১৮ ম্যাচ ও ১৭ বছরের আক্ষেপ ঘুচল তেইশের শেষে
বাংলাদেশ সময় ৮টা ১০ মিনিট। শীতের সকালে তখন অনেকেই হয়তো উঠেনি ঘুম থেকেই। তবে ততক্ষণে সাত হাজার মাইল দূরে গড়েছে ইতিহাস। বাংলাদেশের ছেলেদের হাত ধরে। সিরিজের শুরুটা খারাপ হলেও শেষ রাঙলো জয় দিয়ে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয়। কদিন আগেই যুবারা এশিয়া কাপ জিতে বিজয়ের মাসে দিয়েছে অনন্য উপহার। সেই বিজয়ের মাসে এমন কাঙ্ক্ষিত জয়টা, দেশের জন্য উপহারের থেকে কম নয়।
১৭ বছর, সঙ্গে ১৮ ম্যাচ। দীর্ঘ এই অপেক্ষার পালা ফুরাল আজ (শনিবার)। ২০০৭ সালে কিউইদের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ পর থেকে এখন পর্যন্ত ছয় সিরিজে ১৭ ম্যাচে (২০১৫ বিশ্বকাপের ম্যাচ বাদে) জয়হীন ছিল বাংলাদেশ। কিউইদের মাঠে তাই লাকি নম্বর ১৮! কাঙ্ক্ষিত সেই জয়টা এলো ১৮তম ম্যাচে এসে। তাও আবার এমন দাপুটে। বল এবং ব্যাট হাতে স্বাগতিকদের এদিন পাত্তাই দেয়নি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। কিউইদের স্রেফ ৯৮ রানে বেঁধে রেখে তুলে নিয়েছে ৯ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়। সিরিজ হারের হতাশা যেন মিটল শেষ ম্যাচের দুর্দান্ত এই জয় দিয়ে।
ক্যাপ্টেন্সিতে নিজেকে আরও একবার নিজেকে প্রমাণ করলেন শান্ত। যার শুরুটা টস দিয়েই। নেপিয়ারে জয়ের শুরুটা সেই টস থেকেই। এরপর বোলিংয়ে জয়, শেষে ব্যাটিংয়েও।
আগে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা প্রমাণ হলো চতুর্থ ওভারের শেষ বলেই। ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রর উইকেট তুলে নেন সিরিজের প্রথমবারের মতো একাদশে আসা তানজিম হাসান সাকিব। তাতেই ক্ষান্ত থাকেননি এই ডানহাতি পেসার। দলীয় ২২ রানের মাথায় ফিরিয়েছেন ইনফর্ম হেনরি নিকলসকেও।
অধিনায়ক টম ল্যাথামকে নিয়ে শুরুর সেই ধাক্কা সামলে এগোতে থাকেন সিরিজজুড়ে ছন্দে থাকা ওপেনার উইল ইয়ং। তবে তাদের বেশিক্ষণ থিতু হতে দিল না সফরকারীরা। পেস তাণ্ডবে এবার দায়িত্ব শরিফুলের। ১৭তম ওভারে বোল্ড করে ফেরান ল্যাথামকে (২১)। এবং নিজের পরের ওভারেই তুলে নেন ইয়ংয়ের (২৬) উইকেট।
সেখান থেকে কেবল ৩৭ রান যোগ করতেই বাকি ছয় ব্যাটার ফেরেন সাজঘরে। কেবল ৯৮ রানেই থামে কিউইদের ইনিংস। এতেই লজ্জার রেকর্ডে ডুবেছে তারা। একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
দশটি উইকেটই নিয়েছেন পেসাররা। সৌম্য সরকার, তানজিম হাসান সাকিব ও শরিফুল ইসলাম, তিনজনই নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট এবং মুস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন একটি। ম্যাচ সেরার খেতাবটি গেছে তানজিমের দখলে। ৭ ওভার বলে কেবল ১৪ রান খরচে তুলে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট।
বাকি কাজ ব্যাটারদের। ৯৯ রানের মামুলি লক্ষ্য। যা হেসেখেলেই তুলে নিয়েছেন ব্যাটাররা। চোখে সমস্যা হওয়ায় দলীয় ১৭ রানের মাথায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সৌম্য সরকার। তবে বল হাতে আগেই তার কাজ সেরেছেন তিনি।
সেখান থেকে এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে ৬৭ রানে জুটি গড়েন শান্ত। ৩৭ রানে বিজয় ফিরলেও ফিফটি তুলে দলকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়ে মাঠ ছাড়েন শান্ত। ৪২ বলে ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
প্রবাদে আছে, শেষ ভালো যার সব ভালো তার। বিজয় মাস, সেখানে এমন জয় এবং তা দিয়ে ইতি ২০২৩ এর। সবমিলিয়ে দেশের ক্রিকেটে কেটেছে এই বছরটি মন্দের ভালো। এশিয়া কাপের পর বিশ্বকাপেও ব্যর্থ। তবে ঐতিহাসিক জয়ে বছরের শেষটা হয়ে থাকলো স্মরণীয়। ইতিহাস গড়া জয়ের রাঙা আলোয় শুরু হোক আগামী বছরের দেশের ক্রিকেটের যাত্রা।