান্ড। তবে সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে পরীক্ষায় ফেলার জন্য নতুন পরিকল্পনা নেয় স্বাগতিকরা। তেজি উইকেট বানায়। ঘাস রাখে। বল পিচ হওয়ার পর বাড়তি গতি ও বাউন্স পায়। মেঘলা আকাশ, ঝিরিঝিরি বাতাসে নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে এমন উইকেট পেসারদের জন্য আদর্শ, আরাধ্য। এমন উইকেটে টসে জিতে বাংলাদেশের বোলাররা আগে বোলিংয়ের সুবিধাটা পেল।
দলের চার পেসার সঠিক লাইন লেন্থে বল রাখলেন। ব্যাক অব লেন্থে অনেক বল করলেও তেজি উইকেট বাড়তি বাউন্সের কাজ করে দিল। সেটাই সাফল্য এনে দিল। চার পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ ও নবীন তানজিদ হাসান সাকিব এই উইকেটের সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করলেন। উইকেট টু উইকেট বল রাখলেন। সুইংয়ের মোচড়ে ব্যাটসম্যানরা পরাস্ত হলেন। কিছু বল উপরেও রাখলেন। গতি, সুইং ও বাউন্সে তার বোলিং নিউজিল্যান্ডারদের বিস্মিত করলো। সেই বিস্ময় কাটিয়ে উঠার আগেই অন্যপ্রান্ত থেকে শরিফুলও দুর্দান্ত। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে শরিফুল মাত্র ৭ বলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের হাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেন। এক ম্যাচ পরে দলে ফেরা মুস্তাফিজুর রহমানও নেপিয়ারে বল হাতে ফিনিসারের কাজ সারলেন।
১৯২ বল খেলা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ডটবলের সংখ্যা ১৩৪। হিসেব জানাচ্ছে এই ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিং থেকে মাত্র ৫৮ বলে রান তুলতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড! প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৩৮ রান তোলা নিউজিল্যান্ড পুরো ইনিংস জুড়ে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। স্কোরবোর্ডে ১০০ রানও জমা করতে ব্যর্থ।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সৌম্য সরকার সিরিজের শেষ ম্যাচে বোলার হিসেবেও নিজের সুনাম রাখলেন। দলে ফিরে আসার এই সিরিজ স্মরনীয় হলো তার। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই ক্যারিয়ার সেরা সাফল্য সৌম্যর। দ্বিতীয় ম্যাচে রেকর্ড ১৬৯ রানের সেঞ্চুরি। তৃতীয় ম্যাচে ১৮ রানে ৩ উইকেট, ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। তানজিব হাসান তামিম তার পঞ্চম ম্যাচে এসে ম্যাচসেরার পুরুস্কার পেলেন। উইকেট থেকে সহায়তা মিললে এই তরুণ যে বিপদজ্জনক বোলার, নেপিয়ারের স্কোরকার্ড তারই প্রমাণ।
পুরো দলের বিস্ময়কর বোলিংয়ের দিনে ফিল্ডাররাও দুর্দান্ত এদিন। দারুণ কয়েকটা ক্যাচ হলো। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে ঝাঁপালেন সবাই। বোলারÑফিল্ডারদের এই জুটিতেই এই ম্যাচে জয়ের কাহিনীর ভিত্তি পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
ছোট টার্গেটে বেশি রক্ষনাত্মক মেজাজ দেখালে বিপদ বাড়তে পারে। সেই চিন্তায় ব্যাটিংয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত আক্রমণাত্মক হলেন। অধিনায়ক এবং ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের ৮৪ রানের জুটিটাই বাংলাদেশকে ৯ উইকেটের বড় জয় নিশ্চিত করলো।
টি- টোয়েন্টি সিরিজের আগে এই জয় বাংলাদেশকে নিশ্চিতভাবে আত্মবিশ^াস যোগাবে। এখানে ম্যাচ জেতা গেলে সিরিজও কেন জেতা যাবে না। আর বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের এই তেজি চেহারা দেখে নিউজিল্যান্ড টি- টোয়েন্টি সিরিজের জন্য বানানো উইকেটে একটু তেজ কম রাখার নতুন পরিকল্পনা কষতেই পারে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: নিউজিল্যান্ড ৯৮/১০ (৩৪.৪ ওভারে, উইল ইয়াং ২৬, ল্যাথাম ২১, ক্লার্কসন ১৬, তানজিব সাকিব ৩/১৪, শরিফুল ৩/২২, সৌম্য ৩/১৮, মুস্তাফিজুর ১/৩৬)। বাংলাদেশ ৯৯/১ (১৫.১ ওভারে সৌম্য ৪ রিটায়ার্ট হার্ট, এনামুল ৩৭, শান্ত ৫১*, লিটন ১*)। ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: তানজিব হাসান সাকিব। সিরিজসেরা: উইল ইয়াং। সিরিজের ফল: নিউজিল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী।