‘একটা ঘুপচি ঘরে ১০-১১ জন মিলে ঘুমোতাম’

‘একটা ঘুপচি ঘরে ১০-১১ জন মিলে ঘুমোতাম’

রোহিত শর্মা এখন আর কোন সাধারণ কেউ নন। তিনি ভারতের সবথেকে নামি কয়েকজন খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন। রোহিতের ব্র্যান্ড ভ্যালু এখন রীতিমতো আকাশ ছোঁয়া। একদিকে ভারতীয় দলের দায়িত্ব, অন্যদিকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কত্ব, সবটাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন রোহিত শর্মা।

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই বড় সাফল্য পেয়ে গিয়েছে ভারত। আর এর একটা বড় ক্রেডিট রোহিত শর্মার প্রাপ্য। নিজের ব্যাটিং দিয়ে দলকে সাহায্য না করতে পারলেও, অধিনায়কত্ব দিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছেন রোহিত। যেভাবে তিনি টিমকে তৈরি করেছেন, যেভাবে তিনি বোলারদের ব্যবহার করেছেন, তা দেখে ক্রিকেট সমালোচকরাও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

দলের সবার সাথে তিনি নিজেও তৈরি হচ্ছেন ভারতের পরবর্তী ম্যাচগুলোর জন্য। তবে ক্যাপ্টেন বা ক্রিকেটার রোহিত যতই আলোচনায় থাকুক না কেন, ব্যক্তি রোহিত কিন্তু খুবই সাদামাটা একজন মানুষ। আর এই বিশ্বকাপের মহারণের মাঝেই, তার মুখে উঠে এলো তার ছেলেবেলার কথা। নিজে মুখেই জানালেন, একটা এক কামরার ঘুপচি ঘরে বড় হয়ে উঠেছিলেন আজকের রোহিত শর্মা। বাবার আয় কোনদিনই খুব একটা ভালো ছিল না বলে ছোটবেলায় তার কষ্টও ছিল প্রচুর। সেসব দিনের কথাই আজ পুরো বিশ্বের সাথে ভাগ করে নিলেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

এখন রোহিত শর্মার সাফল্য আকাশ ছোঁয়া হলেও, এক সময় একটা ঘুপচি ঘরে বড় হয়েছেন তিনি। একটা ঘরের মধ্যে ১০ থেকে ১১ জন মিলে একসাথে থাকতেন রোহিতরা ছেলেবেলায়। বাবার আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছ না হওয়ায় ছোটবেলাতেই দাদুর বাড়িতে তাকে রেখে এসেছিলেন বাবা। ছোটবেলাতে দাদুর বাড়িতেই মানুষ হয়েছিলেন রোহিত। একটাই ছোট ঘর থাকায় সেখানেই সবাইকে শুতে হতো। দাদু শুতেন খাটে আর বাকিরা মেঝেতে জায়গা ভাগাভাগি করে শুয়ে পড়তেন। তাদের সঙ্গে থাকতেন তার কাকা এবং কাকিমা। সাফল্যের শিখরে উঠলেও এখনও নিজের অতীতটাকে ভুলে যাননি রোহিত শর্মা। সেই কারণেই যখনই ছেলেবেলার প্রসঙ্গ ওঠে তখনই তিনি নিজের সেই সব দিনের গল্প বলেন।

বর্তমানে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের পিতা তিনি। তাই এখন তিনি ভালো করেই বোঝেন, আর্থিক অবস্থা কতটা খারাপ ছিল বলে তার বাবা-মা তাকে দাদুর বাড়িতে রেখে এসেছিলেন। সেখানে দাদু ছিলেন পরিবারের কর্তা। তাই দাদুর কথা শুনে সব সময় চলতে হতো। ছোটবেলার এক অদ্ভুত মজার অভ্যাসের কথাও বলেছেন রোহিত শর্মা। তিনি বলেছেন, "ছোটবেলায় কোন একটা জায়গাতে পা না ঠেকালে তার কিছুতেই ঘুম আসতো না। তাই আমি দেওয়ালের দিকে মুখ করে শুতাম যাতে দেওয়ালে পা দিয়ে ঘুমোতে পারি"।

বিশ্বকাপের ভারী ভারী আলোচনার মাঝেই এ যেনো এক অন্য রোহিত। এই রোহিত ট্যাকটিকস সাজাতে ব্যস্ত নন। এই রোহিত মাঠে দলকে নেতৃত্ব দিতে ব্যস্ত নন। এই রোহিত এখনো যেনো সেই দিনগুলোর স্মৃতি বুকে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যেনো টাইম ট্রাভেল করে একেবারে নিজের ছোটবেলায় চলে গেলেন ভারতের এই দাপুটে অধিনায়ক। সেই দিনগুলোকে আবারো মনে করার চেষ্টা করলেন। সেই আনন্দমুখর দিনগুলোর স্মৃতি ভাগ করে নিলেন ভক্তদের সঙ্গে।

২০২৩-ই হয়তো হবে রোহিতের শেষ বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপেই হয়তো শেষ হবে এক যুগের। বিরাট-রোহিতের এই যুগলবন্দি বিশ্বকাপের মঞ্চে এই শেষবারের মত দেখবে বিশ্ব। এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিলেও, এই প্রথম ৫০ ওভারের ওডিআই বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোহিত। ফলে স্বভাবতই রোহিতের মধ্যে একটা আলাদা উন্মাদনা কাজ করছে। ২০১১ বিশ্বকাপ এমনিতেই হাতছাড়া হয়েছে রোহিতের। সুতরাং, ঘরের মাঠে এটাই তার প্রথম এবং সম্ভবত শেষ ওয়ান-ডে বিশ্বকাপ। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই ওডিআই বিশ্বকাপে জয়ের স্বাদ পেতে মরিয়া হিটম্যান।

সম্পর্কিত খবর