সাকিব একা নয়, বাকিদেরও এগিয়ে আসতে হবে
ডেভ হোয়াটমোর
বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপের আগের পরিস্থিতিটা আদর্শ নয়। তামিম ইকবাল সরে গেল। এরপর জনসম্মুখে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কথা… আমার মনে হয় এটা দলের ওপর একটা প্রভাব অবশ্যই ফেলবে। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে খেলোয়াড়দের একটু স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকা উচিত, কোনো প্রকার দুর্ভাবনা থাকা উচিত নয়… বিশ্বকাপের আগে যা হয়েছে, তা দুঃখজনক। আমার ভয় হচ্ছে, দলের মধ্যে যোগাযোগটা যেভাবে হওয়া উচিত, তেমন হচ্ছে না, বিশেষ করে অধিনায়ক, কোচ আর নির্বাচকদের, তাদের ভাবনা তো একই রকম হওয়া উচিত। যে বিষয়টা বনিয়ে আমরা কথা বলছি, সেটা ভালো কিছু নয় আদৌ।
এই মিসম্যানেজমেন্ট, মিসকমিউনিকেশনটা সাহায্য করে না মোটেও। তাদের পারফর্ম্যান্সটা শেষ অনেক বছর ধরেই চরাই উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তো এটা তাদের এই অধারাবাহিকতার পেছনে একটা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে বলে মনে হয়। আমি জানি তারা কঠোর পরিশ্রম করে, তাদের অভিপ্রায়টা বেশ ভালো। তবে এই যে যোগাযোগের অভাবটা, এটা তো কেউ চায় না! এখানে বিষয়টা গোপনভাবে সারা যেত, জনসম্মুখে নয়। সাকিব আমার মনে হয় বিশ্বকাপে ফুল ফিট স্কোয়াড চেয়েছিল, আর তামিম খুব সৎ ছিল এই বিষয়টাতে, ‘দেখুন, আপনি আমাকে নিতে পারেন, কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে আমাকে একটু ভালোভাবে ‘ম্যানেজ’ করতে হবে’; তবে পরে সিদ্ধান্তটা এসেছে তাকে না নেওয়ার।
এটা অনেকটা কেন উইলিয়ামসন, টিম সাউদিকে দলে নেওয়ার মতো, এটা ভেবে যে ২ থেকে ৩ ম্যাচের পরে তাকে পুরোপুরি ফিট হিসেবে পাওয়া যাবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ছিল আর তারা গিয়েছে অন্য দিকে।
মুশফিকুর রহিম বেশ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। বাংলাদেশ তাদের ব্যাটিংয়ে তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত তাদের সহ-অধিনায়ক। সে খুব প্রতিশ্রুতিশীল, শেষ কিছু দিনে দারুণ ধারাবাহিকও ছিল, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্যও সে অনেক মূল্যবান হতে চলেছে। তানজিদ হাসান তামিম, আরেক ওপেনার যে হয়তো তামিম ইকবালের জায়গায় দলে এসেছে। আর এই যে হৃদয়, তার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি আমি। লিটন অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে দলে। যে কারণে দলের অন্যতম মূল খেলোয়াড়ও সে। অনেক দিন ধরেই সে দলে আছে, দলের বিকল্প উইকেটরক্ষকও।
তাদের শক্তির জায়গাটা অলরাউন্ডারদের নিয়ে আমার মনে হয়। সাকিব আর মিরাজ বেশ পরিপূর্ণ স্পিনার। এটা ভুলে যাওয়া চলবে না সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মিরাজ এই অলরাউন্ডার জুটিকে পরিপূর্ণতা দেয়। মাহমুদউল্লাহও কিছু স্পিন করতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত যে সাকিব আর মিরাজই বাংলাদেশের হয়ে বেশিরভাগ স্পিন ওভারগুলো করে দেবে।
পেস আক্রমণটা বেশ ভালো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটার কথাই ধরুন। উইকেটটা পেস সহায়ক ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ শক্তিশালী ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইন আপকে ভালোই বিপদে ফেলেছিল। মুস্তাফিজুর, শরিফুল, তাসকিন যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম, তরুণ হাসান মাহমুদও ভালো করছে। তো তাদের পেস আক্রমণটার মধ্যে আরও উন্নতি করার সে নিউক্লিয়াসটা আছে। এই বিশ্বকাপে আমি তাদের কাছে খুব বেশি কিছু চাইছি না। কিন্তু আমার মনে হয় এই অভিজ্ঞতাটা তারা কাজে লাগাবে, আর এটা তাদের বেশ উপকারও করবে।
সাকিবের ওপর পারফর্ম করার চাপটা থাকবে অবশ্যই। তবে ব্যাটে-বলে দুই জায়গায় আমার মনে হয় সে এই চাপটা নিতে পারবেই। সে যদি পারফর্ম না করে, তাহলে দল বেশ ভুগবে। তবে তারও সাহায্য দরকার, সে একাই সবকিছু করবে, বিষয়টা এমন নয়। অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে, পারফর্ম করে সাকিবের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে দিতে হবে। চার বছর পর সে থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আর তাই আমার মনে হয়, সে খুব ভালো কিছু করে শেষটা দেখতে চাইবে।
আর মিরাজ, কি খেলোয়াড় দেখুন! বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে নেমেছে, মাঝে ব্যাট করছে, শেষে ব্যাট করছে… শেষ কিছু দিনে তার ব্যাটিং খুবই ভালো হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জন্য সে অমূল্য।
কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে প্রত্যাশার ব্যাপারে খুব বাস্তবিক। তবে তামিম তার উলটো, সে বলছিল আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে বিশ্বকাপ জেতার… তবে একজন বাইরের মানুষ হিসেবে যদি আমি বলি, তাহলে আমি বলব, সেমিফাইনাল খেলাটা তাদের জন্য বেশ কঠিনই হবে, নিদেনপক্ষে আপনার পাঁচটা ম্যাচ জিততে হবে। কিন্তু তাদের বিপক্ষে যে দল খেলবে, তারা ভাববে, ‘ওহ এটা বাংলাদেশ, এটাই সম্ভবত একটা ম্যাচ যেটা আমরা জিততে পারি।’ আর তারা ভুলও ভাববে না এটা করলে। আর তাই আমার মনে হচ্ছে না বাংলাদেশ শেষ চারে যেতে পারবে। তবে সেটা করতে হলে, তাদের গড়পড়তার চেয়েও অনেক ভালো খেলাটা খেলতে হবে, তাও আবার প্রতি ম্যাচেই।
ডেভ হোয়াটমোর- সাবেক বাংলাদেশ কোচ