অভিমানে আর্চারিকে বিদায় বললেন রোমান সানা
জড় পদার্থ তীর ধনুকটাও যেন রোমান সানার হাতে উঠলে প্রাণ পেত। রোমান সানাও যেভাবে খুশি নিশানা তাক করতেন। নিখুঁত শটে বেদ করতেন নিশানা। আনন্দে ভাসতেন, যা বিশ্ব মঞ্চে গর্বিত করত বাংলাদেশকেও। তবে এখন থেকে ভবিষ্যৎতে বাংলাদেশের হয়ে তীর ধনুক হাতে আর দেখা যাবে না তাকে। বিশ্ব মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করবেন না লাল-সবুজের দেশকে। সেই সিদ্ধান্ত এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন দেশসেরা এই আর্চার।
বয়সটা সবে ৩০। চাইলেও আরও বহুদিন তীর ধনুক হাতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারতেন রোমান সানা। তবে তার আগেই অভিমানের বরফ জমতে শুরু করে। যেই বরফের স্তূপ একটা সময় পরিণত হয় এভারেস্টে। যেই বোঝা বইতে পারছিলেন না এই তরুণ। বিপরীতে ভাবতে হচ্ছিল নিজের ভবিষ্যতের কথাও। তাই অনেকটা না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই বাংলাদেশ আর্চারি দলকে একেবারে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন রোমান সানা। বিদায় বেলায় রেখে গেছেন কতশত প্রশ্নের না পাওয়া উত্তর।
অথচ, রোমান সানাকে দিয়েই বিশ্ব আর্চারিতে বাংলাদেশকে চিনেছে সবাই। ২০১৯ সালে রোমান সানার হাত ধরে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। তার হাত ধরেই অলিম্পিকে সরাসরি খেলার দ্বার উন্মুক্ত হয় বাংলাদেশের। এসেছে ট্রফিও। ২০১৯ এসএ গেমসে বাংলাদেশকে তিনটি স্বর্ণপদক এনে দেন রোমান।
তবে বাংলাদেশকে এতএত সাফল্য এনে দিলেও অতৃপ্ত ছিলেন রোমান। দেশকে সাফল্য এনে দিলেও নিজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেননি কখনোই। জাতীয় দল থেকে তার মাসে উপার্জন তিন হাজার টাকা ও ঘর ভাড়া ২ হাজার টাকা। আর আট ঘণ্টা অনুশীলনের জন্য দৈনিক ১০০ টাকা। যা দিয়ে কোনোভাবেই নিজেকে চালিয়ে নিতে পারছিলেন না সানা।
এদিকে সম্প্রতিক সময়ে আর্চারির জাতীয় দল থেকেও বাদ পড়েছিলেন রোমান। গত ফেব্রুয়ারি ইরাকের বাগদাদে অনুষ্ঠিত এশিয়ান আর্চারি প্রতিযোগিতায় জায়গা হয়নি তার। দেশেও আগের মতো মন দিতে পারছিলেন না খেলায়। ভুল হচ্ছিল নিশানা। অন্যদিকে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে হচ্ছিল তাকে। তাই সময় থাকতেই অভিমানে আর্চারি থেকে পেশা বদল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই দেশসেরা আর্চার।