বাদ পড়েও অবাক হইনি, আবাহনী রক্তে মিশে আছে

বাদ পড়েও অবাক হইনি, আবাহনী রক্তে মিশে আছে

ছবির ক্যাপশনে লেখাটি চমকে ওঠার মতো, বিশেষ করে জন্ম লগ্ন থেকে যে সমস্ত ক্রীড়ামোদী সমর্থক আবাহনীর সুখে দুখে সব সময় দলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে গেছেন তাদের কাছে। ১৯৭২ সনে যখন শহীদ কামাল ভাইয়ের হাত ধরে আবাহনী সৃষ্টি হয়েছিল সে সময় সাদেক ভাই ছিলেন দল গঠনের অন্যতম একজন ফুটবল ও হকি খেলোয়াড়। আর আমি ১৯৭৪ সনের শেষের দিকে কামাল ভাইয়ের হাত ধরে আবাহনীতে এসেছিলাম।

১৯৭৫ সনের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, আমার স্বপ্ন পুরুষ শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল সহ পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল তখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে মার্দেকা কাপ খেলতে আমি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলাম খেলা শেষ করে যখন ঢাকায় ফিরি। ঢাকা পুরানো এয়ারপোর্টে প্লেন থেকে নামার পর আমরা যে ৬ জন আবাহনীর খেলোয়াড় ছিলাম তখন আমাদেরকে নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল। ঢাকায় এসে শুনতে পেলাম আমাদের যে ক্লাব টেন্ট ছিল ধানমন্ডি ২৪ নম্বরে সেই ক্লাব টেন্টটি লুট করে নিয়ে গেছে লুটেরারা এবং সে বিল্ডিংটি তারা দখল করে নিয়েছিল। আমরা যারা ক্লাবে থাকতাম তৎকালীন সময়ে যার যার বাসায় চলে যাই। আর অন্যরা বিভিন্ন ক্লাব যেমন দিলখুশা ভিক্টোরিয়া এবং মোহামেডানে অবস্থান নেয়।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন লিগের বাকি খেলাগুলি শেষ করার জন্য প্রত্যেকটি ক্লাবকে প্রস্তুতি নিতে বলে তখন আমাদের আবাহনী একেবারে ছন্নছাড়া দলের মত কারণ আমাদের আমাদের দলের যে সমস্ত কর্মকর্তা ছিল তারা তখন ভয়ে পলাতক। ঠিক সেই সময়ে সাদেক ভাই ধানমন্ডিতে তার নিজের বাসায় আমাদের সব খেলোয়াড়দের কে ঠেকে পাঠালেন।  আমরা প্রত্যেকটি খেলোয়াড় সেই বৈঠকে হাজির হয়েছিলাম এবং কয়েকজন কর্মকর্তা এসেছিলেন। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত বৈঠকটি চলে। অনেকেই বলেছিল আমরা খেলব কীভাবে প্র্যাকটিস করবো কোথায় প্র্যাকটিসের পরে খাওয়া-দাওয়া কোথায় ড্রেস চেঞ্জ হবে কোথায় অনেক যুক্তি তর্কের পর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা খেলব, কারণ আমরা যদি না খেলি তাহলে আমাদেরকে দ্বিতীয় বিভাগে নামিয়ে দেওয়া হবে। যদি তাই হয় তাহলে আমরা শহীদ শেখ কামালের রেখে যাওয়া আবাহনীকে টিকিয়ে রাখতে পারবো না।

সেদিনের সাদেক ভাইয়ের সে উদ্যোগ আমি মনে করি আবাহনী আবার নতুনভাবে জন্ম নিয়েছিল। সাদেক ভাই খেলা ছাড়ার পর নগদ ১০ লক্ষ টাকা জমা দিয়ে ক্লাবের ডাইরেক্টরশিপ নিয়েছিল। আর আমি ৭৫ এর সেই ঘটনার পর শপথ নিয়েছিলাম যতদিন ফুটবল খেলব ততদিন কামাল ভাইয়ের রেখে যাওয়া আবাহনীতে খেলব। তাইতো ১৯৮৪ সালের লিগ শেষ করে ১৯৮৫ সালে দলবদলের সময় মোহামেডান থেকে এক বিরাট অফার আমার কাছে আসে যা কি-না অত্যন্ত লোভনীয়। এক বছরের জন্য নগদ ১০ লক্ষ টাকা এবং আড়াই লক্ষ টাকা দামের একটি গাড়ি। আমি মোহামেডানের এই অফার ফিরিয়ে দিয়ে পরদিন মতিঝিলে বাংলার বাণী অফিসে গিয়ে আবাহনীর তৎকালীন অফিসিয়াল মনজুর কাদের এবং শেখ মারুফ এর সঙ্গে দেখা করে মাত্র আড়াই লক্ষ টাকা কন্টাক্ট এ আবাহনী ক্লাবে খেলার সম্মতি দেই। আমার মা বলতেন খবরদার শেখ কামালের রেখে যাওয়া আবাহনী ছাড়া আর অন্য কোন দলে খেলবি না। মায়ের কথাই আমার শিরোধার্য।

এভাবেই ১৯৮৮ সালে খেলা থেকে বিদায় নেই পরবর্তীতে কখনো ক্লাবের কোচ কখনো ম্যানেজার কখনো চিফ কো-অর্ডিনেটর কখনো ফুটবল সম্পাদক শেষ অবধি ক্লাবের ডাইরেক্টর হয়েছিলাম ১০ লক্ষ টাকা জমা বিনিময়ে। আমি মনে করি সাদেক ভাই ও আমাকে ডাইরেক্টরশিপ থেকে বাদ দিয়েছে এতে আমরা দুজনই অবাক হইনি কারণ আমি বিশ্বাস করি আবাহনী আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আবহনীর জয়গান গেয়েই যাব।

সম্পর্কিত খবর