আর্জেন্টিনার ম্যাচে ড্রাম হাতে আর দেখা যাবে না তুলাকে
গায়ে বল নেই। নিভে আসছে প্রাণ প্রদীপ। চলতে হোইল চেয়ার লাগে। নেই তেমন অর্থ কুড়ি। স্প্যানিশ ছাড়া জানেন না আর কোনো ভাষা। নেই প্রযুক্তি জ্ঞান- যা দিয়ে যোগাযোগ করা যায়। এতো এতো নেই নেই এর ভিড়েও আছে- দৃঢ় মনোবল। আছে সকল প্রতিকূলতা জয় করে মাঠে বসে নিজ দলকে সমর্থন দেওয়ার প্রাণান্তর চেষ্টা। আছে গলায় জোড়। যা দিয়ে আরও অনন্ত একবার কাঁপিয়ে দেওয়া যাবে গোটা বিশ্ব। ও ড্রাম বাজানোটাও তো ভুলে যাননি। তাই দিয়েই না হয় আরও একবার জানিয়ে দেওয়া যাক, আর্জেন্টিনা বিশ্ব মঞ্চে নামলে কেউ না থাকলেও গ্যালারিতে আছেন ‘তুলা’।
না তিনিও আর নেই। আর্জেন্টাইন ফুটবলের মায়া কাটিয়ে ৮৩ বছর বয়সে গত হয়েছেন সবশেষ ১২টি বিশ্বকাপে সমর্থন দিয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী হওয়া ‘তুলা’। গায়ে আর্জেন্টিনার জার্সি, মাথায় টুপি ও ড্রাম হাতে মেসিদের জন্য গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে আর দেখা যাবে না তাকে। গ্যালারিতে জটলা বাধবে না এই বৃদ্ধকে নিয়ে। আসবে না ছবি তোলার আবদার।
অথচ কখনো ফুটবলে লাথি না দিয়েও ফুটবলের মানুষ বনে গিয়েছিলেন তুলা। নিজের নামটা কার্লোস পাসকুয়াল থেকে কখন যে ‘তুলা’ হয়ে গেল- বুঝতেই পারলেন না এই আর্জেন্টাইন। শেষবার কাতার বিশ্বকাপে মেসিরা যখন বিশ্বকাপ জিতলেন। তখনও মাঠে হাজির তিনি। জীবনের শেষ বেলায় এসে নিজ দেশকে আরও একবার বিশ্বকাপ জিততে দেখেছেন। যা তাকে আর সবার থেকে একটু বেশিই আবেগী করেছিল। এই বয়সেও আর্জেন্টাইনদের জন্য তার এমন নিবেদন দেখে মুগ্ধ হয়েছিল বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুটবল প্রেমীরা।
তাই ফিফার দ্য বেস্ট ফ্যান পুরস্কারে তুলাকে বেছে নিয়ে ভুল করেনি কেউ। সাড়ে ছয় লাখের বেশি ভোট পেয়ে ‘বেস্ট ফ্যান অ্যাওয়ার্ড’ জিতেন তিনি। সেদিনও পুরস্কার নিতে ড্রাম হাতে এসেছিলেন তিনি। বাজিয়েছেন শেষবারের মতো ড্রাম। যা হয়তো দীর্ঘদিন মনে রাখবে আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা।
তবে মেসির জন্ম শহর রোজারিতে ভ্রমণে গেলে আর হয়তো কেউ ঠু মারবে না একই শহরে জন্ম নেওয়া তোলার বাসায়। আসবে না ড্রাম বাজানো কিংবা সেলফি তোলার আবদার। তবে আর্জেন্টিনা যখনই বিশ্বমঞ্চে মাঠে নামবেন ঠিকই তুলাকে খুঁজে ফিরবে ক্যামেরার ল্যাঞ্চ। ড্রামের শব্দ মিস করবে সমর্থকরা। সেই শব্দ পৌঁছাবে না মাঠে খেলতে থাকা মেসি-ডি মারিয়াদের কানেও। কদিন পরই কোপা আমেরিকার আসর। আচ্ছা, সে আসরে মেসিরাও কি মিস করবেন তুলাকে?