ইটস টাইম ফর আফ্রিকা?

ইটস টাইম ফর আফ্রিকা?

 ‘এবার না হলে আর কবে?’ কথাটা বোধ হয় প্রতি বিশ্বকাপের আগেই শোনা যায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে। প্রোটিয়ারা প্রতিবারই ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে আসে দোর্দণ্ড প্রতাপে, কখনো শীর্ষ দল হয়ে, কখনোবা বা শক্তিশালী তিনটি বিভাগ নিয়ে। কিন্তু হয় না কখনোই। কখনো ভুতুড়ে আইন, কখনো স্রেফ দুর্ভাগ্য, কখনোবা নিজেদের দোষে কাটা পড়ে আফ্রিকান দলটির বিশ্বকাপ ভাগ্য। 

সবকিছু বাদ দিন। ২০১৫ সালের দলটার কথাই ভাবুন। ওই দলটা কী করে বিশ্বজয় না করে ফেরে দেশে? এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলা, ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল, ইমরান তাহির… কে ছিলেন না ওই দলে! তবু সেমিফাইনালেই শেষ হয় তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা।

এর আগে ১৯৯২ বিশ্বকাপে নানা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপে এসে প্রথম আসরেই বাজিমাত করতে বসেছিল দলটা। সেবার সেমিফাইনালে দলটার বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি, আর আয়োজকদের ভুতুড়ে নিয়মও। ১৩ বলে ২২ রান প্রয়োজন দক্ষিণ আফ্রিকার, তখন নামল বৃষ্টি। ১০ মিনিট পর খেলোয়াড়রা মাঠে এলেন বটে, কিন্তু বৃষ্টি আইনে কাটা গেল স্রেফ মোটে এক রান। দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্যটা তখন দাঁড়াল মোটে ১ বলে ২১ রানের। সে ম্যাচ আর কী করে জেতা যায়!

এরপর ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ গল্পটা বদলায়নি। গেল আসরে তো নয়ই! তবে এবারের দলটা ছন্দে ফিরে এসেছে ঠিক যখন দরকার তখনই। বিশ্বকাপের ঠিক আগে রানপ্রসবা এক সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে ৩-২ ব্যবধানে। বিশ্বকাপেও শুরুটা করেছে দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচে তুলেছে ৪২৮ রান, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ১০২ রানের বিশাল ব্যবধানে।

দলটার শক্তিটা ব্যাটিংয়ে। বিশ্বকাপের ঠিক আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে তুলছে ৩০০’র বেশি রান, এক ম্যাচে করেছে ৪০০। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের কথা তো জেনেই গেছেন! নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে আসা কুইন্টন ডি কক, রাসি ফন ডার ডাসেন, এইডেন মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেন, ডেভিড মিলাররা আছেন দারুণ ছন্দে, রান তুলছেন তিন অঙ্কের স্ট্রাইক রেটে। তাদের এক সুতোয় গাঁথছেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। সব মিলিয়ে দলের ব্যাটিংটা যথেষ্ট ভীতিজাগানিয়া।

বোলিংটা তার ঠিক বিপরীত না হলেও ব্যাটিংয়ের কাছাকাছিতেও নেই। বিশেষ করে চোট নিয়ে আনরিখ নরকিয়ার ছিটকে যাওয়ায় মাঝের ওভারে দলটির উইকেট তুলে নেওয়ার মতো বোলারের তালিকায় ঘাটতি তৈরি করেছে বড়সড়।

ব্যাটিংয়েও তো ফুটো আছে একটা! মার্কো ইয়ানসেন আসেন দলটির ব্যাটিং লাইন আপের সাত নম্বরে। এরপর রাবাদা, কেশভ মহারাজরা। তারা আবার স্লগ ওভারে ব্যাট করার পরীক্ষায় পড়েননি শেষ কিছু দিনে। তবে একটা পাল্টা যুক্তিও দেওয়া যায়, তারা যে পরীক্ষায় পড়েননি খুব একটা, তার কৃতিত্বটা তো দলের টপ আর মিডল অর্ডারেরই। সেই ডি কক, মার্করাম, ক্লাসেনরাই বিশ্বকাপেও তাদের সে পরীক্ষায় ফেলতে দেবেন না, তার আশাটাই করবে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এমন দল অবশ্য কবে থাকে না দলের! এবার আশ্বাস মিলছে ভাগ্যের পাশে থাকারও। দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্য তখন ঝুলছিল সুতোয়। একটু এদিক ওদিক হলে এখানে দক্ষিণ আফ্রিকার জায়গায় আয়ারল্যান্ডের প্রিভিউও লিখতে হতো এখন। আয়ারল্যান্ড না হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা নিশ্চিত হলো কবে জানেন? ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ আর আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচে, সেদিন বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল খেলাটা; আয়ারল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভেসে যায় জলে, ভারতের টিকিট কেটে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। যে বৃষ্টি ধোঁকাই দিয়ে এসেছে এতদিন, সেই প্রকৃতিও এখন পাশে থাকছে। এবার নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করলেই তো কেল্লাফতে!

সম্পর্কিত খবর