‘৯৬ ফেরানোর স্বপ্নে লঙ্কার বড় বাঁধা বোলিংয়ে
সেবারের বিশ্বকাপটা যেভাবে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা, তা যে কোনো আন্ডারডগ তো বটেই, ‘ডার্ক হর্স’দেরও সাহস যোগায়, যদি হিসেবের বাইরে থেকে এসে ১৯৯৬ সালের মতো ‘লঙ্কা কাণ্ড’ বাধিয়ে ফেলা যায় এবারও! সেটা এবার শ্রীলঙ্কাকেও সাহস দিচ্ছে তেমনই। টুর্নামেন্টের আগে অধিনায়ক দাসুন শানাকা থেকে শুরু করে মাহিশ থিকশানা সবার কথাতেই তা পরিষ্কার। সবার একটাই কথা, ‘১৯৯৬ সালের সে কীর্তি আবারও গড়ে দেখাতে চাই’।
শ্রীলঙ্কার এই বছর দেড়েক আগেও যে ফর্ম ছিল, তাতেও তেমন কিছু বলার জো ছিল না একটুও। এতটাই যে, সহযোগি দলগুলোর সঙ্গে খেলতে হয়েছিল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে। সেখান থেকে লঙ্কানরা অবশ্য দেখিয়েছে কী করে ফিরে আসতে হয়, সবকটা ম্যাচ জিতে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপে। সবশেষ এশিয়া কাপে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানকে হারিয়ে খেলেছে ফাইনালেও। সেখানে অবশ্য ভারতের বিপক্ষে ৫০ রানে অলআউটের কালিমাও লেগেছে দলটির ইতিহাসে।
তবে শেষ কিছু দিনে যে ফর্মে ছিল লঙ্কানরা, তার জোরেই তো শানাকারা বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন দেশবাসীকে। যদি সে কথাগুলোকে কাজে প্রমাণ করে দেখাতে পেরেছে সামান্যই, অন্তত এখন পর্যন্ত। যখন আপনি লেখাটা পড়ছেন, তখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা দুই ম্যাচ মিলিয়ে ৮০০’র কাছাকাছি রান হজম করে ফেলেছে। একটা দলকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিতে তো এটুকুই যথেষ্ট!
স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের একটা কথাকে ফুটবলে রীতিমতো বেদবাক্য জ্ঞান করা হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘আক্রমণ আপনাকে ম্যাচ জেতায়, আর রক্ষণ জেতায় শিরোপা।’ আক্রমণের জায়গায় ব্যাটিং আর রক্ষণের জায়গায় যদি বোলিং বসিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কথাটার ক্রিকেট সংস্করণও দাঁড়িয়ে যায় বেশ করে। অন্তত শ্রীলঙ্কার খেলায় তা একেবারেই পরিষ্কার। দলের ব্যাটিংটা দেখুন একবার, দুই ম্যাচেই তিনশো পেরিয়েছে, এক ম্যাচে সাড়ে তিনশো ছুঁইছুঁই রান। তবু দলটার পয়েন্টের খাতা যেন শূন্যতার শোকসভা। কারণ, ওই যে বোলিং!
আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, লঙ্কানদের দুর্দশাটা ধরা পড়ে দ্বিতীয় পাওয়ারপ্লেতে। দক্ষিণ আফ্রিকা আর পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ১১ থেকে ৪০ তম ওভারে উইকেট তুলে নিতে পেরেছে মোটে ২টি, স্ট্রাইক রেট ১৮০। দুটো ম্যাচেই মূলত লঙ্কানরা হেরেছে এখানেই। এ তথ্যকে একপাশে রাখলে পাওয়ারপ্লের বোলিংটাকেও খুব যুতসই বলার উপায় নেই। দুই ম্যাচের ২০ ওভারে তুলতে পেরেছে ৩ উইকেট, স্ট্রাইক রেট ৪০। সব মিলিয়ে এটাই এখন পর্যন্ত লঙ্কানদের ‘অ্যাকিলিস হিল’।
দলের বাস্তবতায় বিশ্বকাপ জেতাটা অতি-আশাই। কিন্তু ডার্ক হর্স হওয়ার সব ধরনের রসদই ছিল তাদের। কিন্তু বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংটাও সঙ্গ দিচ্ছে না দলের। পাকিস্তান ম্যাচেও তো দুটো লোপ্পা ক্যাচ ছেড়েছে শ্রীলঙ্কা। এই দল আর কী করে চ্যালেঞ্জ জানায়!
জানায়, কারণ তাদের ব্যাটিং। বিশ্বকাপে এসে কুশল মেন্ডিসের ব্যাটিং যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘৯৬ এর রমেশ কালুভিথারানাকে, কিংবা স্বর্ণ সময়ের তিলকরত্নে দিলশানকে। তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। দ্বিতীয় ম্যাচেও দুজনেই করেছেন সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে এসে দলের দুই ব্যাটারের এমন খুনে ফর্ম দলকে স্বস্তিই এনে দিতে পারত, অন্যান্য দলকে দিতে পারত সমূহ বিপদের বার্তা।
কিন্তু ওই যে বোলিং (আর ফিল্ডিং)। ব্যাটার অধ্যুষিত বিশ্বকাপে (এখন পর্যন্ত) ভালো কিছু চাইলে বোলিংটা গড়পড়তা হওয়া চলবে না একটুও। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বোলিং গড়পড়তার মানদণ্ডও পেরোতে পারছে না।
পরিস্থিতিটা বলছে, ৯৬ ফেরানো শ্রীলঙ্কার জন্য এভারেস্ট জয়ের মতো কঠিন; তবে ডার্ক হর্স হতেই পারে দলটা। সেজন্যে একটা পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে দলকে। বোলিংটায় উন্নতি করতে হবে বেশ, আর সেটাও রাতারাতিই।