শেষ মুহূর্তের ‘থ্রিলারে’ লিভারপুলকে হারিয়ে সেমিতে ইউনাইটেড
ম্যাচের মুল ৯০ মিনিটে ২-২ সমতা। অতিরিক্ত সময়ে ১২০ মিনিট পর্যন্ত স্কোরলাইন ৩-৩ সমতায়। রোমাঞ্চ, নাটকীয়তায় ভরা এফএ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে গত রাতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লিভারপুলের মধ্যকার ম্যাচটি যাচ্ছিল টাইব্রেকারের দিকেই। তবে সেখানে অনন্য কিছুর সাক্ষী থাকলো ওল্ড ট্রাফোর্ড।
ম্যাচের ঘড়িতে ১২১ মিনিট। যেকোনো সময় বাজবে রেফারির বাঁশি। তবে হঠাতই অচেনা এক ফরোয়ার্ডের শটে উল্লাসে মেতে উঠল পুরো ওল্ড ট্রাফোর্ড। গোল উদযাপনে নিজের জার্সি খুলে দর্শকদের উদ্দেশ্যে যেন এটাই জানান দিলেন, ‘মনে রেখ আমি আমাদ দিয়েলো’। এই আইভরিয়ানের শেষ মুহূর্তের গোলেই ৪-৩ ব্যবধানে অল রেডদের হারিয়ে এফএ কাপের সেমি-ফাইনালে পৌঁছায় রেড ডেভিলরা।
ইউনাইটেডের ঘরের মাঠে এদিন শুরু থেকেই বেশ আক্রমণাত্মক তারা। যার ফল ম্যাচের দশম মিনিটেই। মার্কাস রাশফোর্ডের পাস ধরে ডি-বক্সে দারুণ এক শট নেন আলেহান্দ্রো গারনাচো। তবে সেটি দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন লিভারপুল গোলরক্ষক কেলেহার। তবে তাতেও হয়নি শেষ রক্ষা। ফিরতি বল সরাসরি স্কট ম্যাকটিমনের পায়ে এবং সেখানে কোনো ভুল করেননি এই স্কটিশ ফরোয়ার্ড।
ম্যাচের ৪৪তম মিনিটে এসে সমতা টানে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। সেখানে দারউইন নুনেসের বলে দারুণ এক শট নেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার আলেক্সিস মাক আলিস্টার, যা ইউনাইটেড গোলরক্ষকসহ ডিফেন্ডারদের তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।
মিনিট তিনের ব্যবধানে ম্যাচের প্রথমার্ধেই এবার এগিয়ে যায় লিভারপুল। সেটি যেন ইউনাইটেডের প্রথম গোলের কার্বন-কপি। ৪৫+২ মিনিটে নুনেসের দেওয়া বুলেট গতির শট ফিরিয়ে দেন ওনানা, তবে সেটি ফিরে যায় মোহাম্মদ সালাহর পায়ে এবং সেখান থেকে সহজেই জালে।
ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথমার্ধ শেষে পিছিয়ে যেয়ে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে এরিক টেন হাগের দল। আক্রমণের ধারও কমে রেড ডেভিলদের। ম্যাচ শেষের দিকের এগোচ্ছিল সম্ভাব্য লিভারপুলের জয় রেখেই। তবে সেখানে নাটকীয়তার প্রথম পর্ব শুরু। বদলি হিসেবে নেমেই দলকে হার ছেড়ে বাঁচান ইউনাইটেডের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড আন্তোনি। এই গোলেও অবদান আছে গারনাচোর। তার পাস থেকে ডি-বক্সে জটলা পাকানো অবস্থায় বল নিয়ন্ত্রণে রেখে একাধিক ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে সমতাসূচক গোলটি করেন আন্তোনি। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।
সেখানে শুরু নাটকের দ্বিতীয় পর্ব। ১০৫তম মিনিটে হার্ভি এলিয়টের গোলে ৩-২ ব্যবধানে ম্যাচে আরও একবার এগিয়ে যায় লিভারপুল। তবে মিনিট সাতেক পর আবাও সমতা টানে স্বাগতিকরা। সেখানে গোল করে যেন ম্যাচে আগে করা করা একাধিক ভুলের কিছুটা প্রায়শচিত্ত করলেন মার্কাস রাশফোর্ড।
সবশেষে ১২১তম মিনিটের গল্পের ট্রেইলার ছিল প্রতিবেদনটির শুরুতেই। এবার মুভির পালা। ১২১তম মিনিটে কর্নার কিক পায় লিভারপুল। সেখান বল দখলে এনে একক দৌড়ে পাল্টা-আক্রমণে গারনাচো। প্রায় ডি- বক্সের কাছাকছি এসে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা যখন ভাবছিলেন গোলের চেষ্টা করবেন তিনি, তখন বুদ্ধিমত্তার দারুণ পরিচয়ে বল বাঁ দিকে এগোতে থাকা দিয়েলোর দিকে বাড়ান এই আর্জেন্টাইন তরুণ। সেখানে দিয়েলোর বাঁ গোলপোস্ট বরাবর বাঁ পায়ের লো শটে রুখতে পারেনি কেলেহার। এবং তাতেই জয় ইউনাইটেডের ঝুলিতে।
এদিকে রাতের আরেক জমজমাট কোয়ার্টারের ম্যাচে জয় পেয়েছে চেলসি। ম্যাচের যোগ করা সময়ে জোড়া গোল করে লেস্টার সিটিকে ৪-২ গোলে থামিয়ে সেমিতে পৌঁছায় মরিসিও পচেত্তিনোর দল।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেমিতে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড পেয়েছে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ কভেন্ট্রি সিটিকে। অন্যদিকে চেলসি লড়বে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে।