৩-২ গোলে এগিয়ে থেকেও হারল মোহামেডান
প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগের অঘোষিত ফাইনাল। মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডান। ম্যাচের আগেই যার উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছিল। মোহামেডান তো একরকম ঘোষণাই দিয়ে বসেছিল, তাদের সেরা তারকা জিমির নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে না নিলে মাঠে নামবে না তারা। যদিও শেষ পর্যন্ত রেফারি সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে জিমিকে ছাড়াই মাঠে নামতে হয়েছে তাদের। আর সেই ম্যাচে ৩-২ গোলে এগিয়ে থাকার পরও শেষ পর্যন্ত আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ায় ৫-০ গোলে হারতে হয়েছে মোহামেডানকে। আর তাতে শিরোপার লড়াইয়ে এখন নামতে হবে আবাহনী ও মেরিনার্সকে।
মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে এদিন অঘোষিত ফাইনালে নামার আগে, একরকম হুঙ্কার দিয়ে রেখেছিলেন ক্লাবটির কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন। স্পোর্টস বাংলাকে ম্যাচের আগে তিনি জানান, অনিয়ম চোখে পড়লে ম্যাচের মাঝপথে উঠে যাবে তার দল। আপোষ করবে না কোনো ধরণের অনিয়ম ও অন্যায়ের সাথে। ম্যাচেও দেখা গেছে সেই চিত্র। প্রথম কোয়ার্টারে পেনাল্টি কর্নারে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধেও পেনাল্টি কর্নার পায় আবাহনী। যা নিয়েই আম্পায়ারের সঙ্গে বেধে যায় মোহামেডানের।
পরে অবশ্য মোহামেডানের প্লেয়াররা মাঠ ছেড়ে উঠে গেলে কিছু সময় খেলা বন্ধ থাকার পর সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন আম্পায়ার। পুরো ম্যাচ জুরেই চলছে মোহামেডান খেলোয়াড়দের মাঠ ছেড়ে উঠে যাওয়ার এই নাটক। কম যায়নি আবাহনীও। মাঠে মোহামেডানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়াতে দেখা গেছে তাদের। এরপরও প্রথম দুই কোয়ার্টার শেষে পিছিয়েই ছিল মোহামেডান। হজম করে ফেলেছিল ২ গোল। আর তাতে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন ম্যাচটা বুঝি ওখানেই শেষ।
দুই গোলের বোঝা নিয়ে দ্বিতীয় কোয়ার্টার শেষ করে মোহামেডান। বলতে গেলে সবাই এক রকম মোহামেডানের শিরোপা হাতছাড়া হওয়া দেখে ফেলেছিল। তবে ঘুরে দাঁড়াতে তৃতীয় কোয়ার্টারকে বেছে নেয় মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। এসেই সরাসরি গোল করেন। এরপর পেনাল্টি কর্নার থেকে আরও দুটি গোল পায় তারা। প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ম্যাচে এগিয়ে যায় মোহামেডান। এরপর মাঠেই শুরু হয় আবাহনী ও মোহামেডানের হাতাহাতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোহামেডানের তানভীর সিয়াম ও দ্বীন ইসলামকে লাল কার্ড দেখান আম্পায়ার। লাল কার্ড দেখতে হয়েছে আবাহনীর নাইমউদ্দিনকেও। এর বাইরে একই ঘটনায় হলুদ কার্ড দেখেতে আবাহনীর আফনান ও মোহমেডানের মিজুনের।
আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে ফের মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যায় মোহামেডান। তাদের বুঝিয়েও মাঠে আনতে পারেনি আম্পায়ার। মোহামেডানের দাবি ছিল লাল কার্ড প্রত্যাহার করা। তবে হয়নি সেটি। আর সে কারণে মাঠেও নামেনি তারা। ফলে বাধ্য হয়ে তৃতীয় কোয়ার্টারেই ম্যাচের ১৭ মিনিট বাকি থাকতেই শেষ বাঁশি বাজান আম্পায়ার। মাঠে না নামায় আবাহনীকে ৫-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করে আম্পায়ার। ফলে ৩-২ গোলে পিছিয়ে থাকলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে জয় পায় আবাহনী। আর এ জয়ে শিরোপার পথে এগিয়ে যায় আবাহনী।
এদিন মাঠে নামার আগে মোহামেডানের হিসেবটা সহজই ছিল। আবাহনীকে হারাতে পারলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত তারা। আর বাকি দুই দল আবাহনী ও মেরির্নাসের সমীকরণটা ছিল এরকম; শেষ ম্যাচে জিততেই হবে তাদের। আর সেটি হলেও তাদের পয়েন্ট দাঁড়াতে সমান ৩৭।
এদিন দিনের প্রথম ম্যাচে সেই কাজটা সেরে রেখেছিল মেরিনার্স। পুলিশের বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয় তুলেছিল তারা। অপেক্ষায় ছিল আবাহনীর জয়ের। শেষ পর্যন্ত হয়েছে সেটিই। পিছিয়ে থাকলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে জয় পেয়েছে আবাহনী। এখন দু’দলেরই পয়েন্ট সমান ৩৭। তাই শিরোপা নির্ধাণী ম্যাচ খেলতেই হচ্ছে তাদের।